চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যাকবলিত সাত জেলা

উপকরণ সংকটে স্বাভাবিক হয়নি প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম

প্রকাশ: অক্টোবর ০২, ২০২৪

দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

সাম্প্রতিক বন্যায় চট্টগ্রাম বিভাগের সাত জেলার অন্তত ৩ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে বই, খাতা, স্কুল ড্রেস। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুলের অবকাঠামো ও আসবাবপত্র। বন্যার প্রায় এক মাসের বেশি সময় পার হলেও স্কুলগুলোকে পাঠদানের উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। পানি নেমে গেলেও শিক্ষা উপকরণ সংকটে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণেও বড় সংকটে রয়েছে স্কুলগুলো। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই, খাতা ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ না পৌঁছানোর কারণে পড়াশোনা স্বাভাবিক হতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তাছাড়া অনেক এলাকায় এখনো বন্যার পানি থাকায় স্কুলের সংস্কার করা যায়নি। এ কারণে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হচ্ছে। স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ ফেরাতে হলে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া স্কুলগুলোকে দ্রুত সংস্কার করতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কম-বেশি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ হাজার ৫৭৬টি স্কুলের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯টি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২ হাজার ২৩৩টি স্কুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্কুলের ২ লাখ ৬৯ হাজার ১২ শিক্ষার্থী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৭২ ও মেয়ে শিক্ষার্থী ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৪০ জন। বিভিন্ন স্কুলে বই, স্কুল ব্যাগ ও ড্রেসের চাহিদাপত্র হাতে পেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

চাহিদাপত্র অনুযায়ী, বন্যাকবলিত এলাকায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৮০টি স্কুল ব্যাগ, ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৭ সেট স্কুল ড্রেস সরবরাহ করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া কী পরিমাণ বইয়ের চাহিদা জরুরি ভিত্তিতে রয়েছে সে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাজ করছেন। কিছু প্রাথমিক চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। তবে চাহিদাপত্র অনুযায়ী বই পর্যাপ্ত থাকায় শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বন্যার কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের সাত জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো, ইলেকট্রিক ডিভাইসসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮০০ টাকা। তবে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য যুক্ত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ সময়সাপেক্ষ বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোয় পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ড্রেস, স্কুলব্যাগ, বইসহ অন্যান্য উপকরণের কিছুটা সংকট রয়েছে। আমরা জেলা কর্মকর্তাদের এসব উপকরণের চাহিদাপত্র দিতে বলেছি। চাহিদাপত্র ছাড়া শিক্ষার্থীদের বেশকিছু শিক্ষা উপকরণ সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে বন্যার সময় স্কুলগুলোয় থাকা বিভিন্ন উপকরণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম শতভাগ শুরু করা যায়নি। আমরা স্কুলগুলোয় গিয়ে শিক্ষাকদের শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করতে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি। যেহেতু বন্যার কারণে শিক্ষার্থীদের বই-খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে, সেজন্য তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বিকল্প উপায়ে নিয়মিত করতে সহায়তা দরকার। ডিসেম্বর পর্যন্ত এখনো হাতে সময় রয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষা নিতে কোনো সমস্যা হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের সংকট নেই। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।’

তবে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, বন্যার কারণে স্কুলগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় বইসহ অন্যান্য উপকরণ রক্ষা করতে পারেনি। স্কুলগুলোয় পলি জমে থাকায় ক্লাস শুরু করাই এখন চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া স্কুলের অবকাঠামো, আসবাবপত্র ঠিকঠাক করে সম্পূর্ণভাবে চালু করতে কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের এখন প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ শেষ করা। শিক্ষার্থীদের খাতায় হাতে লিখে, ফটোকপি করে বা অন্যভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। স্কুলগুলোয় এখনো শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে চেষ্টা করছেন তারা।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে স্কুলগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। এখানকার স্কুলগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, ব্যাগ, স্কুল ড্রেসসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষকদের নানা সংকট থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যতদিন না শিক্ষা উপকরণ হাতে হাতে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে, ততদিন হাতে লিখে বা বই শেয়ারিং বা অন্যান্য উপায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব শিক্ষা উপকরণের মধ্যে খাতা, কলম, পেনসিল, স্কুলব্যাগ বা ড্রেসসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ রয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে ইউনিসেফের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। অবশ্য বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ইউনিসেফের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫