দেশের সবচেয়ে পছন্দনীয় ফুড ব্র্যান্ড হওয়ার যাত্রায় ‘ফ্রেশ’

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) খাত গত কয়েক দশকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বাজারে এফএমসিজি পণ্যগুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। খাদ্য ও পানীয় বিভাগে রয়েছে বিস্কুট, দুধ, আইসক্রিম, চা, কফি, কোমলপানীয় ইত্যাদি। সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত যত্ন বিভাগে ব্যবহৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে সুগন্ধি, প্রসাধনী, চুলের তেল ইত্যাদি। সর্বশেষে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে টয়লেট ক্লিনার, রুম এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে, ডিটারজেন্ট, অ্যারোসল ইত্যাদি। দেশে দ্রুতবর্ধনশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণী, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ এবং ভোক্তাদের অভ্যাস ও চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এফএমসিজি পণ্যের বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোক্তাদের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ বাজার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে গড়ে উঠেছে স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি। তাদের হাত ধরে নতুন রূপ পেয়েছে এফএমসিজি খাত। দেশের এফএমসিজি খাতের এ অগ্রগতিতে সামনে থেকে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের মধ্যে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) অন্যতম। আর এফএমসিজি পণ্যের বাজারে ফুড ও বেভারেজ ক্যাটাগরিতে এমজিআই-এর ফ্রেশ ব্র্যান্ডের পণ্য সবচেয়ে জনপ্রিয়। 

এমজিআই-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে কামাল ট্রেডিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এবং পরবর্তী সময়ে তা বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে একটি বিশাল শিল্পগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ১৯৮৯ সালে তাদের প্রথম উৎপাদন ইউনিট হিসেবে নারায়ণগঞ্জে একটি ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে তাদের এফএমসিজি পণ্যের অধিকাংশ ইউনিট মেঘনাঘাটে মেঘনা নদীর তীরের বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত। 

এফএমসিজি ব্যবসায় এমজিআই-এর সফলতা এসেছে মূলত অব্যাহত উদ্ভাবন, দ্রুত বাজার সম্প্রসারণ এবং উচ্চ গুণগত মান বজায় রাখার কারণে। ‘ফ্রেশ’, ‘নাম্বার ওয়ান’, ‘অ্যাক্টিফিট’, ‘সুপার পিওর’ ও ‘অলিও’-এর মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাতকৃত পণ্যগুলো বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হয়। এমজিআই-এর এফএমসিজি পণ্যের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, সরিষার তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল, গুঁড়া দুধ, চিনি, লবণ, চাল, চা পাতা, বোতলজাত পানি, আটা-ময়দা-সুজি, কনডেন্সড মিল্ক, গুঁড়া মসলা, ডাল, বেভারেজ (কোল্ড), নুডলস, বিস্কুট ও কুকিজ, ব্রেড ও বান, মুড়ি, চানাচুর, চকোলেট ও ওয়েফার, মটর ভাজা, কেক, ডাল ভাজা, ঝালমুড়ি ইত্যাদি। এ পণ্যগুলো ভোক্তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে, ফলে বাজারে এমজিআই-এর ব্র্যান্ডগুলো বড় স্থান দখল করতে পেরেছে অল্প সময়ের মধ্যেই। এখনো অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। তৈরি করেছে এফএমসিজির বাজারে নিজস্ব স্বাক্ষর। ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতি দুটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার ফ্রেশ-এর পণ্য ব্যবহার করে। 

ক্রয়ক্ষমতা ও স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশে ক্রমেই মানসম্পন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়ে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই যে ব্র্যান্ডগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের পণ্য সরবরাহ করে, তারাই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। এমজিআই-এর ব্যবসায়িক মূলমন্ত্র হচ্ছে ভোক্তার আস্থা অর্জন। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি যথেষ্ট সফল। এমজিআই তাদের বিস্তৃত পণ্যের পসার নিয়ে দেশব্যাপী সর্বস্তরের ভোক্তাদের চাহিদা মেটাচ্ছে প্রতিদিন। 

প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠানের মতো, এমজিআই-এর এফএমসিজি ইউনিটও তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ছিল পুঁজির অপ্রতুলতা, কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ও অবকাঠামো সংগ্রহ করা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব ইত্যাদি। নারায়ণগঞ্জ ও মেঘনাঘাটে কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বড় আকারের বিনিয়োগ এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। এছাড়া এমজিআই’কে বাংলাদেশের পরিবেশনীতি, আইন ও বিধিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হয়েছে। তবুও নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে সে প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করেই আজকের অবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে এমজিআই।

প্রায় ৫০ বছরের পথচলায় বর্তমানে এমজিআই প্রায় ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি বিশাল পরিবার। কর্মচারীদের মানসম্পন্ন বেতন, বোনাস ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে নিয়মিত। এমজিআই কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়, কারণ একটি দক্ষ কর্মশক্তি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালানো হয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, নিরাপত্তা প্রটোকল এবং গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের ওপর ফোকাস ইত্যাদি। কর্মীদের পর্যাপ্ত দক্ষতা নিশ্চিত করে এমজিআই কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া কার্যকর ও চলমান রাখছে এবং পণ্যের গুণগত মান ক্রমাগত নিশ্চিত করে যাচ্ছে। 

এমজিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামালের দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। উদ্যোক্তা হিসেবে তার দক্ষতা এবং শিল্প বিকাশের প্রতি আগ্রহ প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে সহায়তা করেছে। তার নেতৃত্বে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠীর একটি। 

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে নানা খাতে বিনিয়োগ করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করছে তাদের ব্যবহৃত অত্যাধুনিক মেশিনারি ও প্রযুক্তি। উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রিয়া, জাপান, ব্রাজিল ও চীনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, যা তাদের পণ্যকে করেছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।

এমজিআই তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অটোমেশনের ওপর জোর দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি কারখানায় অত্যাধুনিক অটোমেটেড মেশিনের ব্যবহার করা হয়, যা পণ্যের মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদনের সময় ও খরচ কমাতে সহায়ক। অটোমেশনের মাধ্যমে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া নির্ভুলভাবে পরিচালিত হয়, ফলে মানবিক ত্রুটির সম্ভাবনা কমে যায়। এ প্রযুক্তিগুলো বিশ্বমানের উৎপাদন মান বজায় রাখতে এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দ্রুত সরবরাহ করতে সাহায্য করে।

ভবিষ্যতে ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে এমজিআই তাদের কারখানা ও বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকে। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রফতানির বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। একটি ব্যবসায়িক ইউনিট থেকে শুরু করে বর্তমানে ১৪টি ব্যবসায়িক ইউনিট নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এমজিআই-এর এফএমসিজি ইউনিট, যা ভবিষ্যতে আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ধারাবাহিক উন্নতির যাত্রায় ২০০৫ সাল থেকে এমজিআই তাদের পণ্য দেশের বাইরেও রফতানি করছে। রফতানীকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে লবণ, বোতলজাত পানি, গুঁড়া মসলা, চা পাতা, বেভারেজ (কোল্ড), কনডেন্সড মিল্ক, নুডলস, বিস্কুট, কুকিজ ইত্যাদি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ প্রায় ১৫টি দেশে এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে।

উৎপাদন ও গুণগত মানে উৎকর্ষের জন্য এমজিআই বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান মার্কেটিং ডেটা, ইনসাইট ও কনসালটেন্সি কোম্পানি হিসেবে Kantar Worldpanel (কান্তার ওয়ার্ল্ডপ্যানেল) উল্লেখযোগ্য। জুন ২০২৩-এ কান্তার ওয়ার্ল্ডপ্যানেল তাদের ‘ব্র্যান্ড ফুটপ্রিন্ট ২০২৩’ প্রকাশ করে, যেখানে বাংলাদেশের ফুড ক্যাটাগরিতে ‘ফ্রেশ’, ‘সবচেয়ে পছন্দনীয় ব্র্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কান্তার-এর এ স্বীকৃতি ‘ফ্রেশ’-এর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসারই প্রতিচ্ছবি। এ স্বীকৃতি এমজিআই-এর পণ্যগুলোর গুণগত মানের প্রতি ভোক্তাদের আস্থা আরো বৃদ্ধি করবে বলে বিশ্বাস।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫