গাজীপুরের কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও টঙ্গী এলাকার কয়েকটি কারখানায় আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করেছে। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করলে দুই মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
শ্রমিকরা উভয় মহাসড়ক প্রায় আধঘণ্টা অবরোধ করে রাখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় পুলিশ ও সোনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে অন্তত ৬ জনকে আটক করে। এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার পৃথক এলাকায় ৩টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আটককৃতরা হলেন- খোকন মিয়া, সোহাগ মিয়া, নাজমুল মিয়া, উজ্জল হোসেন, শাকিল আহাম্মেদ ও মোবারক হোসেন । তবে তাৎক্ষণিকভাবে আটককৃতদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার এলাকার মাহমুদ ডেনিম, বক্তারপুর এলাকার ইকু নিট ও কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে কাজে যোগদান করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকরা হঠাৎ করে মজুরি ন্যূনতম সাড়ে ১২ হাজার টাকা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা, সাধারণ ও বাৎসরিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধে করে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পরও ফের আজ সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে এবং বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে কিছু উশৃঙ্খল শ্রমিক কারখানা বন্ধ থাকার পরও কারখানার ভেতরে জোড়পূর্বক প্রবেশ করে ভাংচুর করার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এ সময় কারখানার ভেতর অবৈধভাবে প্রবেশ করা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৩ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের কারখানা এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
কারখানার শ্রমিক আব্বাস উদ্দিন বলেন, তাদের কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করে। তাদের সর্বনিম্ন বেতন দেয়া হয় ৮ হাজার টাকা। এই টাকায় ঘরভাড়া আর খাওয়াদাওয়া করে জীবনযাপন করা অসম্ভব। তাই অনেক দিন ধরেই সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শ্রমিকদের কথাও শুনতে চায়নি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, কারখানা বন্ধ ঘোষণার পরও কিছু উশৃঙ্খল শ্রমিক কারখানার ভেতরে জোড়পূর্বক প্রবেশ করায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েকজনকে আটক করেছে। শ্রমিকরা কিছু সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকায় বিক্ষোভ করছেন সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা।
এছাড়া বাঘের বাজার গোল্ডেন রিপিট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করছেন।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে ওই কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কারখানার অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরে বেলা সাড়ে ৯টার দিকে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে।
জানা যায়, সোমবার সকালে শ্রমিকরা ১২ দফা জানিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ৮টি দাবি মেনে নেয়। ১২টি দাবি থেকে ৮টি দাবি মেনে নিলেও বাকি চারটি দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানিয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বাঘের বাজার জোনের পরিদর্শক সুমন মিয়া জানান, সকাল থেকে শ্রমিকরা মহাসড়কে আন্দোলন করছেন। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ জানান, কালিয়াকৈর থেকে সেনাবাহিনী ৪ জনকে আটক করেছেন বলে জানতে পেরেছি। আরো আটক থাকতে পারে । তারা অন্যান্য জায়গায়ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী শ্রমিকদের ধরার চেষ্টা করছে।