স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কারে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি প্রস্তাব উত্থাপন

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধানে ১১, ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রশাসনের সব স্তরে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময়ের সংশোধনসহ মূলত ২০০৯ সালে প্রণীত স্ব স্ব আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে থাকে। দেশের বিদ্যমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের উদ্দেশ্যে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের অভিজ্ঞতা ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার সংস্কারের উদ্দেশ্যে সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন ড. মোবাশ্বের মোনেম। সুপারিশ অনুযায়ী, স্বল্পমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টার ভূমিকা সম্বলিত বিধান বাতিল করা; আইন অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভূমিকা ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন কার্যকর করা; উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যানদের ভূমিকা, দায়-দায়িত্বের বিভাজন সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর করা; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব সুস্পষ্ট করা: স্থানীয় সরকারের মডেল ট্যাক্স শিডিউল হালনাগাদ করা; বৈষম্য সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বিবেচনায় নয়, স্থানীয় সরকারের সব স্তরের জন্য সরকারি বরাদ্দ নির্দিষ্ট ফর্মুলাভিত্তিক করা; প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সমন্বয়ের সুবিধার্থে কাছাকাছি সময়ে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়র বা চেয়ারম্যানদের তাদের আওতাধীন এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কার্যক্রম তদারকি, মনিটরিং এবং তাদের বাৎসরিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) লেখার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করা; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো কার্যকর করতে রাজস্ব খাতে বরাদ্দ রাখা এবং কমিটিগুলোতে অধিকসংখ্যক নাগরিক প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও (ওয়ার্ড সভা, উন্মুক্ত বাজেট ইত্যাদি) জনঅংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা; স্থানীয় সরকার নির্বাচন পূর্বের মতো নির্দলীয় ভিত্তিতে আয়োজন করা।

সুপারিশে মধ্যমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকারের সব আইনের মধ্যে যেসব ওভারল্যাপিং ও অস্পষ্টতা আছে তা চিহ্নিত করে, দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে রাষ্ট্রের সেবামূলক কার্যক্রমগুলো (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি) ন্যস্ত করার বিধান পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করা; স্থানীয় সরকারের সব স্তরে এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারী প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচনের বিধান করা; জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে রূপান্তর করা। জেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন ডেপুটি কমিশনার বা জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা; ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বে জাতীয় কর নীতির আলোকে জেলা পর্যায়ে কর পর্যালোচনা ও সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর সংগ্রহের কাজ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা; জেলা পরিষদকে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমের মূলকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং বড় প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে তাদের প্রকল্পের আকার নির্দিষ্ট করে দেয়া। জেলা পরিষদকে বাণিজ্যিক প্রকল্প গ্রহণের যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করা; ওয়েবভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং মনিটরিং ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর করা; অবিলম্বে স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন ও কার্যকর করা; জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ফলপ্রসু করার উদ্দেশ্যে এনআইএলজিকে বিকেন্দ্রীভূত করা এবং প্রেষণে নিয়োগ না দিয়ে বিশেষায়িত জনবল নিয়োগ ও তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা; জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকারের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। স্থানীয় সরকারের জন্য সম্পদ আহরণের নতুন উৎস অনুসন্ধান এবং বরাদ্দ অর্থ স্থানান্তরের একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় সম্পদ আহরণ ও বাজেটের যথাযথ ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য ম্যাচিং গ্রান্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা; স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি নিবেদিত গবেষণা, ডকুমেন্টেশন ও নীতি তথ্য ভান্ডার স্থাপন করা।

গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী’র স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশে একশ বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকারের কাঠামো চালু থাকলেও এখনো আমরা একে শক্তিশালী করে তুলতে পারিনি। আইনে অনেক কিছু থাকলেও আমরা সেসব কার্যকর করতে পারিনি। এ ব্যাপারে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দৃঢ় হতে হবে।’

জাতীয় সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ। এছাড়া সম্মানীয় অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও লীড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন তালেয়া রেহমান, এনআরডিএসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল, কেয়ার বাংলাদেশের থ্রিভ এক্টিভিটির চিফ অব পার্টি আমানুর রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর জিয়াউল করিম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজার অমিত রঞ্জন দে, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মুনিরা শারমিন প্রমুখ। এছাড়াও প্রাক্তন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যুব ও নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন। সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫