এস আলম, বেক্সিমকো ও সামিটসহ ৭ গ্রুপের শেয়ার স্থানান্তর স্থগিতের অনুরোধ

প্রকাশ: অক্টোবর ০৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের শীর্ষস্থানীয় সাত শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ার হস্তান্তর (ক্রয়, বিক্রয় ও দান) স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ তালিকায় রয়েছে বসুন্ধরা, ওরিয়ন, সামিট, বেক্সিমকো, এস আলম, নাসা ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড (নগদ লিমিটেড)। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তর স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরকে চিঠি পাঠিয়েছে এনবিআর।

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক আহসান হাবিব গত রোববার এ চিঠি পাঠান। কিন্তু বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসে গতকাল। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ২২৩ ধারার আওতায় এনবিআর কর ফাঁকি রোধে সম্পত্তির অন্তর্বর্তীকালীন অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। চলমান তদন্ত অনুযায়ী, এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগসহ আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসা গ্রুপের মালিকদের কর ফাঁকি খুঁজতে বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। একই সঙ্গে পাঁচ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। এ তালিকায় রয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম।

এ পাঁচ ব্যবসায়ীসহ তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সিআইসি পরিচালিত এ বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনবিআর জানায়, সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা এবং সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য কর ফাঁকিতে জড়িতদের তালিকা সম্পন্ন করেছে সিআইসি। পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন ও মানি লন্ডারিং আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এর আগে এস আলম গ্রুপের মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদসহ তার পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংক হিসাব তলব করে কর অঞ্চল-১৫। 

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রেয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, তারা এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে ২০২৩ সালের আগস্টে অনুসন্ধান শুরু করে। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে অনুসন্ধান বন্ধ রাখা হয়। পুনরায় অনুসন্ধান শুরু হয় আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের পর। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে এস আলম গ্রুপের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় লেনদেনের তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. নূর-ই-আলম। এছাড়া এস আলম গ্রুপের অধিকাংশ শেয়ারের মালিকানায় থাকা ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাত। ঋণ জালিয়াতিসংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে গত ১৩ আগস্ট চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। দুদকের পাঠানো ওইসব চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া নামসর্বস্ব ১১ প্রতিষ্ঠানের তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫