খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষ নিহত চার, ১৪৪ ধারা জারি

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I রাঙ্গামাটি

এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি। পার্বত্য এ দুই জেলায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। একজন মারা গেছে রাঙ্গামাটিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই জেলা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। 

এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, পাহাড়ে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। এজন্য শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাহাড়ে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেও। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আজ খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে যাচ্ছে। 

সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে বুধবার। ওইদিন সকালে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়ায় মামুন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যুর প্রতিবাদে পরের দিন বিকালে দীঘিনালা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাঙালিরা। ওই মিছিলে পাহাড়িরা বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একপর্যায়ে পাহাড়িদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঙালিদের বিভিন্ন স্থাপনাও। 

দীঘিনালায় সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবার রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সদরসহ পুরো জেলায় তৈরি হয় আতঙ্ক। বিকাল ও রাতের ঘটনায় তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন। নিহতরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় গতকাল ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। 

খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের প্রতিবাদে গতকাল সকালে রাঙ্গামাটি শহরে মিছিল বের করেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। মিছিলের এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় পাহাড়ি ও বাঙালিরা। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিল থেকে বনরূপা বাজারের মসজিদে ইটপাটকেল ছোড়ার কারণে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পাহাড়িরা পিছু হটে ও বাঙালিরা এগিয়ে যায়। এ সময় বাঙালিদের জমায়েত থেকে পাহাড়িদের মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাঙালিদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের ৫৮ জন রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। 

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শওকত আকবর গতকাল সন্ধ্যায় জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় হাসপাতালে ৫৮ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়। ভর্তি আছেন ১৯ জন। নিহত হয়েছেন একজন। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পার্বত্য উপদেষ্টা রাঙ্গামাটি আসবেন।’

এদিকে দীঘিনালায় হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র-জনতা। ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা’ ব্যানারে দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫