রামগড়ের পতিত ঊষর পাহাড় এখন আবাদি জমি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা। সেখানকার শতশত বিঘা ঊষর জমি ও পাহাড় এখন কৃষি কাজের আওতায় এসেছে। মহামারীর এই দুর্যোগের সময়ও কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এসব আবাদি জমি। আর এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন উপজেলার বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম বদরুদ্দোজা।

এখানকার দিনমজুর জ্যোতি রানী ত্রিপুরা জানান, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে রামগড়ে বেশ বাগান তৈরি হয়েছে। চারদিকে এরকম বাগান হওয়ার কারনে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আরো ভালো বাগানের আশায় নিজেদের মালিকানাধীন পাহাড় ইজারা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, পার্বত্য অঞ্চলের বেশিরভাগ পাহাড়ের মতই রামগড়ের বেশিরভাগ পাহাড় অনাবাদি ও বুনো। যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরও পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাবে পাহাড়গুলোতে শুধু কচুমুখী চাষ হয়। যা পরিবেশের জন্যে ভালো নয় এবং একই সঙ্গে এই ফসল থেকে স্থানীয় বাঙালি, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী উভয়ের মুনাফাও নেই বললে চলে। খুব অল্প সংখ্যক পাহাড়ে কিছু ফলজ ও বনজ গাছের বাগান রয়েছে। যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এ বাগানগুলোতেও আশানুরূপ ফলন হয় না।

স্থানীয় ফলজ নার্সারি ব্যবসায়ী মো. জাহিদ বলেন, গত বছরের তুুলনায় এ বছর প্রায় ৪ গুন চারা বেশি বিক্রি হয়েছে। এখানকার ইউএনও স্যারের কারণে আমাদের ফলের চারা বিক্রি বেড়ে গেছে। প্রায় ২০ লাখ চারা বিক্রয় করেছেন তিনি।

রামগড়ে ইউএনও হিসেবে আ ন ম বদরুদ্দোজা গত ফেব্রুয়ারিতে যোগদানের পরপরই কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়িকে এই ঊষর পাহাড়ে বিনিয়োগে উবুদ্ধ করেন। এছাড়া রামগড়ের ঐতিহ্যবাহী রামগড় লেকটিকে সংস্কার ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে পুরনো রূপে ফিরিয়ে এনেছেন। পুরো উপজেলা ক্যাম্পাসে স্থাপন করেছেন সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়া রামগড় সোনাইপুল টোল প্লাজার ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন। 

এ বিষয়ে ইউএনও বদরুদ্দোজা বণিক বার্তাকে বলেন, এক ইঞ্চি ভূমিও অনাবাদি রাখা যাবে না- প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পাহাড়ি অনাবাদি ভূমিগুলোকে আবাদি করার উদ্যোগ নিই। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় একালাকার কৃষকেদের বাগান করতে অনুপ্রাণিত করি। এছাড়া সরকারি ত্রাণ বিতরণে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় গিয়েও এলাকাবাসীকে বাগান করতে অনুপ্রাণিত করি। যার ফলে বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু উদ্যোক্তা স্থানীয় মানুষ হতে জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলছেন ফল ও মসলার বাগান।

তেমন এক উদ্যোক্তা কুমিল্লার ব্যবসায়ি হাজি ফারুক হোসেইন বলেন, তারা কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে  ১৫ একর জমি ৩০ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। সেখানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ফল ও মসলার প্রায় আট হাজার চারা রোপণ করেন। এই বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করে। তারা জঙ্গল পরিষ্কার করে বাগান করায় আশেপাশের অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বাগান করা শুরু করেছেন। অনেক অনাবাদি পাহাড়ই পরিণত হচ্ছে ফলজ বাগানে। কাজুবাদামের এক বিশাল সম্ভাবনা আছে রামগড়ের পাহাড়ে। সরকারি সাহায্য পেলে তারা একটা কাজুবাদাম প্রসেসিং প্লান্ট খুলবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মুসা মিয়া ও মো. শাহাজান বলেন, বছরের পর বছর এসব পাহাড় ও জমি থেকে তাদের কোনো আয় নেই। এখন জমি ইজারা থেকেও আয় হচ্ছে আবার এই পাহাড়ি বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ নিজেরা করায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন