আমার চোখে আবেদ ভাই

সালেহউদ্দীন আহমেদ

সে অনেক বছর আগের কথা। এটা ছিল ১৯৭৮ সালের শেষদিক। আমি পিএইচডি করে দেশে ফিরে এলাম। প্রায় পাঁচ বছর দেশে ছিলাম না। চাকরি খুঁজছিলাম। তিনটা সাক্ষাত্কার দিয়েছিলাম। একটা ছিল সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে; দ্বিতীয়টা এডাবে, আর তৃতীয়টা ছিল ব্র্যাকে। পরিকল্পনা কমিশনে সাক্ষাত্কারে আমার চাকরি হয়ে যায়। এডাবের সাক্ষাত্কারে ফাদার টিম ছিলেন সভাপতি, সঙ্গে আতাউর রহমান এবং একজন নারী ছিলেন, যাকে আমি চিনতাম না; আমার চাকরি হলো না। চাকরিটা ছিল পরিচালক পদে। ফাদার টিম বললেন, সালেহউদ্দীন, আমরা আরেকটু বয়স্ক কাউকে চাচ্ছি, তুমি অন্য কোনো পদের জন্য আবেদন করো। যাহোক, এর কিছুদিন পর আমি একটা চিঠি পাই। ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘we understand that you are looking for a job, please meet our Executive Director, Mr. F H Abed ...’ আমি না চিনতাম মি. আবেদকে, না ব্র্যাককে। তবু ভাবলাম যাই। আমি তো তাদের জীবনবৃত্তান্তও পাঠাইনি! দেখি কী বলে! গেলাম। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আবেদ সাহেব আমাকে ডাকলেন। তাঁর অফিসে ঢুকে আমার খুব একটা মনঃপূত হলো না; তাকেও না, অফিসটাও না!

সাক্ষাত্কার শুরু হলো। একটু ভয়ে ভয়েই ছিলাম। আবেদ সাহেব আমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন, যেমন কী পাস করে এলেন? পিএইচডি কোন বিষয়ে করলেন? দেশ কোথায়? বাবা-মা কী করেন? এখন কী করতে চান? ইত্যাদি। উত্তর দিলাম। তারপর তিনি কথা বলতে শুরু করলেন। বললেন, বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে চান, দারিদ্র্য দূর করতে চান, একটা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে চান। আমাদের আপনার মতো উচ্চশিক্ষিত কর্মী দরকার। দেশে মানুষের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, ঋণ, স্বাস্থ্য, মানবশক্তি, মেয়েদের অধিকার, দক্ষতা বৃদ্ধি এসবের ওপর আমরা কাজ করব। আপনি হবেন আমাদের প্রথম পিএইচডি। আমি চাই সমাজের সবচেয়ে দুঃখী, দরিদ্র, অবহেলিত মানুষগুলোর উন্নয়নে আপনাদের মতো দক্ষ, শিক্ষিত, পেশাদার সবাই কাজ করুক। আপনি যদি চান আমাদের সঙ্গে যোগদান করতে পারেন। সত্যি তার কথায় এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই ব্র্যাকে কাজ করতে। কাজ শুরু করলাম ১৯৭৯ সালের এপ্রিল। ভেবেছিলাম দেখি কিছুদিন কাজ করে। ভালো লাগলে করব, না হলে ছেড়ে দেব। ব্র্যাক আর ছাড়া হয়নি! ত্রিশ বছর কোথা দিয়ে কেটে গেল বুঝলামও না। কখন যে আবেদ সাহেব আবেদ ভাই হয়ে গেলেন, সেটাও টের পেলাম না। অবশ্য ব্র্যাকে সবাই সবাইকে ভাই, আপা বা দাদা, দিদি বলে সম্বোধন করে। ত্রিশ বছর আবেদ ভাইকে অনেক কাছ থেকে দেখলাম, জানলাম, উপলব্ধি করলাম। এটা একটা অভাবনীয় অভিজ্ঞতা।

কয়েকদিন কাজ করার পর পরই একদিন আবেদ ভাই বললেন, ‘আপনারা তো বিদেশে পড়াশোনা করেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ঠিক জানেন না। চলুন গ্রাম দেখে আসি। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন সিলেটের শাল্লা। দেখলাম বাংলাদেশের গরিব মানুষ কীভাবে থাকে, তারা কী কী সমস্যায় ভোগেন। আবেদ ভাইয়ের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে গ্রাম দেখলাম, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললাম। আবেদ ভাইকে দেখছিলাম। তিনি জানতে চাচ্ছিলেন কী তাদের সমস্যা, কীভাবে এর থেকে বেরিয়ে আসা যায়। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে তাদের ধ্যানধারণা সম্পর্কে শুনতেন। তারপর এসে অনেক রাত পর্যন্ত সভা করতেন এবং মাঠকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করতেন এবং সিদ্ধান্ত নিতেন। দেখা গেল তিনি গ্রামের মানুষের কাছ থেকে শুনেছেন, তারপর কর্মীদের কথা শুনে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন এবং নির্দেশ দিতেন। এটা আবেদ ভাইয়ের একটা বিরাট গুণ ছিল। সাধারণ মানুষ, যারা এসব সমস্যায় ভুগত এবং কর্মীদের বক্তব্য খুব মনোযোগসহকারে শুনতেন। গুণটা

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন