অবসর ভাতা পেতে ভোগান্তি বেসরকারি শিক্ষকদের

প্রকাশ: অক্টোবর ০৫, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I ঠাকুরগাঁও

শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গঠনের কারিকর। মা-বাবার পরই একজন মানুষের জীবন গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন তার শিক্ষক। শিক্ষকদের স্মরণ করা এবং তাদের সম্মান জানানোর জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর অক্টোবরের ৫ তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পালিত হয় দিবসটি।

তবে অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা বলছেন, মানুষ গড়ার কারিকর হলেও শিক্ষকরা সম্মান হারাতে বসেছেন। অবসর ভাতা পেতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। ছয় মাসের মধ্যে ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও সময় লাগে বছরের পর বছর। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কল্যাণ বোর্ডে অবসরের পর ধর্না দিলেও মিলে না অবসর ভাতা। সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিরাই অবসরের পর হারাতে বসেছেন সম্মান।

কোনো কোনো শিক্ষক চাকরিরত অবস্থায় মারা গেছেন। আবার কেউ স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে গিয়েও পাচ্ছেন না ভাতা। অসুস্থতাজনিত কারণে চাকরিরত অবস্থায় মারা যান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দ্বীপশিখা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম। মৃত্যুর পর জানা যায়, ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। একদিকে স্বামীর শূন্যতা, অন্যদিকে ঋণের চাপে দুই সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার স্ত্রী রওশন আরা। ঋণ পরিশোধ ও সংসারের ব্যয় মেটাতে স্বামীর অবসর ভাতার জন্য ছোটাছুটি করেন। কয়েকবার ঢাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে গিয়েও মেলেনি সুফল। এখনো সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি৷।

রওশন আরা বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানের মা-বাবা এখন আমিই। আমাদের সামন্য কিছু আবাদি জমি রয়েছে। ভেবেছিলাম অবসর ভাতা পেলে কিছুটা স্বস্তি পাব। কয়েকদিন পর জানতে পেরেছি সোনালী ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন স্বামী নজরুল ইসলাম। ফসল বিক্রি করে অবসর ভাতার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছি। সব কাগজ জমা দিয়েছি। কিন্তু ভাতার টাকা এখনো পাইনি।’

এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরের ছয় মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। নির্দেশনার ছয় মাস পার হলেও অধিকাংশ শিক্ষকই পাননি অবসর ভাতা।

আখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আবদুল্লাহ মানিক বলেন, ‘আমি দুই বছর আগে অবসর গ্রহণ করেছি। এখনো ফাইলের কাজই শুরু হয়নি।’

শিক্ষক প্রতিনিধি ও গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবীব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শিক্ষকরা অবসর ভাতা পেতে প্রতিনিয়ত হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। আমরা এ বিষয়ে এর আগেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষককে জানিয়েছে।’

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আখতার বলেন, ‘প্রতিদিনই কেউ না কেউ অবসরে যাচ্ছেন। অনেকে এসে আমাদের কাছে অবসর ভাতা যথাসময়ে না পাওয়ার কথা বলেন৷। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫