রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান

যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানাব

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যেন নির্বাচন দেয়া যায়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনি সব ধরনের সহায়তা দেবেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সোমবার নিজ কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎকার দেন। তার সাক্ষাৎকারটি গতকাল প্রকাশ করে রয়টার্স। সেনাপ্রধান বলেন, ‘যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, আমি তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে দাঁড়াব, যেন তিনি নিজের মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ড. ইউনূস। সেনাপ্রধান মনে করেন, এসব সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা উচিত। তবে সে ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। 

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে আমি বলব, এ সময়সীমার মধ্যেই আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়ার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—উভয় দলই তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়ার পক্ষে নই। কিন্তু আমি মনে করি, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, ততই মঙ্গল। আমরা নির্বাচনের জন্য তৈরি আছি। এমনকি সেটা আগামীকাল হলেও আমরা প্রস্তুত আছি।’

সেনাপ্রধান জানান, তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অস্থির সময়ের পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সেনাবাহিনী সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে গত জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে তা রূপ নেয় সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানে। এ আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়।

একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায়। এরপর ১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার অভ্যুত্থান ঘটায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়। এ সরকার দুই বছর দেশ চালায়। পরে হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, তার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না, যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।’

সেনাপ্রধান বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সংগতি রেখে সেনাবাহিনীও নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। এরই মধ্যে কিছু সেনাসদস্যকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, ‘যদি কোনো কর্মরত সেনাসদস্য দোষী সাব্যস্ত হন, আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোয় কাজ করার সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে কিছু করে থাকতে পারেন।’

সেনাপ্রধান মনে করেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়।’ একজন সৈনিকের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫