আশুলিয়া ও গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

প্রকাশ: অক্টোবর ০২, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

যানজটে দিনভর ভোগান্তি

বিভিন্ন দাবিতে দেশের শ্রম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় এক মাসের বেশি সময় ধরে কম-বেশি শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বরের পর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে থাকে। কিন্তু ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আবার বাড়তে থাকে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা। গতকালও নানা দাবিতে সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এতে দিনভর তীব্র যানজটে ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, জিরানি, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন ও চট্টগ্রামে মোট কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৪৪টি। এর মধ্যে গতকাল খোলা ছিল ২ হাজার ১০০টি কারখানা। সাময়িক বন্ধ কিংবা ছুটি হওয়া কারখানার সংখ্যা ৪৪। আগস্টের বেতন পরিশোধ করেছে ২ হাজার ১৩৩টি কারখানা। 

সাভার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলা ছিল। তবে অভ্যন্তরীণ সংকটসহ নানা কারণে কয়েকটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর মধ্যে সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে গতকাল চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। পাওনাদি পরিশোধ না করা পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।’

শিল্প পুলিশ জানায়, গতকাল শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে জিরাবো রোডে অবস্থিত, এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, টোংগাবাড়ী এলাকার ম্যাংগো টেক্স লিমিটেডসহ কয়েকটি কারখানায় ছুটি ছিল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বার্ডস গ্রুপের এক শ্রমিক বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বর আমাদের পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ না করে প্রতারণা শুরু করেছে। আমরা পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার করব না।’

গত ২৮ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রুপের সব কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের আগস্টের বেতন ১০ সেপ্টেম্বর ও সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ ৩০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের দিন ধার্য করা হয়।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে গতকাল প্রায় ১০ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন অ্যাপারেলস প্লাস লিমিটেড (এপিএল) কারখানার শ্রমিকরা। সন্ধ্যায় বেতন পরিশোধ করা হলে অবরোধ তুলে নেন তারা। পরে দুই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। 

এপিএল কারখানার অবস্থান গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকায়। কারখানার শ্রমিকরা জানান, গত মাসের শুরুতে বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন। পরে মালিক পক্ষ ৩০ সেপ্টেম্বর বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়। নির্ধারিত তারিখে বেতন না পেয়ে সোমবার রাতে মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু মালিক পক্ষের সাড়া না পেয়ে তারা রাত ৯টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে দেন। এরপর গতকাল সকালে চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া মোড় অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া গাজীপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের দিকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে এ দুই মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ। 

গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার অশোক কুমার পাল জানান, সকাল থেকে শ্রমিকরা চান্দনা চৌরাস্তা ও ভাওয়াল পয়েন্টের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। 

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এপিএল কারখানায় তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ কারখানায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। 

আন্তর্জাতিক অ্যাপারেল ফেডারেশনের সদস্য ও বিজিএমইএর স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এ কারখানার মালিক বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বেতন পরিশোধ করে দিতে বলেছেন। সন্ধ্যায় বেতন পরিশোধ করা হয়।’

গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্দোলন শুরু হলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। সন্ধ্যায় মালিক পক্ষ তিন মাসের বকেয়া পরিশোধ করে দিলে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে চলে যান।’ 

এদিকে কোনাবাড়ী এলাকার এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা টিফিন বিল, নাইট বিল ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করেন। 

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, গতকাল জেলায় নয়টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর মধ্যে চারটি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে একটি কারখানা লে-অফ, একটি অস্থায়ী বন্ধ এবং তিনটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০-৫০০টি। এসব কারখানায় প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার শ্রমিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে একজন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫