সড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ

আশুলিয়া ও গাজীপুরে বন্ধ অর্ধশতাধিক কারখানা

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের শ্রম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় গত মাসজুড়েই কম-বেশি শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছিল। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গতকাল আশুলিয়া, গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে অর্ধশতাধিক কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়।

বণিক বার্তার সাভার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় গতকাল সকাল ৯টার দিকে বকেয়া বেতন দাবিতে অন্তত নয়টি কারখানার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ অবস্থায় কারখানাগুলোয় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়ায় প্রায় ৫২টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৪৩টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হা-মীম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান, অনন্ত গ্রুপ, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, এ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানের কারখানাও। 

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ৫২টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ৪৩টি পোশাক কারখানা। বাকিগুলো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।’

এদিকে বণিক বার্তার গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল দিনভর শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল থাকায় ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে গাজীপুরের সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে আটক করা হয় ছয়জনকে।

জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টার পর থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায় সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড নামের কারখানার শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা ১২ দফা দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কারখানার অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেন তারা। পরে বেলা সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ এসব দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা দুপুর ১২টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে যান। 

অন্যদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় একটি খাদ্য তৈরির কারখানায় বিক্ষোভের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করে সেনাবাহিনী। গতকাল সকালে কোকোলা ফুড প্রডাক্ট লিমিটেড কারখানা এলাকায় বিক্ষোভের সময় তাদের আটক করা হয়। এর আগে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ করেন। 

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনের মুখে সোমবার ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানা ও ১২টি পোশাক কারখানা। খাদ্য উৎপাদন কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলো একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমস্যা কিন্তু শুধু শ্রমিকদের আছে এমন নয়, সমস্যা মালিকদেরও আছে। টঙ্গীতে যেটা হলো দেড়-দুই মাসের বেতনের জন্য আন্দোলন হয়েছে। শ্রমিকদের বারবারই বেতন  দেবে বলে মালিক পক্ষ আশ্বস্ত করেছে, কিন্তু দেয়নি।’ 

এদিকে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে গতকাল বিকাল থেকে জরুরি মতবিনিময় সভা করেছেন তৈরি পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সদস্যরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক পক্ষের ১৮ দাবির মধ্যে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে মজুরি পুনর্নির্ধারণ ও বার্ষিক ন্যূনতম ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের (বেতন বৃদ্ধি) দাবি ছিল। তবে এ দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মালিক পক্ষ। কারণ হিসেবে তারা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পের অক্ষমতা এবং উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন।

বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের যৌক্তিক যে দাবিগুলো আছে সেগুলো মানা হবে। তবে কারখানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে না পারলে আমরা বিজিএমইএর সব সদস্য সম্মিলিতভাবে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫