রফতানিতে এগিয়ে প্রাণের ফ্রুট ড্রিংকস

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমের ভরা মৌসুম থাকে মূলত সব মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই মাস। তাই বলে তো রসালো ফলটির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না ফলপ্রেমীরা। তাই ফলপ্রেমীদের জিবের স্বাদ মেটাতে বাজারে আসে আমের ড্রিংকস ও জুস। বর্তমানে বাজারে যত ধরনের ফলের জুস বা ড্রিংকস রয়েছে, তার মধ্যে আমেরই রাজত্ব ৯০ শতাংশের মতো। শহর থেকে গ্রামে সব জায়গার দোকানগুলোয় মেলে প্রাণের ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংকস ও জুস।

১৯৯২ সালে প্রাণের হাত ধরে প্রথম বোতলজাত ফলের জুসের স্বাদ পায় বাংলাদেশের মানুষ। একটা সময় মানুষ বিশ্বাস করতে পারেনি আমের স্বাদ নেবে কাচের বোতলে। এ কারণে শুরুতে পণ্যটি জনপ্রিয় করতে বেগ পেতে হয়েছে প্রাণ কোম্পানিকে। দোকানদাররাও রাখতে চাইতেন না। দোকানদারকে বোঝাতে হয়েছে আগামী দিনে সারা বছর ফলের স্বাদ পেতে এটিই হবে প্রধান মাধ্যমে। সে সময় জোর করে দোকানে দিয়ে আসতে হয়েছে। পরে মানুষের মাঝেও দ্রুত পরিবর্তন আসতে শুরু করে এবং জনপ্রিয় হতে থাকে আম প্রক্রিয়াজাত হয়ে কাচের বোতলের মাধ্যমে মানুষের হাতে পৌঁছে যাওয়া প্রাণের জুস ও ড্রিংকস।

বর্তমানে সব ধরনের ফলের জুস ও ড্রিংকসের বাজার হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর বড় অংশজুড়ে রয়েছে প্রাণের জুস ও ড্রিংকস। চাহিদা বিবেচনায় প্রাণের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, নরসিংদীর প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে প্রাণের বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট ড্রিংকস ও জুস। আম ছাড়া পেয়ারা, আপেল, কমলা, লেবুসহ বিভিন্ন ফলের জুস ও ড্রিংকস রয়েছে বাজারে। একসময় শুধু কাচের বোতলে জুস বিক্রি হলেও এখন প্লাস্টিকের বোতল ও ট্রেটা প্যাকেও বিক্রি হচ্ছে। 

কারখানা শুরুর গল্প 

প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে নরসিংদী এলাকায় শাকসবজি ও ফলমূলের চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু সেসব বাজারজাত করতে গিয়ে তিনি সমস্যায় পড়েন। কারণ মৌসুমে এত বেশি পণ্য উৎপাদন হয় যে দাম পাওয়া যায় না। এছাড়া সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই তিনি ফল প্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ নেন, বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করেন এবং ১৯৯৩ সালে নরসিংদীর ঘোড়াশালে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতের একটি কারখানা স্থাপন করেন। কারখানায় এ কাজে কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেন এবং সেখানেই কাচের বোতলে প্রাণের আমের জুস প্রথম উৎপাদন শুরু করেন। তখন থেকে প্রাণের হাত থেকে দেশের মানুষ সারা বছর ফ্রুট জুস ও ড্রিংকসের স্বাদ পেয়ে আসছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আমজাদ খান চৌধুরীর হাত ধরেই প্রথম দেশের বাজারে আমের জুস আসে। প্রথম দিকে দোকানদাররাও রাখতে চাইতেন না। তখন আমরা পেপসি-ফান্টার খালি কেসে দু-চারটা করে প্রাণের ম্যাংগো জুস জোর করে দিয়ে আসতাম। এরপর একটি বিজ্ঞাপন বানানো হলো। ভোক্তারা কৌতূহলবশত দু-একবার খেয়ে দেখলেন জিনিসটি মন্দ নয়। এভাবেই ধীরে ধীরে সারা দেশে আমের জুস জনপ্রিয় হয়।’

কারখানায় অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে আমের পাল্প প্রক্রিয়াজাত

আমের জুস ও ড্রিংকস তৈরির জন্য প্রাণ সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় কাঁচামালের ওপর। ক্রেতারা যেন উৎকৃষ্ট মানের ফলের পাল্প থেকে জুস ও ড্রিংকস পেতে পারেন, সেজন্য দেশে আম উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত অঞ্চলে দুটি কারখানা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে একটি রাজশাহীর গোদাগাড়িতে, অন্যটি নাটোরের একডালায়। সারা দেশে প্রাণের কর্মীরা চুক্তিভিত্তিক আমচাষীদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে এ দুটি কারখানায় আনেন। এরপর সেখানে সম্পূর্ণ অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে পাল্প সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়। কারখানায় পাল্প প্রক্রিয়াজাতের জন্য প্রথমে খারাপ বা নষ্ট আম থাকলে সেটি বাদ দেয়া হয়। এরপর কনভেইনার বেল্টে আমকে পরিষ্কার করে কয়েক ধাপে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পাল্পকে অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর সে পাল্পগুলো নেয়া হয় জুস ও ড্রিংকস প্রস্তুতের জন্য অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত কারখানায়।

কারখানায় যেভাবে উৎপাদন হচ্ছে ফলের জুস ও ড্রিংকস

বর্তমানে প্রাণের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জুস ও বেভারেজ কারখানা, নরসিংদীতে প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ তিনটি কারখানায় নিয়মিত প্রাণের ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংকস ও জুস উৎপাদন হচ্ছে। কারখানায় সংরক্ষণ করা পাল্প প্রথমে মেশিনে নেয়া হয়। সেখানে মেশিনে মিশ্রণ তৈরি করে বিশেষ রেসিপি অনুযায়ী চিনি, পানি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি হয় প্রাণের জুস ও ড্রিংকস। এরপর স্বয়ংক্রিয় মেশিনে হাতের কোনো স্পর্শ ছাড়াই বোতলজাত, লেবেলিংসহ পণ্যটি কনভেইনার বেল্টের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। সেখানে থেকে দোকানে পরিবহনের মাধ্যমে পৌঁছে যায় ভোক্তার কাছে।

বর্তমানে প্রাণ কারখানায় ফ্রুট ড্রিংকস ও জুস উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক, যাদের সবাই বাংলাদেশী।

সর্বাধিক দেশে রফতানি হচ্ছে প্রাণের পণ্য

প্রাণ বর্তমানে ১৪৫টি দেশে নিয়মিত পণ্য রফতানি করছে, যার অধিকাংশ দেশেই রফতানি হয় প্রাণের ফ্রুট ড্রিংকস ও জুস। এসবের মধ্যে আবার সর্বাধিক রফতানি হওয়া ড্রিংকস ও জুস হলো ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংকস ও জুস। উল্লেখযোগ্য দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রাণের ফ্রুট ড্রিংকস ও জুস ব্যাপক জনপ্রিয়।

দেশীয় বাজারে সেরা প্রাণ ফ্রুটো

ফ্রুট ড্রিংকস ও জুসের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রাণ। প্রাণ ফ্রুটো দেশের সর্বাধিক বিক্রীত ও জনপ্রিয় ফ্রুট ড্রিংকস ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ড ফোরাম কর্তৃক পর পর আটবার দেশসেরা শীর্ষ ফ্রুট ড্রিংকস ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি লাভ করেছে প্রাণ ফ্রুটো।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫