সিঙ্গেল লোকেশনে সিটির এলপিজি স্টোরেজই দেশে সর্বোচ্চ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪

এলপিজি এখন আমদানিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ দিন দিন কমছে। অন্যদিকে অনেক শিল্প-কারখানা হচ্ছে। যার কারণে গ্যাসের চাহিদা অনেক গুণে বাড়ছে। শিল্প-কারখানাগুলোকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য আমদানিনির্ভর হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখন সরকার শিল্পকে সহায়তা দেয়ার জন্য এলএনজি এনে জাতীয় গ্রিডে দিয়ে দিচ্ছে। অনেকেই এলপিজি খাতে এসে এ ব্যবসা টেকসই না ভেবে চলে যাচ্ছে। আমরা চিন্তা করে এসেছি, আমাদের এ ব্যবসার সঙ্গে অনেকগুলো সিনার্জি আছে। সেগুলো হলো আমরা আমাদের ব্যবসার জন্য সবসময় বাল্ক হ্যান্ডল করি। যেমন কমোডিটির মধ্যে আমরা তেল বাল্ক হ্যান্ডল করি, আমদানি করি। তাই আমরা জানি যে বাল্ক কীভাবে করতে হয়। সেই সিনার্জি থেকে আমরা চিন্তা করলাম যে এলপিজিও বাল্কে আসবে। আমরা সিটি এলপিজির সাইট নির্ধারণ করেছি হোসেন্দী ইকোনমিক জোনে। সে সময় আমাদের মাথায় ছিল এ সাইটটা আমাদের অ্যাডভান্টেজ দেবে। কারণ এলপিজি কারখানা যতগুলো আছে, মেঘনা ছাড়া বাকি সবই হয় মোংলা, না হলে আরেকটু দূরে। এলপিজি মাদার ভেসেলে এনে যদি আড়াই-তিন হাজার টনের জাহাজ আমরা হোসেন্দীতে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে পরিবহন ব্যয়ের দিক থেকে অ্যাডভান্টেজ পাব। জ্বালানি খাতে সরকারের সমর্থন পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, সেটার সঙ্গে সংগতি রেখে সরকারের সহায়তা নিশ্চিত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে সবসময় পার্থক্য থাকবে। সরকার যেমন ঘোষণা দিয়েছে ভবিষ্যতে আবাসন খাতে গ্রিড থেকে গ্যাস দেবে না। এ সিদ্ধান্ত এলপিজির একটা সুযোগ এসে গেল। এছাড়া সুযোগ এল যখন আমাদের জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করল। এভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে এলপিজির ডিমান্ড বাড়ন্ত। এরপর অটোমোবাইল সেক্টরে। আমরা এতদিন সবাই চলেছি সিএনজি কনভারশন করে। সিএনজি কনভারশনের বড় রিস্ক হলো গাড়িতে যেই ট্যাংকটা থাকে, সেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে এলপিজি হলো নমিনাল প্রেশার, এমনকি অ্যাকসিডেন্টেও ম্যাসিভ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম। আর এলপিজি ব্যবহারের উপযোগিতা সিএনজি থেকে বেশি। এলপিজিতে ইঞ্জিনটাও ভালো থাকে। অটোমোবাইল ও হাউজহোল্ডে এলপিজির চাহিদা বাড়বেই। যেহেতু ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক আছে, আর সাইট বিবেচনায়ও যেহেতু ভালো জায়গায়, ইকোনমিক জোনের মধ্যে, তাই আমরা ভেবে দেখলাম যে এখানে এলপিজিতে যাওয়া যায়।

এলপিজিতে আমরা একটা বিনিয়োগ করেছি আমাদের নিজস্ব জায়গায়। আর একটা আমরা কিনেছি স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনের জন্য। এলপিজিতে যেটা হয় আমদানি করে তিন-সাড়ে তিন হাজার টনের ভেসেল সাইটে নিয়ে আসা যায় না। কিন্তু মোংলায় যদি আপনার সাইট বা প্লান্ট থাকে, জেটি থাকে, তাহলে আপনি মোংলায় ওটা নিয়ে আসতে পারেন, চিটাগংয়ে যদি থাকে, তাহলে চিটাগংও আনতে পারেন। কিন্তু আমাদের মোংলা, চিটাগংয়ে কিছু ছিল না। তাই আমরা চিন্তা করলাম যে আমরা যেহেতু ঢাকাভিত্তিক করেছি, মোংলায় যদি করতে পারি তাহলে আমাদের ওই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারব। বেঙ্গল এলপিজি আমরা কিনেছি গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে। ক্রয়মূল্য সাড়ে তিনশ কোটির মতো হবে। বেঙ্গল যেটা আমরা কিনেছি, সেটার স্টোরেজ ক্যাপাসিটি আছে পাঁচ হাজার টন এলপিজি। ওটার সিস্টেমটা হলো স্ফেরিকল (গোলাকার) ট্যাংক, অন সারফেস। স্ফেরিকল ট্যাংকে একটা নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। স্ফেরিকাল ট্যাংক যদি করেন, তাহলে চারদিক থেকে প্রায় ৯০ ফুট বা ৩০ মিটার উন্মুক্ত (ফ্রি স্পেস) রাখতে হবে। আমরা যেটা করেছি হোসেন্দীতে সেটা মাউন্ডেড বুলেট বল অর্থাৎ আন্ডারগ্রাউন্ডে, তবে মূল স্টোরেজটা সারফেসেই। এটা আমরা করেছি কারণ যে ফ্রি স্পেসটা রেখেছি সেটা কম। এক্ষেত্রে ১৫ ফিট রাখলেই হয়। এভাবে জায়গা বাঁচল। এখানে আমরা ছয়টি বুলেট করেছি, ছয়টি হলো ৯ হাজার টন স্টোরেজ ক্যাপাসিটি। এই ৯ হাজার আর মোংলায় ৫ হাজারসহ মোট ১৪ হাজার টন স্টোরেজ ক্যাপাসিটি। আমরা এলপিজিতে তিনটি শিপ তৈরি করছি। এক একটি ক্যারিয়ারে আমাদের দুটি বুলেট থাকবে। দুটি বুলেটে আড়াই হাজার টন এলপিজি ক্যারি করতে পারব। শিপগুলো ৫ হাজার টনের জাহাজ। এটা মাদার ভেসেল থেকে ফিডার ভেসেলের জন্য। মাদার ভেসেল মনে করেন কুতুবদিয়ায় আসবে, সেটা আমরা শিপ টু শিপ করে আমাদের সাইটে নিয়ে আসতে পারব। আমাদের সিটি এলপিজি এখনো অপারেশনাল না। ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরোপুরি অপারেশনাল হবে। 

বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে এলপিজি নিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ভোক্তা বা গ্রাহক আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এলপিজি কিনবে প্রথমত, গ্রাহক বা ভোক্তা আস্থা বিবেচনায়। এ কোম্পানির সিলিন্ডারে মাপে কম গ্যাস পাব না—কনজিউমারের এ আত্মবিশ্বাস থাকে। আমরা কখনো মাপে কম দেব না। আরেকটি হলো সেবা বা সার্ভিস। গ্রাহক যখন চাইবে তখনই পাবে। এ দুটিই অন্যদের সঙ্গে আমাদের মূল পার্থক্য। চ্যালেঞ্জ যেটা সেটা হলো এ বিজনেস। কর্তৃপক্ষের এটা চিন্তা করা উচিত যে একটি সিলিন্ডার তৈরি করতে ২ হাজার ৮০০ বা ২ হাজার ৯০০ টাকা খরচ হয়। এ সিলিন্ডার বাজারে দিচ্ছি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। তার মানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা ভর্তুকি দেয়া লাগছে। এ টাকাটা কীভাবে ওঠাবেন। এটা একটি ব্যাড কম্পিটিশন। যারা শক্তিশালী এবং যাদের অনেক বেশি সিলিন্ডার বাজারে আছে, তারা কাস্টমারকে বলছে ২ হাজার ৮০০ টাকার সিলিন্ডার কেনার দরকার নেই, আমাকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়েন। এ পরিস্থিতিতে নতুন হিসেবে আমার সিলিন্ডার কেউ নেবে না। কারণ সে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছে। ২ হাজার ৮০০ বা ২ হাজার ৯০০ টাকায় আমার সিলিন্ডার কেউ কিনবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমাকেও ১ হাজার ১০০ টাকায় সিলিন্ডার বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুনদের এটা একটা প্রতিবন্ধকতা। তাই আমি বলছি যে এখানে যারা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আছে, তাদের বলা উচিত যে কোম্পানিগুলো কস্টিংয়ের নিচে সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে না। 

সক্ষমতার বিচারে এলপিজিতে আমাদের স্টোরেজ যেটা আমরা করেছি সেটা হলো গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের স্টোরেজ। নির্দিষ্ট একটি লোকেশনে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার টনের স্টোরেজই হাইয়েস্ট। আমাদের তিন-চারটি প্লান্ট আলাদা আলাদা লোকেশনে আছে। কিন্তু সিঙ্গেল লোকেশনে ৯ হাজার টন হলো হাইয়েস্ট স্টোরেজ ক্যাপাসিটি। ফিলিং ক্যাপাসিটি বা মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব আমরা ইউরোপিয়ান নিয়েছি। সেফটির দিক থেকেও আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করি। স্টোরেজের দিক দিয়ে এটাকে সবচেয়ে বড় বলা যায়, আবার সেফটির দিক দিয়ে আমরা ওয়ার্ল্ড হাইয়েস্ট। 

এলপিজিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন কারখানায় যাবে ৭০০-৮০০ কোটি টাকা। আগেরটায় ৩৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আমরা শুধু বেঙ্গলের কাছে সিলিন্ডার বিক্রি করছি। যারা অনেক আগে থেকে বাজারে আছে তাদের মার্কেটে সিলিন্ডারের সংখ্যা ৩০-৪০ লাখের মতো। আমরা তিন-চার লাখের মধ্যে আছি। আমরা এ বছর শেষে সিটি এলপিজি বাজারে আনব। দেশকে দাঁড়াতে হলে অর্থনীতিকে এগিয়ে যেতে হবে। যত বেশি শিল্পায়ন হবে এলপিজির চাহিদা তত বাড়বে। 

সিলিন্ডারে অনেকগুলো সেফটির বিষয় থাকে। কোনো কারণে সিলিন্ডার ব্লাস্ট হলে নিচের দিক এবং ওপরের দিক কখনো ছুটে না। মাঝ বরাবর ব্লাস্ট হয়। তাই সেফটির দিক থেকে সেটা থাকে। ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ফিলিং স্টেশন বা আমাদের অঞ্চলভিত্তিক ফিলিং স্টেশন থাকবে। আমরা এরই মধ্যে কিছু এলাকা নির্ধারণ করছি। সরবরাহ করার জন্য কিছু স্যাটেলাইট স্টেশন দরকার, কনজিউমার যেন সিলিন্ডার চাইলে আজকেই পেতে পারে। সেজন্য বগুড়া, সিলেট, চিটাগং ইত্যাদি জায়গায় স্টেশন হবে। তাই এ স্যাটেলাইট স্টেশনগুলো থেকে স্থানীয় এলাকাগুলোয় সরবরাহ করা যাবে। 

গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন এক বছর বা দুই বছরের প্রজেক্ট না। এটা সময় নেয়। সার্ভে যেটা করে, সেটা করলে তারা পূর্বাভাস দিতে পারত যে কত গ্যাস স্টোর থাকতে পারে বা এটা এক্সপ্লোর করলে কত বছর চলতে পারে। আমার মনে হয় ব্যাংক খাত থেকে বড় সহায়তা দরকার। কারণ আমাদের অনেক আমদানি করতে হয়। আমাদের মাদার ভেসেল আনতে গেলে ২৫-৩০ মিলিয়ন ডলার সাপোর্ট দরকার। ব্যাংকিং সেক্টর যদি এগুলোয় এগিয়ে আসে, তাহলে ভালো দিকে যাবে। এছাড়া সরকার যদি আরো সুবিধা দেয়, তাহলে দিন দিন এটা আরো ভালো হবে। আমাদের যে রেগুলেটর আছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ওনাদের কিছু মানদণ্ড আছে, সে অনুযায়ী আমাদের সব লাইসেন্স দরকার হয়। তারা সাপোর্ট করে, কিন্তু লোকবল কম। সিলিন্ডারের লাইফটাইম ১৫ বছর, এর পিরিয়ডিক্যালি রিনোভেশন করতে হয়। আমরা এটার জন্য অথরিটির ওপর নির্ভর করি না, কারণ এটা আমাদের সুনামের প্রশ্ন। আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান সবসময় বলেছেন যে কোয়ালিটি বা সেফটির দিক থেকে কখনো কম্প্রোমাইজ করার সুযোগ নেই এবং আমি গর্ব করে এবং বিশ্বাসের সঙ্গে বলব যে আমরা করিও না।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫