দেশে আমদানি করা শিশুদের খেলনা গাড়ি, পুতুল,
পানির পাত্রসহ বিভিন্ন প্রকারের খেলনায় বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এমনকি
সিরামিক পণ্য, নারীদের ব্যবহার করা গয়নায়ও ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়া গেছে। এসব পণ্য আমদানি
নিষিদ্ধ করে শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলনা আমদানির আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয়ভাবে
নীতিমালা প্রণয়ন ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বানও জানানো হয়েছে।
‘শিশুদের খেলনায় ভারী ধাতু’ শীর্ষক গবেষণার
প্রাথমিক তথ্যে এসব বিষয় উঠে আসে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর লালমাটিয়ায় এক
সংবাদ সম্মেলনে তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়। ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন
(এসডো) ও ব্যান টক্সিকস, ফিলিপাইন’ যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করে।
গবেষণাটি উপস্থাপন করেন এসডোর প্রোগ্রাম
অ্যাসোসিয়েট শ্যানন ইফাত আলম। তিনি বলেন, গবেষণার জন্য ১৫০ প্রকারের খেলনা সামগ্রী
কেনা হয়। এসব পণ্য রাজধানীর চকবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, বসুন্ধরা শপিংমলসহ দেশের
সাধারণ, মধ্যম ও বিলাসবহুল মার্কেটগুলো থেকে কেনা হয়েছে। এসব খেলনা রিসাইকেল প্লাস্টিক
থেকে তৈরি করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এক্সআরএফ পরীক্ষার ফলাফলে
১৫০টি নমুনার প্রতিটিতেই পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিকসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ
পাওয়া গেছে। গবেষণায় বলা হয়, শিশুদের ব্যবহৃত সাধারণ পানির কাপে ১ হাজার ৩৮০ পিপিএম
সীসা, ২৪৭ পিপিএম আর্সেনিক ও ১ হাজার ৩৯০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। শিশুদের ব্যবহৃত
স্টেশনারি ব্যাগে ৫৮০ পিপিএম সীসা, ১ হাজার ২৮০ পিপিএম ব্যারিয়াম, ৮৮ পিপিএম পারদ
রয়েছে। এতে বোঝা যায় স্কুলের ব্যাগই শিশুর জন্য বিপজ্জনক।
শিশুরা পুতুল নিয়ে খেলাধুলা করতে পছন্দ করে।
সেই পুতুল সেটে ১৬০ পিপিএম সীসা ও ১ হাজার ৫০০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ
শিশুর প্রিয় পুতুলই এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম কারণ। শিশুদের পানি পান করার মগে
২২০ পিপিএম সীসা, ৩১৫ পিপিএম ক্যাডমিয়াম এবং ১ হাজার ৬৮০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া
গেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন পানি পানের সময় শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।
গবেষণায় বলা হয়, অনেক পরিবার শিশুদের শেখার
জন্য প্লাস্টিকের বর্ণমালা হাতে তুলে দেন। এই বর্ণমালাতেও রয়েছে ক্ষতিকর পদার্থ। একটি
বর্ণমালা সেটের অক্ষরে ৬৬০ পিপিএম সীসা পাওয়া গেছে।
সীসা, ম্যারকারি, ক্যাডমিয়াম এবং ক্রোমিয়ামের
মতো ভারী ধাতুর কারণে স্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কে গবেষণায় বলা
হয়, খেলনা এবং পণ্যগুলোর মাধ্যমে দূষিত রাসায়নিক সহজেই শিশুদের শরীরে প্রবেশ করতে
পারে। এটি শিশুদের, বিশেষ করে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি
তৈরি করে।
সম্মেলনে এসডোর চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশ
সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, শিশুদের খেলনাপণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক
পদার্থের উপস্থিতি একটি জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই অদৃশ্য
হুমকি থেকে রক্ষা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।
শিশুদের স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের
বিষয়ে জোর দিয়ে এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, এত অল্প বয়সে ক্ষতিকর
রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি
সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি এমন একটি সংকট যা অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।