আবর্জনা বিক্রেতার স্টোররুমে পাওয়া চিত্রকর্মটি পিকাসোর, বিশেষজ্ঞদের দাবি

প্রকাশ: অক্টোবর ০১, ২০২৪

বণিক বার্তা অনলাইন

ইতালির ক্যাপ্রি শহরের আবর্জনা বিক্রেতা লুইজি লো রোসো তার বাড়ির স্টোররুম পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি চিত্রকর্ম খুঁজে পান। চিত্রকর্মটিকে তার স্ত্রী নিয়মিতই ‘ভয়ানক’ বলে বেশ নিন্দাও করতেন। ইতালিয় বিশেষজ্ঞরা এবার দাবি করছেন, নিয়মিত নিন্দা কুড়িয়েছে যে চিত্রকর্ম সেটি আসলে বিশ্বখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর একটি অরিজিনাল বা, সত্যিকারের চিত্রকর্ম।

১৯৬২ সালে লুইজি লো রোসো ক্যানভাসটি খুঁজে পাওয়ার পর এটিকে নিয়ে যান তার পম্পেইয়ের বাড়িতে। সেখানেই পরবর্তী কয়েক দশক লিভিং রুমের দেয়ালে এক সস্তা ফ্রেমে ঝুলেছিল চিত্রকর্মটি।

ধারণা করা হচ্ছে, চিত্রকর্মটি মূলত ফরাসি ফটোগ্রাফার ও চিত্রশিল্পী ডোরা মারের প্রতিকৃতি। ডোরা মারকে পিকাসোর প্রেমিকা ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারী হিসেবেও বলে থাকেন অনেকে। চিত্রকর্মটির ওপরের বাঁ দিকের কোণে ছিল পিকাসোর স্বাক্ষর। তবে লো রোসো জানতেন না পিকাসোর পরিচয়।

অনেক পরে, লো রোসোর ছেলে আন্দ্রেয়া একটি এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে শিল্প ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। পরিবারটি এরপর পরামর্শ নেয় এক বিশেষজ্ঞ দলের। সেই দলে ছিলেন সুপরিচিত শিল্প গোয়েন্দা, মরিজিও সেরাচিনি। বছরের পর বছর জটিল তদন্তের পর প্রসিদ্ধ গ্রাফোলজিস্ট সিনজিয়া অল্টিয়েরি এবং শিল্পকর্মের মূল্যায়ন, পুনরুদ্ধার ও প্রামাণ্যকরণ বিষয়ক কাজ করা আর্কেডিয়া ফাউন্ডেশনের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্যরা নিশ্চিত করেন যে, চিত্রকর্মের স্বাক্ষরটি পিকাসোর। আজ এর মূল্য ৬ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

সিনজিয়া অল্টিয়েরি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, চিত্রকর্মের অন্যান্য সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমাকে স্বাক্ষরটি বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি কয়েক মাস ধরে এটি নিয়ে কাজ করেছি। পিকাসোর আসল কাজগুলোর সঙ্গে এটি তুলনা করেছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, স্বাক্ষরটি তারই। এটিকে ভুয়া বলার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ ইতালির দ্বীপ ক্যাপ্রিতে ঘন ঘন যেতেন পিকাসো। ধারণা করা হয়, চিত্রকর্মটি ১৯৩০ থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। চিত্রকর্মটির সঙ্গে পিকাসোর ‘দ্য বাস্টে দে ফেম (ডোরা মার)’ এর অনেক বেশি মিল পাওয়া গেছে।

লো রোসো মারা গেছেন। তার ছেলে, ৬০ বছর বয়সী আন্দ্রেয়া চিত্রকর্মের পেছনে থাকা শিল্পীকে আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দ্রেয়া বলেন, আমার বাবা ক্যাপ্রি থেকে এসেছিলেন। তিনি প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। আমি জন্মানোর আগেই তিনি চিত্রকর্মটি পেয়েছিলেন এবং পিকাসো কে ছিলেন সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। তিনি খুব বেশি শিক্ষিত ছিলেন না। এনসাইক্লোপিডিয়ায় পিকাসোর কাজ সম্পর্কে পড়ার সময় আমি চিত্রকর্মটির দিকে তাকাতাম এবং তার স্বাক্ষরের সঙ্গে তুলনা করতাম। তখন বারবার আমার বাবাকে বলতাম যে, এটি পিকাসোর স্বাক্ষরের মতো। কিন্তু তিনি বুঝতে পারতেন না। তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার কৌতূহল বাড়তে থাকে।

আন্দ্রেয়া লো রোসো বলেন, এমনও মুহূর্ত ছিল যখন তার পরিবার চিত্রকর্মটি ফেলে দেয়ার কথা ভেবেছে। তিনি বলেন, আমার মা এটিকে রাখতে চাননি। তিনি বারবার বলতেন, এটি ভয়ানক।

আন্দ্রেয়া বেশ কয়েকবারই মালাগায় পিকাসো ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে পিকাসো ফাউন্ডেশন আন্দ্রেয়ার কথা অনুযায়ী তার দাবিগুলো পরীক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী হয়নি। কারণ তাদের ধারণা ছিল, আন্দ্রেয়া মিথ্যা বলছেন। চিত্রকর্মের প্রামাণিকতা নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা ফাউন্ডেশনের হাতে। বর্তমানে মিলানের একটি ভল্টে রাখা হয়েছে দ্য বাস্টে দে ফেম (ডোরা মার) চিত্রকর্মটি।

১৯৭৩ সালে মারা যাওয়া পিকাসো ১৪ হাজারেরও বেশি চিত্রকর্ম এঁকেছেন। অন্যদিকে, পিকাসো ফাউন্ডেশনও প্রতিদিন এমন শত শত বার্তা পায় যেখানে দাবি করা হয় যে, তাদের কাছে একটি আসল চিত্রকর্ম আছে।

দ্য বাস্টে দে ফেম (ডোরা মার) নামের চিত্রকর্মটি আঁকা হয়েছিল ১৯৩৮ সালে। এক সৌদি শেখের ইয়ট থেকে ১৯৯৯ সালে এটি চুরি হয়েছিল। ২০ বছর পরে তা উদ্ধার করা হয়।

আর্কেডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট লুকা মার্কান্তে বিশ্বাস করেন, চিত্রকর্মটির দুটি সংস্করণ থাকতে পারে। ইল গিয়র্নো সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, দুটোই আসল হতে পারে। এগুলো সম্ভবত দুটি প্রতিকৃতি, ঠিক এক নয়, তবে একই বিষয়কে ভিত্তি করে পিকাসো দুটি ভিন্ন সময়ে এঁকেছিলেন। একটি বিষয় নিশ্চিত— ক্যাপ্রিতে পাওয়া চিত্রকর্ম এবং বর্তমানে মিলানের ভল্টে রাখা কাজ দুটোই আসল।

মার্কান্তে এখন পিকাসো ফাউন্ডেশনে তার প্রমাণ উপস্থাপন করবেন। লো রোসো বলেন, আমি জানতে আগ্রহী তারা কী বলে। আমরা শুধুই একটি সাধারণ পরিবার এবং সবসময় সত্যটা জানার ইচ্ছা ছিল। অর্থ উপার্জনের কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫