প্রাণ বেকারি ও বিস্কুট: স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের ভরসা

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সময় বদলেছে। দিনদিন মানুষ স্বাস্থ্যসচেতন হচ্ছে। ফলে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন স্বাস্থ্যকর ও মোড়কজাত পণ্য বেছে নিচ্ছে। এছাড়া নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন পদ। কেউ এখন প্রচলিত নাশতার বাইরে একটু ব্রেড বা চায়ের সঙ্গে বিস্কুটের স্বাদ নিয়ে ঝটপট নাশতা সেরে নিচ্ছে। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট খিদে মেটানোর শ্রেষ্ঠ সমাধান হিসেবে এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিস্কুট ও ব্রেড।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশ বিস্কুট ও ব্রেডের মার্কেট সাইজ বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এফএমসিজির বাজার এখন যেখানে বছরে ১০-১২ শতাংশ হারে বাড়ছে, সেখানে বিস্কুটের বাজার বাড়ছে ১৫-২০ শতাংশ হারে। এছাড়া দেশীয় কোম্পানিগুলো মানসম্মত বাহারি বিস্কুট উৎপাদন করায় আমদানি কমেছে। ধীরে ধীরে ব্র্যান্ডের বিস্কুটের বাজারের অংশীদারত্ব বাড়ছে। বাজারে এখন ব্রেড ও বিস্কুটের ব্র্যান্ডেড কোম্পানির মার্কেট শেয়ার ৫০ শতাংশের বেশি। বাকিটা বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা মেটাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্রেড ও বিস্কুট পণ্যের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রাণ।

২০০৬ সালে ব্রেড ও বিস্কুটের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। কারখানা নির্মাণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিদ্যুৎ, গ্যাস ও দক্ষ শ্রমিকের ব্যবস্থা করা। শুরুতে শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে নরসিংদীর প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিস্কুটের উৎপাদন শুরু হয়। ব্যক্তিগত ও ব্যাংক লোনের মাধ্যমে অর্থের সংস্থান করে কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হয়। পরে আরো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও চাহিদার প্রয়োজনে দেশের আরো কয়েকটি জায়গায় কারখানা তৈরি করা হয়।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে ব্রেড ও বিস্কুট

কারখানায় হাতের স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ যান্ত্রিক উপায়ে এখন প্রাণের বিস্কুট ও ব্রেড উৎপাদন করা হচ্ছে। জার্মান ও তুরস্ক থেকে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের মেশিনের মাধ্যমে প্রাণের ব্রেড ও বিস্কুট শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কারখানাগুলোয় প্রতি মাসে ২২ হাজার টনের অধিক সমপরিমাণ পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কারখানা ও বিপণন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বর্তমানে কাজ করছে প্রায় আট হাজার জনবল। বর্তমানে বিস্ক ক্লাব, পটাটা, ফ্রুট ফান, মিল্কিস, হ্যাটট্রিক, ফিট প্যাকার্স নামে ১০টি ব্র্যান্ডের বিস্কুট বিক্রি করছে প্রাণ গ্রুপ। এছাড়া দেশের জনপ্রিয় বেকারি ব্র্যান্ড অলটাইম এখন ছোট-বড় সবার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।

উন্নত কাঁচামাল ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রাণের ব্রেড ও বিস্কুট তৈরি হওয়ায় এর স্বাদ অতুলনীয়। তাই প্রাণের বেকারি আইটেম এখন ভোক্তার চাহিদার শীর্ষে। এছাড়া বিস্কুটের বাজারেও বড় একটি অংশ দখল করে আছে প্রাণের বিস্কুট ও কুকিজ আইটেম।

প্রাণ পটাটা ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা

প্রাণের উদ্ভাবিত জনপ্রিয় বিস্কুট প্রাণ পটাটা ভোক্তার কাছে অনেকটা নেশার মতো হয়ে উঠেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাশের দেশ ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্যটি এখন সব ভোক্তার কাছে আলোচনার বিষয়। ভারতীয় ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দেশটির অনলাইন সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্ট। ভোক্তাদের ভাষ্য, বিস্কুটটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে হাইপ তৈরি হয়েছে, স্বাদে ও মানে বিস্কুটটি অক্ষরে অক্ষরে সে রকম। বিস্কুটে আলুর স্বাদ মেলে যথেষ্ট। অত্যন্ত পাতলা এ বিস্কুট বাস্তবে বিস্কুট ও চিপসের সমন্বয়। জনপ্রিয় এ বিস্কুট উৎপাদন হচ্ছে প্রাণের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও নরসিংদীর প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে।

বিস্কুটের রফতানি বাজার 

প্রাণের বিস্কুট শতাধিক দেশে রফতানি হয়। রফতানিতে এর প্রবৃদ্ধি ২০-২৫ শতাংশ। ভারত, নেপাল, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে বিস্কুট রফতানি হচ্ছে। তবে ভারত, নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাংলাদেশের তৈরি বিস্কুটের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ছে।

এ খাতের চ্যালেঞ্জ

বিস্কুট নির্মাণের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে গম, যা পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করা হয় আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে। তাই গম আমদানিতে কোনো সমস্যা হলে সম্পূর্ণ খাতেই তার প্রভাব পড়ে। এছাড়া জাহাজ ভাড়াও বেশি হওয়ায় কাঁচামাল আমদানিতে যেমন খরচ অনেক বেড়েছে, তেমনি রফতানি করতেও সমস্যা হচ্ছে। আকার ও দাম বিবেচনায় জাহাজে পণ্য পাঠাতে অনেক ব্যয় হওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিয়োগী ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় পাম তেল ও চিনির দাম বেশি হওয়ায় রফতানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। রফতানি পণ্য হিসেবে অবদান রাখতে এবং পণ্যের মূল্য সাশ্রয়ী রাখার জন্য এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সচেতনতা আশা করে প্রাণ কর্তৃপক্ষ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দেশে গত দুই দশকে বিস্কুটের ব্যবসায় বড় রূপান্তর হয়েছে। সেটি হচ্ছে, মানুষ নন-ব্র্যান্ডের বিস্কুট ছেড়ে ব্র্যান্ডের পণ্যে ঝুঁকেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায় প্রাণ ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী প্রাণ পটাটার মতো আরো নতুন নতুন বিস্কুট ক্রেতার সামনে আনতে চায়।



সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫