প্রকৃতিবিরুদ্ধ খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় বৈশ্বিক জিডিপির আড়াই শতাংশ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে এমন অনেক ব্যবসা সরকারি পর্যায়ে ভর্তুকি পায়। বাবদ বছর খরচ হচ্ছে প্রায় দশমিক ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক জিডিপির আড়াই শতাংশ। পরিবেশবাদী সংগঠন আর্থ ট্র্যাকের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরাসরি পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে এমন ব্যবসায় কর মওকুফ, ভর্তুকি অন্যান্য সহায়তা দিতে অর্থ ব্যবহার হচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ২০২২ সালে কুনমিং-মন্ট্রিল চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। চুক্তি দুটির আওতায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বন উজাড়, পানি দূষণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে অব্যাহতভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বড় আকারের নৌযানের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত মাছ শিকার পেট্রল কেনাবেচায় ভর্তুকি প্রদান, কৃত্রিম সার ব্যবহার একই জমিতে একই ফসল বারবার চাষে সহায়ক নীতি গ্রহণের অভিযোগও আনা হয়েছে প্রতিবেদনে।

২০২২ সালে একই ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আর্থ ট্র্যাক। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন ভর্তুকির পরিমাণ সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৮০ হাজার কোটি ডলারের বেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে হিসাব করলেও তা ৫০ হাজার কোটি ডলারের কম নয়।

প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী খাতগুলোয় ভর্তুকি বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে ভূরাজনীতিও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে, যা সামগ্রিকভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ভর্তুকি বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

প্যারিস চুক্তি বিষয়ে আলোচনার সময় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের প্রধান ছিলেন ক্রিস্টিয়ানা ফিগুয়েরেস। তিনি হালনাগাদ নীতিমালার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ভর্তুকিগুলো আমাদের অস্তিত্বের জন্য সমস্যা। দেশগুলোর উচিত পরিবেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন নিশ্চিত করা।

বিশ্বের প্রায় সব দেশই ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কোপ ১৫ সম্মেলনে কুনমিং-মন্ট্রিল চুক্তির অংশ হিসেবে এটি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ক্রিস্টিয়ারা ফিগুয়েরেস আরো বলেন, ‘পরিতাপের বিষয় হলো কুনমিং-মন্ট্রিল চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছর হয়ে গেলেও আমরা আমাদের অস্তিত্বকে, আমাদের জনগণকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলতে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছি। এর পরিমাণও পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রকৃতি ধ্বংসের পেছনে প্রায় দশমিক ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেয়া হচ্ছে, যা জলবায়ুসংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণকে ক্রমে দুঃসাধ্য করে তুলছে।

সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলছেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন অর্থায়নের পরিমাণ বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় দশমিক শতাংশের সমান। মানুষ প্রকৃতির উপকারে অর্থ পুনর্ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

তবে গবেষণায় দুর্বল উপাত্ত ব্যবহার করে ফলাফলে পৌঁছানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভর্তুকি বিশেষজ্ঞ ডগ কপ্লো রোনাল্ড স্টিনব্লিক। তারা বলছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে অনেক দেশই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ভর্তুকির পরিমাণ সম্পর্কে অবগত নয়। যদিও তারা ২০২৫ সালের মধ্যে সেগুলো চিহ্নিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমস্যার পরিধি ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে ডগ কপ্লো বলেন, ‘শুধু নগদ অর্থে নয়, বরং সরকার ধরনের সহায়তা বিভিন্ন উপায়ে দেয়। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের উত্তোলন বাড়ানো, প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ক্ষতি দূষণ সৃষ্টি হয়।

দুই বছরেরও কম সময় আগে কপ-১৫ সম্মেলনে দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর অন্তত ৫০ কোটি ডলারের ভর্তুকি প্রকৃতি সুরক্ষায় পুনর্ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রতিবেদনে প্রতিশ্রুতি পালনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

রোনাল্ড স্টিনব্লিক বলেন, ‘ ধরনের সহায়তা যাদের উদ্দেশ্যে দেয়া হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কাছে পৌঁছয় না। নাইজেরিয়াসহ অনেক জায়গায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। নাইজেরিয়ায় সরকার জ্বালানি সহায়তায় শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে বেশি ব্যয় করছিল। ফলে জনগণ একে ভালোভাবে নেয়নি। বরং তাদের একটি বড় অংশ একে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া একমাত্র সুবিধা বলে মনে করে।

ধরনের খাতে ভর্তুকি প্রথাকেদুষ্টচক্র হিসেবে উল্লেখ করেন পরিবেশ বিষয়ে বৈশ্বিক সংস্থা বিজনেস ফর নেচারের সিইও ইভা জাবে। কেননা ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে গেলে তা কমিয়ে আনা কঠিন। তিনি বলেন, ‘ দশকের জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ চুক্তির সফলতার জন্য পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর সহায়তাগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রকৃতির মূল্যায়নকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে। সাধারণত যে ভর্তুকির ওপর যত বেশি মানুষ নির্ভরশীল, তা পরিবর্তনের সম্ভাবনাও তত কম। আমাদের দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫