কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে এক মুহূর্তে উত্তর পেতাম

মো. আরফান আলী

কাজেমী স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৯৬ সালে। তখন আমি তদানীন্তন কোরিয়ান হানিল ব্যংকের একজন সিনিয়র অফিসার। স্যার তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক। বিদেশী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, ব্যাংকিং বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রমের লাইসেন্স এবং ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের (ক্যাপিটাল) বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্য স্যারের কাছে প্রায়ই যেতে হতো। বিষয়ে তার জ্ঞানের গভীরতা আমাকে মুগ্ধ করত। কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে এক মুহূর্তের মধ্যে উত্তর পেয়ে যেতাম।

১৯৯৬ সালের একটি ঘটনা মনে পড়ে। একদিন দেখি স্যার ডেস্কটপে বসে কিছু একটা দেখছেন। জানতে চাওয়ায় বললেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ গাইডলাইন চেক করছেন। এত লোক চেক করার পরও নিজে না দেখে সস্তুষ্টি পাচ্ছিলেন না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ গাইডলাইন তৈরিই হয়েছিল তার তত্ত্বাবধানে।

আরেকবারের ঘটনা, আমি আমার দুই বাংলাদেশী সহকর্মী স্যারের কাছে জানতে গিয়েছিলাম আমাদের তত্কালীন যেসব বিদেশী কলিগ ছিল, তারা সরাসরি ডলার দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারবে কিনা? তিনি এক মুহূর্ত না ভেবেই উত্তর দিলেন বাংলাদেশে এমন কোন জিনিস আছে, যা বাংলাদেশী টাকায় কেনা যায় না, বিদেশী মুদ্রায় কিনতে হবে? যে দেশে সবকিছু টাকায় কেনাকাটা করা যায়, সেখানে বৈদেশিক আমদানি-রফতানির লেনদেন এবং কিছু বিশেষ প্রয়োজনেই শুধু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করা সমীচীন। সেই সঙ্গে আমাকে আরো বুঝিয়ে ছিলেন কীভাবে একটা অনুমোদিত ডিলার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে। আমার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জ্ঞান কাজেমী স্যারের কাছেই শেখা।

শেষ যেবার স্যারের সঙ্গে দেখা হয়, তার প্রায় ১৫ বছর পর আবার গেলাম। স্যার তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা, আর আমি ব্যাংক এশিয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করি। সময় নিয়ে দেখা করে জানতে চাইলাম আমাকে চিনতে পেরেছেন কিনা! স্যারের সাবলীল জবাব ছিল, আপনার সম্পর্কে সবই জানি। কী করছেন, কীভাবে দেশের ব্যাংকিং সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন, সব খবরই রাখি। আপনি খুব ভালো করছেন, এগিয়ে যান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব বিষয় মাথায় রেখেও তিনি আমার এই এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। এই ছিল একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসেবে আমার প্রতি স্যারের মূল্যায়ন। যার সঙ্গে কখনো সরাসরি কাজ না করে এই অর্জন করতে পেরেছি। মানুষের প্রতি এবং সাধারণ ব্যাংকিংয়ের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের যে চিন্তাধারা তার ছিল, সেটা মন্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায়।

এমন একজন মেধা প্রজ্ঞার অধিকারী ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে আমি নিজে খুবই মর্মাহত। ব্যাংকিং খাত তথা আমাদের দেশের এত বড় ক্ষতি আজ মেনে নিতে হচ্ছে, এই ভেবে যে তার মতো এমন ব্যাংকার আমাদের দেশে আরো অনেক প্রয়োজন। যারা স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাবেন।

 মো. আরফান আলী: ব্যাংক এশিয়া প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন