আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল স্বর্ণের দাম। আগের দিন ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছার পর গতকাল স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬২৫ ডলার ৫২ সেন্টে। অন্যদিকে ফিউচার মার্কেটে দশমিক ১ শতাংশ দাম কমে ২ হাজার ৬৫০ ডলার ৩০ সেন্টে নেমে যায়। এর আগে গত সোমবার ২ হাজার ৬৩৫ ডলার ২৯ সেন্টে পৌঁছেছিল মূল্যবান ধাতুটির দাম। খবর বিজনেস টাইমস।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) কর্মকর্তারা গত সোমবার আগামী বছর নাগাদ আরো সুদহার কর্তনের কথা জানিয়েছেন। তাদের মন্তব্যের পরই ঊর্ধ্বমুখী হয় স্বর্ণের বাজার। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পর গত বুধবার ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমিয়েছে ফেড।
শিকাগোর ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অস্টান গুলসবি বলেন, ‘আমি আশা করছি, পরবর্তী বছরগুলোয় সুদহার আরো কমানো হবে। কারণ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে সুদহার কমানোর চেষ্টা করছে, যাতে শ্রম বাজারকে বিপর্যস্ত না করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।’
গত সোমবার আটলান্টা ফেডের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল বোস্টিক ও মিনিয়াপোলিস ফেডের প্রেসিডেন্ট নিল কাশকারিও সম্প্রতি বড় আকারের সুদহার পরিবর্তনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
এদিকে শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জের (সিএমই) বাজার প্রত্যাশা পর্যবেক্ষণকারী টুল সিএমই ফেডওয়াচের তথ্যানুযায়ী, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৭৫ বেসিস পর্যন্ত সুদহার কমানোর সম্ভাবনা দেখছেন।
সাধারণত ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও সুদহার কম থাকলে তুলনামূলক স্বর্ণে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা তাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে চান। স্বর্ণ ঐতিহ্যগতভাবে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ বলে বিবেচিত। ফলে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা বা ভূরাজনৈতিক চাপ থাকলে এর চাহিদা বেড়ে যায়।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের জরিপে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ইউরোজোনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলতি মাসে তীব্রভাবে সংকুচিত হয়েছে। কারণ অঞ্চলটির উৎপাদন খাতে মন্দা ত্বরান্বিত হয়েছে। একই সঙ্গে পরিষেবা খাত স্থবির হয়ে পড়েছে।
ফেডের সুদহার কর্তন ও মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে স্বর্ণের বাজার। এ ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার ২ হাজার ৬০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে মূল্যবান ধাতুটির দাম। এ নিয়ে চলতি বছর স্বর্ণের দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছে, বার্ষিক বৃদ্ধির হিসাবে যা ২০১০ সালের পর সর্বোচ্চ। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এ অবস্থায় ‘সেফ হ্যাভেন’খ্যাত স্বর্ণের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
তবে স্বর্ণের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেশি দিন স্থায়ী নাও হতে পারে বলে জানিয়েছে জার্মানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কমার্জব্যাংক। এর কারণ তুলে ধরে ব্যাংকটি বলছে, ‘ফেডের পরবর্তী দুটি বৈঠকে মাত্র ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে।’
তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন স্বর্ণের দাম আরো বাড়তে পারে।