যুক্তরাজ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ যুগের অবসান

প্রকাশ: অক্টোবর ০২, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যুক্তরাজ্যের জ্বালানি খাতের ১৪২ বছরের ইতিহাসের পর্দা নামল। গত সোমবার দেশটিতে বন্ধ হয়ে গেল শেষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ্যাটক্লিফ-অন-সোয়ার পাওয়ার স্টেশন। খবর বিবিসি।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে সারা বিশ্বে নেয়া উদ্যোগের অন্যতম হলো কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি কমিয়ে আনা। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়।

যুক্তরাজ্য হলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের জন্মস্থান। ১৯৬৭ সালে চালু হওয়া ্যাটক্লিফ-অন-সোয়ার বন্ধের মাধ্যমে পুরোপুরি কয়লা বিদ্যুৎ থেকে সরে আসা প্রথম শীর্ষ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে দেশটি।

যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা লর্ড দেবেনের ভাষ্য, এটি সত্যিই একটি অসাধারণ দিন। কেননা ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লব পুরোপুরি কয়লার ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে।

বিশ্বের প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল হলবর্ন ভায়াডাক্ট পাওয়ার স্টেশন। ১৮৮২ সালে টমাস আলভা এডিসন উদ্ভাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র লন্ডনের রাস্তা আলোকিত করে। ওই থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রায় বিদ্যুৎ, বাড়ি ব্যবসায়িক খাতের জ্বালানির উৎস ছিল কয়লা।

নব্বই দশকের শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। তা সত্ত্বেও পরবর্তী দুই দশকে যুক্তরাজ্যের সঞ্চালন লাইনে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কদর পায় খনিজ। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের ৩৯ শতাংশ বিদ্যুতের উৎস ছিল কয়লা।

জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক ধারা থেকে এটা স্পষ্ট যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে নোংরা ক্ষতিকর হিসেবে পরিচিত কয়লা।

২০০৮ সালে প্রথমবার আইনগতভাবে জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে যুক্তরাজ্য। ২০১৫ সালে তৎকালীন জ্বালানি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাম্বার রুড বলেছিলেন, ‘যুক্তরাজ্য আগামী দশকের মধ্যে কয়লা বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ করবে।

লর্ড দেবেনের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বন্ধে বিশ্বে নেতৃত্বের আসনে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্য। এটি অন্য দেশগুলোর জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে আসছে যুক্তরাজ্য। ২০১০ সাল নাগাদ দেশটির মোট বিদ্যুতের শতাংশের উৎস হয়ে ওঠে বায়ু সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য খাতগুলো। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) হিস্যা ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বে উন্নীত হয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে।

২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথমবারের মতো কয়লামুক্ত বিদ্যুতের অভিজ্ঞতা লাভ করে। ওই সময় দেশটির কিছু অঞ্চলে পুরোপুরি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দেশটিতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা এতটাই সফল হয়েছে যে ্যাটক্লিফ-অন-সোর পাওয়ার স্টেশন পূর্বনির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুতের উৎস হিসেবে কয়লা অতিদূষণকারী হলেও এর সুবিধা সবসময় প্রায় সমানভাবে পাওয়া যায়। এর বিপরীতে বায়ু সৌরবিদ্যুৎ অনেক সময় আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে সীমাবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সামনে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে যুক্তরাজ্য।

বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিদ্যুৎ সঞ্চালন তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা এনার্জি সিস্টেম অপারেটরের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা কায়েট নিল বলেন, ‘গ্রিডের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আমাদের আরো উদ্ভাবনের প্রয়োজন। এটা করতে হবে নিরাপদ উপায়ে।

এক্ষেত্রে ব্যাটারি প্রযুক্তির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন কায়েট নিল। একই কথা বলেন ফ্যারাডে ইনস্টিটিউশনের রিসার্চ প্রোগ্রাম ম্যানেজার . সিলভিয়া ওয়ালুসও।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫