সেমিনারে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

শ্রমিকরা দারিদ্র্যসীমারও নিচে বাস করছেন

প্রকাশ: অক্টোবর ০৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

দারিদ্র্যসীমার নিচে যে সীমা আছে তারও অনেক নিচে শ্রমিকদের জীবনযাপন করতে হয়, কারণ তাদের মজুরি ওভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন জায়গায় তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। কারণ শ্রমিকরা প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠ। শ্রমিকদের মধ্যেই নানা ধর্ম, লিঙ্গ ও মতের মানুষ রয়েছে। ইনক্লুসিভ যে আইডিয়া এখন বলা হচ্ছে তা শ্রমিকদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। 

গতকাল বিকালে ‘সমাজপাঠ’ আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শ্রমজীবীদের হিস্যা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

আন্দোলনে অংশ নেয়া শ্রমিকদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে শহীদ হওয়া প্রায় ১০০ জনের অধিক মানুষ শ্রমিক ছিল। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে যাতে তারা বৈষম্যমুক্ত হয়। আন্দোলন যেসব শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে তাদের অধিকাংশই শ্রমিক পরিবারের। কিন্তু আমরা দেখেছি, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নতুন সরকারের বাংলাদেশে আশুলিয়ায় শহীদ হন এক গার্মেন্ট শ্রমিক। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে।’

আলী নাঈমের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শাহজাদ ফিরোজ, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট তুহিন খান, শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী সত্যজিৎ বিশ্বাস এবং রিকশা শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক ও গার্মেন্টস শ্রমিক প্রতিনিধিরা।

তুহিন খান তার বক্তব্যের শুরুতে আশুলিয়ায় নিহত শ্রমিক কাউসার আহমেদ খানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কেমন চাই! নির্বাচন কমিশন কেমন চাই! এমন আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কারখানা কেমন হবে! এবং শ্রমিকদের অধিকার কেমন হবে; তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে না। সরকারিভাবেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। শ্রমিকরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন একটা প্রত্যাশা থেকে, বৈষম্যমুক্ত হবে। সব জায়গায় বৈষম্যমুক্ত শব্দ ব্যবহৃত হলেও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ চিত্র ভিন্ন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে শ্রমিকরা যেমন অধিকারবঞ্চিত হতো বর্তমান সময়েও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের ওপর হামলা করতে যে পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয় সে পুলিশের যে রেশন ব্যবস্থা তার কিঞ্চিৎ পরিমাণও শ্রমিকরা পান না।’

আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ও ছাত্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসা শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করে বরিশাল জেলার ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের সংগঠক সুজয় শুভ বলেন, ‘১৮ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলা হয়। ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়। সে সময় শ্রমিকরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিল কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। তাদের যে আয়-রোজগার তা দিয়ে মৌলিক অধিকার পূরণ তো দূরের কথা, খাবার জোগাড় করাও কঠিন হয়ে যায়।’

গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ উদয়। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘বাজারে প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে শুধু আমাদের শ্রমিকদের দাম বাড়ে না। শ্রমিকদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলা হয় কিন্তু তাদের অধিকার অনিশ্চিত। শ্রমিকদের জীবন চলার জন্য প্রয়োজন হয় চাল-ডাল ও খাবারের। শ্রমিকরা যে বেতন পান তা দিয়ে চাল-ডাল কিনতে হিমশিম খেতে হয় আবার মাস শেষে বাসার ভাড়া দিতে গিয়ে ঋণ করতে হয়। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে শ্রমিকরা যেন জীবনধারণ করতে পারে সেজন্য তাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে।’

রিকশা চালকদের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা অধিকারবঞ্চিত। কোনো সময় মৌলিক অধিকারের কিছুই আমরা পাইনি।’




সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫