সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল

৪৩ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য, মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

প্রকাশ: অক্টোবর ০৬, ২০২৪

অশোক ব্যানার্জী, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে ৩৮টি পদে চিকিৎসক কর্মরত। বাকি ৪৩ শতাংশ পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানিটির অন্যান্য পদেও জনবল ঘাটতি রয়েছে। ২০১৪ সালে ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর থেকে মূলত জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কারণে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবাও মিলছে না বলে দাবি করেন রোগীরা।

সদর উপজেলার সয়দাবাদ গ্রামের আদর বাবু ২৮ আগস্ট অসুস্থ দাদির চিকিৎসার জন্য আসেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে। পঞ্চম তলায় মেডিসিন বিভাগের নারী ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৫ বছর বয়সী মরিয়ম বেগমও অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ওয়ার্ড বয় না থাকায় নার্সরা রোগীকে একটি বেড দিতে ছোটাছুটি করেন। অবশেষে মেঝেতেই চিকিৎসাসেবা দেয়া শুরু করেন চিকিৎসক। আদর বাবু বলেন, ‘হাসপাতালে দাদিকে ভর্তি করা হলেও কোনো বেড পাওয়া যায়নি। পরে মেঝেতে বেড করে দেয়া হয়েছে।

মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মৃদুল ভৌমিক বলেন, ‘মেডিসিন বিভাগের নারী ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা রয়েছে ২৯টি। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৫ জন রোগী ভর্তি থাকছেন। কারণে বাধ্য হয়ে রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তবে সবাই মিলে সামর্থ্য অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি।

শুধু মেডিসিন বিভাগের নারী ওয়ার্ডেই নয়, হাসপাতালের আটটি ওয়ার্ডের একই অবস্থা। ওয়ার্ড বয়, নার্স প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং জনবলের অভাবে ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমোদিত শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী আসায় তাদের বাধ্য হয়ে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় চিকিৎসক জনবল না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে তাদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত বরাদ্দ না থাকায় খাবার সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তার পরও নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ২০১৪ সালে। তখন থেকেই রয়েছে জনবল সংকট। এখন তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৪১৭টি। কর্মরত রয়েছেন ২৯৮ জন। আর শূন্য রয়েছে ১১৯টি পদ। এর মধ্যে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৫৬টি। তবে কর্মরত রয়েছেন ৩৮ জন। বাকি ১৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা কমপক্ষে ২৭ জন। সেখানে রয়েছেন মাত্র আটজন।

ব্যাপারে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আবু রায়হান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাসপাতালে আটটি ওয়ার্ড রয়েছে। মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিয়াক শিশু বিভাগে সিনিয়র কোনো কনসালট্যান্ট নেই। জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জন দিয়ে চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করা হচ্ছে। সার্জারি বিভাগে শুধু আমি রয়েছি। এখানে জুনিয়র কনসালট্যান্ট নেই। বিশেষ করে সিসিইউ কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগ থাকলেও এখানে কোনো কনসালট্যান্ট নেই। কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পদায়ন করা পরিচ্ছন্নতাকর্মী ওয়ার্ড বয়দের নিয়োগের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। তারা আর কাজ করছেন না। নতুন করে নিয়োগ না হওয়ায় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ওয়ার্ড বয় না থাকায় ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় সামগ্রিকভাবে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জানানো হবে। দ্রুতই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫