আলোকপাত

বাংলাদেশের উন্নয়নে ‘বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেল’ অনুসরণে বাধা কোথায়

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪

ড. মইনুল ইসলাম

৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে উৎখাতকারী ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে অভিহিত করে। সব ধরনের বৈষম্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আয়বৈষম্য। অতএব তারা ‘আয়বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেল’ বাস্তবায়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশের চারটি রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র ফেরত এসেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০১০ সালের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে। ২০১১ সালে সংসদে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীতে সেটাকে সংবিধানে আবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর যে প্রাথমিক ফলাফল পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়, তাতে বাংলাদেশের জনগণের আয়বৈষম্য পরিমাপক জিনি সহগের মান নির্ধারিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৯৯। অতএব ২০২৪ সালে এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে বাংলাদেশ একটি ‘উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে’ পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে এসে সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণকারী একটি দেশ উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে পরিণত হওয়ার মানে হলো, দেশটি হাইজ্যাক হয়ে শ্রমজীবী জনগণের মালিকানার দেশ থেকে সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের করায়ত্ত ‘শোষকের দেশে’ পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘মুক্তির সংগ্রামের’ মাধ্যমে জন্ম নেয়া বাংলাদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে শ্রমজীবী জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল নির্ধারিত ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ ক্যাটাগরি থেকে ‘উন্নয়নশীল দেশের’ ক্যাটাগরিতে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং ওই প্রক্রিয়ার সফল পরিসমাপ্তির পর ২০২৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশ ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ’ ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। ২০২০-২২ পর্বে করোনাভাইরাস মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেলেও তা ৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। ২০২০ সালে আইএমএফ ঘোষণা করেছে যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি হয়ে গেছে। অতএব এটা অনস্বীকার্য, জিডিপি ও জিএনআই প্রবৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক দুই দশক ধরে জানান দিয়ে চলেছে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনুন্নয়ন ও পরনির্ভরতার ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে যাত্রা করেছে।

কিন্তু মাথাপিছু জিডিপি যেহেতু একটি গড় সূচক তাই মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যদি দেশে আয়বৈষম্যও বাড়তে থাকে তাহলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছে পুঞ্জীভূত হওয়ার প্রবণতা ক্রমে শক্তিশালী হতে থাকে, যার ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। আয়বৈষম্য বৃদ্ধির এ মহাবিপদ এ দেশের ১৯৭৫-পরবর্তী শাসক মহল তাদের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক দর্শন ও উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে ডেকে এনেছে। দুঃখজনকভাবে আশির দশক থেকেই এ দেশে আয় ও সম্পদবৈষম্য বাড়তে বাড়তে এখন বাংলাদেশ একটি ‘উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে’ পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পরিমাপ করার জন্য নানা পরিমাপক ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে লরেঞ্জ কার্ভ এবং জিনি সহগ অন্যতম। কোনো অর্থনীতির জিনি সহগ যখন দ্রুত বাড়তে থাকে এবং শূন্য দশমিক ৫-এর কাছাকাছি পৌঁছে যায় বা শূন্য দশমিক ৫ অতিক্রম করে তখন নীতিনির্ধারকদের বোঝার কথা যে আয়বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে মোতাবেক বাংলাদেশের জিনি সহগ নির্ধারিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৯৯, যা ১৯৭৩ সালে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩৬। আরেকটি পরিমাপকের গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে ২০১০ ও ২০১৬ সালের মধ্যে আয়বৈষম্য বিপজ্জনকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে এবং ৫-১০ শতাংশ ধনাঢ্য গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি ফুটে উঠেছে: ২০১০ সালে দরিদ্রতম ৫ শতাংশ জনসংখ্যার মোট আয় ছিল মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে মাত্র শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। ২০১০ সালে দরিদ্রতম ১০ শতাংশ জনসংখ্যার মোট আয় ছিল মোট জিডিপির ২ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা মাত্র ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। সমস্যার আরেক পিঠে দেখা যাচ্ছে, দেশের ধনাঢ্য ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দখলে ২০১০ সালে ছিল মোট জিডিপির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে বেড়ে ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। আরো দুঃখজনক হলো জনগণের সবচেয়ে ধনাঢ্য ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দখলে ২০১৬ সালে চলে গিয়েছিল মোট জিডিপির ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’-এর প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মোতাবেক ২০১২ থেকে ২০১৭—এ পাঁচ বছরে অতিধনী বা ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলে সারা বিশ্বে এক নম্বর স্থানটি দখল করেছিল বাংলাদেশ। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ধনকুবেরের সংখ্যা ছিল ২৫৫ জন। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ডলারের (প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা) বেশি নিট সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিদের ‘আল্ট্রা-হাই নেট-ওয়ার্থ’ (ইউএইচএনডব্লিউ) ইনডিভিজুয়াল হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।

আশির দশকে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ‘কাঠামোগত বিন্যাস কর্মসূচি’ ‘নিউ লিবারেল’ নীতিমালা সংস্কারের ধারাবাহিকতাকে জোরদার করার জন্যই পরিচালিত হয়েছিল। আমদানি উদারীকরণ, বিরাষ্ট্রীয়করণ, ব্যক্তি খাতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস ও অর্থনীতিতে সরকারি ভূমিকার সংকোচন এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ তাদের প্রেসক্রিপশনগুলোর মূল ফোকাস ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সরকার পালাক্রমে এ দেশে গত ৩৩ বছরের মধ্যে ৩১ বছর সরকারে আসীন থাকলেও দেশে আয়বৈষম্য নিরসনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে নাম-কা-ওয়াস্তে সমাজতন্ত্রকে সংবিধানে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হলেও গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে নীরবতা পালনকেই নিরাপদ মনে করত।

সাধারণ জনগণের কাছে বোধগম্য যেসব বিষয় আয়বৈষম্য বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছানোর জানান দিচ্ছে সেগুলো হলো: এক. দেশে প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে ১১ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেখানে মাতা-পিতার বিত্তের নিক্তিতে সন্তানের স্কুলের এবং শিক্ষার মানে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে; দুই. দেশে চার ধরনের মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে; তিন. দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুরোপুরি বাজারীকরণ হয়ে গেছে; চার. ব্যাংকের ঋণ সমাজের একটা ক্ষুদ্র অংশের কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে এবং ঋণখেলাপি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে; পাঁচ. দেশের জায়গা-জমি, অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট, ফ্ল্যাট অর্থাৎ রিয়াল এস্টেটের দাম প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে; ছয়. বিদেশে পুঁজি পাচার মারাত্মকভাবে বাড়ছে; সাত. ঢাকা নগরীতে জনসংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছে গেছে, যেখানে আবার ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিবাসী; আট. দেশে গাড়ি, বিশেষত বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে; নয়. বিদেশে বাড়িঘর, ব্যবসাপাতি কেনার হিড়িক পড়েছে; দশ. ধনাঢ্য পরিবারগুলোর বিদেশ ভ্রমণ বাড়ছে; এগারো. উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রবাহ বাড়ছে; বারো. উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য ঘন ঘন বিদেশে যাওয়া বাড়ছে; তেরো. প্রাইভেট হাসপাতাল ও বিলাসবহুল ক্লিনিক দ্রুত বাড়ছে; চৌদ্দ. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার হিড়িক পড়েছে; পনেরো. দেশে ইংলিশ মিডিয়াম কিন্ডারগার্টেন, ক্যাডেট স্কুল, পাবলিক স্কুল এবং ও লেভেল/এ লেভেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মহোৎসব চলছে। আবার অন্যদিকে দরিদ্র জনগণের সন্তানদের জন্য মাদ্রাসা গড়ে তোলার হিড়িক চলছে; ষোলো. প্রধানত প্রাইভেট কারের কারণে সৃষ্ট ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্রাফিক জ্যাম নাগরিক জীবনকে বিপর্যস্ত করছে এবং সতেরো দেশে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি বেড়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে পদে পদে। দুর্নীতিলব্ধ অর্থের সিংহভাগ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচের জনসংখ্যার হার ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ পাওয়া গিয়েছিল, ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে তা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার নিচের জনসংখ্যার এ ক্রমহ্রাসমান হার প্রশংসনীয় হলেও আয়বৈষম্য বৃদ্ধিকে অশনিসংকেত বিবেচনা করতেই হবে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি স্তিমিত হয়ে গেছে। এর মানে আয়বৈষম্য না বাড়লে হয়তো দারিদ্র্য নিরসন আরো জোরদার হতো! কিন্তু হাসিনার সরকার শুধু মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়েই মাতামাতি করত। আয়বৈষম্য বাড়তে থাকলে শুধু মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে প্রান্তিক অবস্থানের শ্রমজীবী জনগণের দারিদ্র্য নিরসন করা যায় না। উচ্চ ও ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে, তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল যতখানি পাওয়ার কথা অতখানি পাচ্ছে না। সুতরাং আয়বৈষম্যের ব্যাপারে হাসিনা সরকারের দুঃখজনক অমনোযোগ আমার কাছে বরাবরই অগ্রহণযোগ্য ছিল। বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে প্রয়োজন ‘বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেল’। এ মডেলের মূল কথা হলো আয়বৈষম্য নিরসনকারী অবস্থান গ্রহণ করলে কোনো দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে যে ধারণা সাইমন কুজনেৎস অর্থনৈতিক উন্নয়নতত্ত্বে চালু করেছিলেন সেটা একটা ‘ভুয়া ধারণা’। পুঁজিবাদের পক্ষে তার অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে কুজনেৎস ওই তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন, যেখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন দেশ ও সেগুলোর উন্নয়নপথের সময়কালকে সুপরিকল্পিতভাবে বাছাই করেছিলেন তিনি। ওই তত্ত্ব মানবজাতির বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করেছে। গত ছয় দশকের অনেকগুলো আলোড়ন সৃষ্টিকারী গবেষণা ওই তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করেছে, যার মধ্যে বাঙালি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জির গবেষণাপ্রাপ্ত ফলাফলও অন্যতম। এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে যেসব দেশ আয়বৈষম্য বাড়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে, বৈষম্য নিরসনে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে, জনগণের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার প্রদান করে, বৈষম্যবিরোধী অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে সেসব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমার পরিবর্তে বেড়ে যাচ্ছে। চীন, ভিয়েতনাম, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এ ‘বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেলের’ সফল কয়েকটি উদাহরণ।

ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫