প্লাস্টিক বর্জন নাকি নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার?

প্রকাশ: অক্টোবর ০২, ২০২৪

সাজ্জাদ জহির

এতকাল যারা প্রচারে ও সচেতায়ন-কর্মে লিপ্ত ছিলেন, তাদের অনেকে সমাজমুখী সেসব ধারণা বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখজনক একটি উদ্যোগ হলো উপদেষ্টা  রিজওয়ানা হাসানের প্লাস্টিক বর্জনের ঘোষণা। অতীতের উদ্যোগের ব্যর্থতার নানা কারণ তিনি নিশ্চয়ই ঘেঁটে দেখেছেন। তবে অনুমান করছি যে সামাজিক কর্মোদ্যোগে চালকের ভূমিকায় বর্তমান নেতৃত্বের দৃঢ়তার কোনো ঘাটতি নেই। তাই শুরুতেই শিরোনামে সরাসরি প্রশ্নটা রেখেছি। আশা করব যে প্রায়োগিক দিকগুলো ভেবে নীতি-ঘোষণা প্রণয়ন করা হবে। সেই আলোকে, এই নিবন্ধে কিছু বাস্তব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানকল্পে কিছু প্রস্তাব রেখেছি।

আজ ১ অক্টোবর। প্লাস্টিক বর্জনে শামিল হওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি। ভোরে উঠে মচকানো পা বাঁধবার জন্য সার্জিক্যাল গজ বের করলাম। কিন্তু যে প্যাকেটটি থেকে বের করলাম, তা প্লাস্টিকের তৈরি। আমরা প্রস্তুত ছিলাম যেন প্লাস্টিক ব্যাগে রন্ধন-আবর্জনা না জমিয়ে দালানের সবাই প্রতিদিনের আবর্জনা একটি ঢাকনিসহ পাত্রে জমাব, যা প্রতিদিন পানিতে ধোয়া হবে। তাই প্যাকেটের প্লাস্টিকটি আমি সেই পাত্রে রাখতে গেলাম। সেখানে ঠিকই প্লাস্টিকবিহীন খোলা পাত্রে আবর্জনা জমানো হচ্ছে, তবে তার ভেতরে ব্যবহার করা ছোট-বড় প্লাস্টিক ব্যাগও রয়েছে। আমিও একই ভুল পথে এগিয়ে উপলব্ধি করলাম, প্লাষ্টিক বর্জন নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বরং প্লাস্টিকের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।

অনেকেই উন্নত দেশগুলোয় ঘরের আবর্জনাকে তিন রঙের পাত্রে জমা করার রীতির সঙ্গে পরিচিত। যে সমাজে গৃহকর্ম সম্পাদনে ও পরিচালনায় কয়েক স্তরের ব্যক্তির উপস্থিতি অনস্বীকার্য, সেখানে (এক) পাত্র থেকে (দুই) পাত্রে উত্তরণ হওয়া উচিত প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই বিশ্বাস থেকে গৃহকর্মে ও দালান রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মীদের প্রতি আমার প্রথম নির্দেশ নিম্নরূপ—

(১) সব পচনশীল দ্রব্য একটি পাত্রে জমানো। পাত্রটি প্লাস্টিকের তৈরি হতে পারে—হয়তো দাম ও পছন্দের বিচারে সেটাই কাম্য। 

(২) দ্বিতীয় পাত্রটিতে সব অপচনশীল দ্রব্য রাখা হবে। যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ, প্লাস্টিক বা কাচের বোতল বা মোড়ক ইত্যাদি।

আইনের মাধ্যমে দেশের সব আবর্জনা পাত্রের উৎপাদনকারীদের জন্য দুটো পূর্বনির্ধারিত রঙে প্রস্তুত করা বাধ্যতামূলক করলে ভালো। তবে গৃহ পর্যায়ে এর বাস্তবায়নে সময় দিতে হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের নামে অর্থের অপচয় না করে, স্থানীয়দের সমাজ-সংগঠন ও যে কর্মীরা আবর্জনা সংগ্রহকাজে জড়িত তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। আরো ভালো হয় যদি সেই সংগ্রহ কার্যক্রম স্থানীয় সমাজ-সংগঠনের ওপর ন্যস্ত করা যায়। সরকারি, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার এবং বিশেষায়িত সংস্থার দায়িত্ব এলাকা পর্যায়ে আবর্জনা কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়। সেসব কেন্দ্রে তারা প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নিশ্চিত করে নিয়মিত আবর্জনা বিভাজনের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে পারেন।        

কাঠের টুকরোগুলো কোন পাত্রে রাখব, সেই প্রশ্নের উত্তর পাঠকদের ভাবতে বলব। সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব সমাজ গড়ে তোলার উদ্যোগের প্রতি রইল শুভ কামনা।

সাজ্জাদ জহির: নির্বাহী পরিচালক, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি)


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫