হংকংয়ে পসরা সাজাচ্ছে নিলাম ঘরগুলো

প্রকাশ: অক্টোবর ০২, ২০২৪

মারিফুল হাসান

এশিয়া অঞ্চলে বিক্রি বৃদ্ধির লক্ষ্যে হংকংয়ে আঞ্চলিক সদর দপ্তর ও প্রদর্শনী কেন্দ্র খুলছে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি নিলাম ঘর। চীনের অর্থনীতিতে মন্থরগতির প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও অঞ্চলটির অতিধনীদের আকৃষ্ট করতে নতুন বিক্রয় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এসব নিলাম ঘর। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে হংকংয়ের নতুন আকাশচুম্বী ভবন হেন্ডারসনের ৫০ হাজার বর্গফুটের সাইটে আঞ্চলিক সদর দপ্তর নিয়ে আসছে ২৫০ বছরের পুরনো নিলাম ঘর ক্রিস্টি’জ। পদক্ষেপটির মাধ্যমে তারা এশিয়া অঞ্চলে আরো বিক্রির প্রত্যাশা করছে। এজন্য বছরব্যাপী নিলাম কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে ক্রিস্টি’জ। 

এদিকে আরেক প্রতিষ্ঠান সথবি’জ হংকংয়ের ব্যবসায়িক কেন্দ্র সেন্ট্রালে জুলাইয়ে বিক্রয় কেন্দ্র খুলেছে। পাশাপাশি কয়েকটি অফিসও শহরটিতে স্থানান্তর করেছে। বিশ্বের আরেক শীর্ষ নিলামঘর বনহ্যামস সেপ্টেম্বরে হংকংয়ে নতুন সদর দপ্তর খুলতে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিলামঘর ফিলিপস সেন্ট্রালে গত বছর সদর দপ্তর খুলেছে। বৈশ্বিক শিল্পবাজারে মন্থরগতি, চীনে বিলাসবহুল পণ্যে ব্যয় মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া এবং দেশটিতে প্রবৃদ্ধির হ্রাস সম্ভাবনা সত্ত্বেও নিলামঘরগুলো এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। শিল্পবাজার গবেষণা সংস্থা আর্টট্যাকটিক অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বড় নিলামঘরগুলোর অংশগ্রহণে সন্ধ্যাকালীন বিক্রয় আয়োজনে বিক্রির আর্থিক পরিমাণ ৪০ শতাংশ কমেছে, যা ২০১৭ সাল থেকে সর্বনিম্ন। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) চীনের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, যা পূর্বাভাসের চেয়ে কম। পাশপাশি দেশটিতে ক্রয়প্রবণতা ক্রমাগত কমতে থাকায় কিছু বিশ্লেষক বলছেন, শিল্প ও ব্যয়বহুল পণ্যের বিক্রি আশানুরূপ হবে না। ক্রিস্টি’জের এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস বেলিন এক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘চীনের সামষ্টিক অর্থনীতি যেমনই হোক, আমাদের অভীষ্ট গ্রাহকে প্রভাব পড়বে না। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই থাকে চীনের মূল ভূখণ্ড, তাইওয়ান বা হংকংয়ে। অর্থনৈতিক মন্থরগতিতে এ অতি ধনীদের খুব একটা প্রভাব পড়বে না।’

ক্রিস্টি’জের বিলাসবহুল পণ্যের সামগ্রিক বিক্রির ৪১ শতাংশ এসেছে এশিয়া থেকে। তাছাড়া বিরল ও সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য বিক্রিতে চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। নিলামঘরটি দেখতে পেয়েছে যে বিক্রি করা সবচেয়ে মূল্যবান এবং বিরল আইটেমগুলো অর্থনীতিতে ঘটে যাওয়া খারাপ জিনিসগুলোর দ্বারা ততটা প্রভাবিত হয়নি। অর্থাৎ অর্থনীতি যখন খারাপ চলছিল, তখনো লোকজন এ ব্যয়বহুল আইটেমগুলো কিনতে ইচ্ছুক ছিল।

সথবি’জের নিলাম থেকে বৈশ্বিক বিক্রিও প্রভাবিত হয়েছে এবং গত কয়েক মাসে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। গত মাসে শুরু করা নিলামঘরটির দুই তলাবিশিষ্ট বিক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করা হবে দুর্লভ বই, চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্য; যেগুলো ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৫ কোটি হংকং ডলারে বিক্রি করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাথান দ্রাহি জানান, চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে মন্থরগতি দেখা দিলেও চীনা সংগ্রাহকদের অনেককেই বেশ ভালো খরচ করতে দেখা গেছে। এমনকি সম্প্রতি নিউইয়র্কে আয়োজিত নিলামে অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশ এসেছে এশিয়া থেকে। বাজারটির দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনায় বিশ্বাস রাখার কথা জানান তিনি।

হংকংভিত্তিক শিল্প উপদেষ্টা ও পার্ল লাম গ্যালারির বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেগ ম্যাজিও বলেন, ‘যদিও শিল্পবাজার এখনো ভালো করছে, তবে ব্যবসা বাড়ানোর উপযুক্ত সময় এখন নয়। তা করলে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কারণ ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে অন্যান্য বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা অনেকটাই অনিশ্চিত করে তুলেছে। তিনি প্রশ্ন করেন, হংকংয়ে যদি অনেক বেশি নিলামঘর তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে কি তারা বাজারে ভারসাম্য রাখতে পারবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫