খাগড়াছড়িতে চলছে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

দুপক্ষের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছে খাগড়াছড়িতে। আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় তিনদিনের এ অবরোধ কর্মসূচি।

এর আগে ঢাকার শাহবাগ থেকে জুম্ম ছাত্র জনতা ৭২ ঘণ্টার এ কর্মসূচির ডাক দেয়। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফপ্রসীত বিকাশ খীসা) গ্রুপ। অবরোধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলাজুড়ে কোনো সংঘর্ষ ও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে অবরোধের কারণে জেলা শহর থেকে দূর পাল্লার কোনো যানবাহন ছাড়েনি, চলাচল করছে না অভ্যন্তরীণ সড়কের যানবাহনও। 

দীঘিনালা উপজেলায়ও পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। স্থানীয় সড়কগুলোতে চলছে না ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাহেন্দ্রসহ কোনো ধরনে গাড়িঘোড়াই, বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। একই অবস্থা পানছড়ি সড়কেরও। তবে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে তিন চাকাসহ হালকা পরিবহন চললেও তা সীমিত আকারে।

খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের কয়েকটি স্থানে অবরোধের সমর্থনে পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। অবরোধের প্রথম দিন সাজেকগামী অনেক পর্যটক আসলেও তারা জেলা শহরে আটকা পড়েন। দীর্ঘক্ষণ গাড়ির অপেক্ষায় থেকে গন্তব্যে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন তারা। পর্যটকরা বলছেন, অবরোধের কথা তারা জানতেন না। তাছাড়া অনেকে সাজেকে হোটেল-রিসোর্টে রুম বুকিং করে রেখেছিলেন আগেই।

পাহাড়ের শান্তি ধরে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে সম্প্রীতি কমিটি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বস্তি ফেরাতে কাজ করছেন।

এদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা শেষ হয়েছে গতকাল রাত ৯টায়।

এর আগে দীঘিনালায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয়ের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘিরে উত্তেজনা ছড়ালে লারমা স্কোয়ার বাজারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে পাহাড়ি-বাঙালির শতাধিক দোকান পুড়ে যায়। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ আহত হন ৫ জন।

পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নেমে রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে নিয়ে আসে। কিন্তু এ সংঘর্ষ ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি ও বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এর জেরে জেলা সদরের খবংপুড়িয়া, নারানখাইয়াসহ বিভিন্নস্থানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, ঘটে গোলাগুলির ঘটনাও।

এসব ঘটনায় কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ বিভিন্নভাবে আহত হন। তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে জুনান চাকমাসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। বাকি আহতদের মধ্যে ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে চট্টগ্রামে মেডিকেলে পাঠানো হয়। অপর নয় জন খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত বুধবার রাতে জেলা শহরের নিউজিল্যান্ড এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মামুন নামে এক যুবক নিহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে হত্যা উল্লেখ করে এর প্রতিবাদে দীঘিনালায় পরদিন বৃহস্পতিবার সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে দুর্বৃত্তরা সেখানে হামলা করে। সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে সেখান থেকেই। সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও কথা বলছেন না কেউই। 

ঘটনার পর থেকে জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ধরে রাখতে প্রশাসন জোর তৎপরতায় মাঠে নেমেছে। 

শুক্রবার দীঘিনালায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ-খবর নেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামানসহ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।

এ সময় জেলা প্রশাসক ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি করে দেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সহায়তার আশ্বাস দেন এবং ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।

সেখান থেকে ফিরে বিকেলে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ মতবিনিময় সভা করেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নাগরিক-সামাজিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সভা থেকে পাহাড়ি বাঙালিদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিসহ শহর কেন্দ্রিক সভা সমাবেশ নিষিদ্ধের কথা উঠে আসে। এছাড়া ইউপিডিএফের সামরিক ক্যাম্প এবং তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়। সহিংসতা ছড়ানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজবকে দায়ী করে দোষীদের চিহ্নিত করে নজরদারিতে রাখতে বলা হয়। 

অন্যদিকে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালায়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। দুপুরে রাঙ্গামাটিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে দলটি। বিকেলে খাগড়াছড়িতে মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন উপদেষ্টারা। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫