সিটি গ্রুপের
নানা ধরনের এফএমসিজি প্রডাক্ট আছে। বাংলাদেশের এফএমসিজি প্রডাক্টের ক্ষেত্রে
প্রথম যে কোম্পানিটির নাম আসে তা হলো
সিটি গ্রুপ। এ বিভাগে
মোট আপনাদের কতগুলো পণ্য আছে? এবং বাজার চাহিদার মোট
কত শতাংশ আপনারা পূরণ করতে পারছেন?
এফএমসিজির
জন্য আমি এখানে দুইটা ক্যাটাগরি বলতে পারি। যেমন প্রথমত এসেনশিয়াল কমোডিটি। সেটার মধ্যে পড়ে চাল, ডাল, চিনি, লবণ। সে খাতে মার্কেটের ২৫ শতাংশ প্রায় (বিশেষত তীরের) আমাদের
দখলে। আরেকটি ক্যাটাগরি
আছে,
ভ্যালু অ্যাডেড প্রডাক্ট। সেগুলোর মধ্যে পড়ে বিস্কুট, চকোলেট, ক্যান্ডি, ললিপপ, ব্রেড ইত্যাদি। এগুলো বাজারজাত করা
আমরা মাত্র শুরু করেছি। এক বছরের মতো হলো শুরু করেছি। তবে সেটাও বড় করে করছি আমরা। আামদের ইকোনমিক
জোনের মোট এরিয়ার পরিমাণ প্রায় ৭৭ একর। এর বাইরে আরো ৪০ একর যুক্ত হয়েছে। ওই জায়গাটিকে ব্যবহার
করে আমরা ফুড সেক্টরে বিনিয়োগ করব। ভ্যালু অ্যাডেড প্রডাক্টের ক্ষেত্রে এটিকে ব্যবহার করা
হবে। নুডলস, ড্রাই কেক, বিস্কুট ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের পণ্য আসবে। আমাদের অনেক জায়গা
আছে এবং সে জায়গা আমরা এরই মধ্যে ডেভেলপ করা শুরু হয়েছে। সুতরাং ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যের জন্য যে ধরনের
ইউটিলিটি ফ্যাসিলিটি আছে তা আমাদের মোটামুটি প্রস্তুত। সেক্টরটি গ্রো করলে আমরা আরো অন্যদিকে
ইনভেস্টমেন্ট করব। এটা হলো ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যের ক্ষেত্রে।
এছাড়া
ডাইভারসিটি আনার জন্য এসেনশিয়াল কমোডিটি ছাড়া আমরা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছি
সিমেন্টে। আমাদের সবচেয়ে বড় প্লান্ট সিমেন্টের। ঘণ্টাপ্রতি ৮০০ টন অর্থাৎ ১৬ হাজার টন পার ডে উৎপাদন
সক্ষমতা আছে। আমরা দুটো ভিআরএম (Vertical roller mill)
নিয়েছি জার্মানি থেকে। দুটো মিলে ক্যাপাসিটি ১৬ হাজার টন। নতুন আরেকটি প্লান্ট
তৈরি করছি, আশা রাখছি এ বছর
শেষে আমরা চালু করব। এটা হোসেনদিতে, আর সেখানেই আরেকটি বড় বিনিয়োগ
করেছি পেপারে। আমরা চারটা প্ল্যান্ট বসিয়েছি এবং এখান থেকে আড়াই হাজার টন পার ডে ক্যপাসিটির
উৎপাদন আসবে।
সিটি গ্রুপের
এফএমসিজি প্রডাক্ট কী কী আছে? ক্যাশ ফ্লোর দিক থেকে
চিন্তা করলে শীর্ষে থাকা ৫-১০টি পণ্য কি হতে
পারে?
প্রথমেই
থাকবে সুগার। সুগারে আমাদের সক্ষমতা দুই-তিন হাজার টন পার
ডে। ক্যাপাসিটি আর
সেলে দুই হিসেবেই বলা যায় বাংলাদেশে নাম্বার ওয়ান আমরা। তারপর হলো সিড ক্র্যাশিং প্লান্ট। সেটা হলো সয়াবিন
থেকে তেল বের করার প্লান্ট। এটা আমাদের পাঁচ হাজার টন পার ডে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে আমরা বৃহৎ। তারপর আছে আটা, ময়দা-সুজি, এটা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্লান্ট। ক্যাপাসিটি ও সেলসের দিকে আটা-ময়দা-সুজিতেও আমরা
প্রথমে আছি। আরেকটি হচ্ছে অয়েল রিফাইনারি। অয়েল রিফাইনারিতে আমাদের রিফাইনিং ক্যাপিসটি তিন হাজার টন
পার ডে। বটলিং ক্যাপাসিটি
আমাদের পার ডে এক হাজার টন এবং আমাদের এই প্লান্টগুলো পুরোপুরি অটোমেটেড ও মোস্ট
মডার্ন। এরপর থাকবে চাল, ডাল, লবণ। লবণেও বাংলাদেশে বড়
প্লান্ট আমাদের। প্রতিদিন ৫৬০ টন উৎপাদনে সক্ষম।
তবে আমাদের
প্লান্টগুলো ওভার ক্যাপাসিটিতে নেই। কারণ আমাদের এখনো চাল আমদানি করা লাগে। আটা-ময়দা-সুজিতেও বাংলাদেশের চাহিদা বাড়ছে। ১৯৯৬ সালে স্থাপিত আমাদের প্রথম যে ফ্লাওয়ার মিল
ছিল,
সেটার উৎপাদন সক্ষমতা ছিল পার ডে ২০০ টন।
আপনাদের সবচেয়ে
বড় ফ্লাওয়ার মিল হচ্ছে রূপসী ফ্লাওয়ার মিলস। মূলত কী চিন্তাভাবনা থেকে এটি
তৈরির পদক্ষেপ আপনারা নিয়েছিলেন। প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন করলেন এবং
চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল?
বাংলাদেশে
যত ফ্লাওয়ার মিলস আছে সব বুলারের (BUHLER) সাপ্লাই। এ মিলগুলোর
মেশিনারিজ ওরাই সরবরাহ করেছে। বুলার একটি সুইস কোম্পানি এবং প্রায় ১৭০ বছরের পুরনো
একটি কোম্পানি। আমি সেখানে জয়েন করি ২০১১ সালে। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর বুলারে চাকরি করেছি। সে সুবাদে
চেয়ারম্যান (প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত ফজলুর
রহমান)
স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয়। সিটি গ্রুপে আমি জয়েন করি ২০১৭ সালের ১
জানুয়ারি। তবে সিটি গ্রুপের যত রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল আছে
সব আমি বুলারের কান্ট্রি ম্যানেজার থাকাকালীন হয়েছে। আর স্যার বুলারের ভক্ত ছিলেন সে সময়। যা-ই করবেন,
সেসব বিষয়ে বুলারের টেকনোলজি থাকলে তা দিয়েই করবেন। বুলারের বাইরে যাবেন না। অনেক আগে থেকেই
তিনি বুলার সম্পর্কে জানতেন এবং সেখানে গিয়েছিলেন। তো, ১৯৯৬ সালে তিনি বুলারের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে গিয়ে বলেন ২০০ টন ক্যাপাসিটির একটি কারখানা তৈরি
করার প্রস্তাব দেন।
তখন
বাংলাদেশে ৫০-৬০ টনের ওপরে কোনো কারখানা ছিল না। তখন তিনি ২০০ টন ক্যাপাসিটির
কারখানা করতে চাইলেন। ওরা অবাক হয়েছিল। তবে স্যার ওদের কনভিন্স করেন। পরের দিনই তাদের সঙ্গে ২০০ টনের একটি
ফ্লাওয়ার মিল তৈরি করার কন্ট্র্যাক্ট সাইন করে এলেন। এটাই আমাদের প্রথম ফ্লাওয়ার মিল, হাসান ফ্লাওয়ার
মিল নামে তৈরি হয়েছিল। কোণাপাড়ায় এটা এখনো দেখতে পাবেন। যে কোনো সময় চালু করা
সম্ভব হলেও এটি আপাতত বন্ধ আছে।
এরপর ২০১২
সালে বুলারের সঙ্গে ৫০০ টনের একটি কারখানা প্রস্তুত করেন। ২০১৪ সালে আরেকটি ফ্লাওয়ার মিল তৈরির সিদ্ধান্ত
নেন তিনি। এর মধ্যে আমরা দুজনে বিভিন্ন দেশে গিয়েছি, প্লান্ট দেখেছি। আমরা সুইজারল্যান্ডে একটি ফ্লাওয়ার ফ্যাক্টরি দেখি, যা পুরোপুরি অটোমেটেড। ছুটির দিনে সেখানে কোনো মানুষ থাকে
না। এটা চেয়ারম্যান স্যারের অনেক পছন্দ হয়। এরপর আমরা ৬৫০ টন ক্ষমতার একটি ফ্লাওয়ার প্লান্ট করি। বাংলাদেশে
প্রথমবারের মতো আমরা এনেছি হোল হুইট আটা। সেটার ৬৫০ টন পার ডে ক্যাপাসিটি ছিল। তার পর করলাম রূপসী ফ্লাওয়ার মিল। সেটা পাঁচ হাজার টন
ক্যাপাসিটির।
একটা জিনিস
আমরা দেখেছি, যারা ময়দা ব্যবহার করে তারা আসলে তীর ময়দা ছাড়া ব্যবহার করে না। তাই আমাদের চেয়ারম্যান
স্যারের মূল লক্ষ্য ছিল তিনি তার পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখবেন। তখনো তিনি ভালো
মানের যন্ত্রপাতি কিনেছেন। এমনকি গম কেনার ক্ষেত্রেও তিনি সেরাটাই কিনেছেন। আমি কখনো
ওনাকে কোনো খারাপ গম কিনতে দেখিনি। কারণ তার মূল কথা ছিল যারা তার পণ্য কিনবে, তারা যাতে অন্য কোনো কোম্পানির পণ্য না কেনে।
আমাদের সিটি
ইকোনমিক জোনে ছোট একটি প্লট ছিল। তিনি সেখানে ফ্লাওয়ার মিল করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জায়গা ছিল
অল্প। জায়গার পরিমাণ ছিল
৮৫ বাই ৫৫ মিটার। এর মধ্যে আমরা দুজনে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বিভিন্ন ফ্লাওয়ার মিল ঘুরে
দেখছিলাম। ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্লান্ট দেখলাম সমুদ্রের খুব কাছে। সেখানে মাদার ভেসেল
(পণ্যবাহী মূল জাহাজ) একদম জেটিতে চলে আসে। আমাদের দেশে যেটা হয় মাদার ভেসেল দূরবর্তী স্থানে নোঙর করা
থাকে। আমরা ৫০-৬০ হাজার টনের ভেসেল এনে সেই দূরবর্তী স্থানে নোঙর করি। সেখান থেকে ফিডার
ভেসেলে পণ্য নিয়ে আসতে হয়। যে কারণে আমাদের খরচ বেশি পড়ে।
এই
জিনিসগুলো আমাদের মাথায় ছিল। তা যাই হোক, আমরা প্ল্যান্ট করার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রথমে তিন, পরে চার এবং সবশেষে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পাঁচ হাজার টনের ফ্যাক্টরি
তৈরি করব। সবাই নিষেধ করেছিল। তাও করলাম। আর সিটি ইকোনমিক জোনে জায়গা যেহেতু এক্সপেন্সিভ, আমরা সিদ্ধান্ত
নিলাম কোনো জায়গা নষ্ট করতে পারব না।
অনেক হিসাব
নিকাশ করতে হয়েছে এসব করার ক্ষেত্রে। আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান মুখে বলতেন আর আমি
হিসাব করতাম। কোনো পেন-পেপারের ব্যাপার ছিল না। বুলারকে বললাম, জায়গা যেহেতু ব্যয়বহুল, জায়গার কোনো অপচয় করতে পারব না। প্ল্যান্ট বা কারখানা যত উঁচু করা যায়, করতে পারো। শেষ পর্যন্ত পাঁচ হাজার টন সক্ষমতারই হলো। তারপর এল প্রযুক্তির প্রশ্ন। বুলারকে বলা হলো তাদের যা ইনোভেশন আছে, এখানে রাখতে হবে। প্লান্টে যে ক্লিনিং মেশিন আমরা নিয়েছি, তার চেয়ে এক্সটেনসিভ ক্লিনিং মেশিন বিশ্বে আর নেই। এটাকে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা যেতে পারে। ভেগা নামে একটা মেশিন আছে। টাস্ক মেশিন ইউজ করা হয়। যাতে গম ভাঙার আগেই পরিস্কার করা যায়।
সুজিতে
সাধারণত কিছু ব্ল্যাকস্পট দেখা যায়। মূলত গম কিছু ব্ল্যাকস্পট সুজির মধ্যে চলে আসে। সেটাকে সরানো যায়
না। কিন্তু আমরা এ মিলে
নিশ্চিত করি সুজিতে যেন কোনো ব্ল্যাকস্পট না থাকে। এর জন্য আমরা কালার সর্টার ব্যবহার করি।
প্লান্টটায় কার্যক্রম
কবে শুরু হলো?
আলোচনা শুরু
করেছি ২০১৬ সালে। এলসি হয়েছে ২০১৮ সালে। তারপর এক থেকে দেড় বছরের মাথায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে চলে যাই। দুই বছরের কম
লেগেছে প্লান্টের কাজ। সেটাও বুলারের জন্য নতুন ইতিহাস। এত বড় প্লান্টের কাজ দুই বছরের মধ্যে শেষ করেছি। এতো দ্রুত কাজটা করায় বুলার বিস্মিত হয়েছে। আসলে চেয়ারম্যান স্যারের একরকম নেশাই
ছিল প্রতিদিন খবর নেয়ার। তিনি জানতেন কোথায় কী সংকট হতে পারে। আমিও থাকতাম সঙ্গে। জায়াগটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল। দুই জায়গায় দুইটা প্লান্ট ছিল। অপ্রশস্ত জায়গা। পাইলিং করা ও
নির্মাণ—সবকিছুই কঠিন। আগে আমরা পাঁচ হাজার টনের সিড ক্র্যাশিং প্লান্ট করেছিলাম, সেটাও ছিল বিশাল। কিন্তু সেটা গ্রিন ফিল্ড ছিল। এক্ষেত্রে দুই পাশে অন্য প্লান্ট। ইকুইপমেন্ট ও
ক্রেনগুলো নাড়াচাড়া করা সহজ ছিল না। তার পরও যে স্বল্পসময়ে এটা করলাম, এজন্য বুলার অনেকবার অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে।
এটি বাস্তবায়নে
প্রধান কী সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে হয়েছে?
বাস্তবায়নের
ক্ষেত্রে স্পেস সবসময় একটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে। নির্মাণ ও যন্ত্রপাতির নাড়াচাড়া একটা বড়
প্রতিবন্ধকতা ছিল। দেখা গেল, কনস্ট্রাকশন রেডি হচ্ছে না, কিন্তু কনটেইনার
চলে আসছে। ৭০০ কনটেইনারের মানে ১০ হাজার বাক্স। সেগুলো স্টোর করাও চ্যালেঞ্জ ছিল। ইনস্টলেশনের সময় আবার বেরও করতে হবে। জানতে হবে, কোন বাক্স কোথায় আছে। বুলারের একটা ভালো
সফটওয়্যার আছে। ট্যাবে থাকে। কেবল স্ক্যান করলে সেটাই বলে দেয় বক্সটা কোন ফ্লোরে কোথায় যাবে। এটা বেশ সুসংগঠিত। তার পরও এগুলো রাখা
নিয়ে প্রতিবন্ধকতা ছিল।
আরো কিছু
বিষয় নিশ্চিত করার ব্যপার ছিল। বুলারকে বলা হয়েছিল সবচেয়ে সক্ষম মোটর ব্যবহার করতে
হবে,
যাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়। ক্লিনিংয়ের সময় যে কার্বন নিঃসরণ হয়, সেটা যেন প্রথমত কোনো দূষণ না করে; কোনো প্রকার ধুলা যেন না জমে। সিটি ইকোনমিক জোনে সরকারের রেগুলেশন হচ্ছে, ৩০ মিলিগ্রাম/মিটার কিউব। অর্থাৎ এক ঘনমিটার
বাতাসে ৩০ মিলিগ্রাম ধুলা থাকতে পারবে। আমাদের এখানে ২০
মিলিগ্রাম আছে। অর্থাৎ দুয়েক বছর পর সরকার যদি রেগুলেশন চেঞ্জ করে; তার পরও আমরা সীমার মধ্যেই থাকব।
ব্যবসার দিকে
যদি বলি, ফ্লাওয়ার রফতানিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই সরকারিভাবে। কেননা স্থানীয় চাহিদা পূরণ হচ্ছে। খুব সহজেই রফতানি করা যেতে পারে। সরকার থেকে কিছু
ব্যান আইটেম আছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ হোক বা না হোক, রফতানি করা যাবে না। চালের ক্ষেত্রে রফতানি করতে দেয় না। কিন্তু ফ্লাওয়ারে এ প্রতিবন্ধকতা নেই। তার পরও ফ্লাওয়ারে ব্যাপক রফতানির সুযোগ আছে। যেসব দেশে
বাংলাদেশী আছে সেসব দেশেই
ফ্লাওয়ার রফতানি করার সুযোগ আছে। কিন্তু আমরা সেভাবে রফতানি করতে পারছি না। রফতানি করতে গেলে
সার্টিফিকেট নিতে হয়। আমি মনে করি এটা সরকারের মুক্ত করে দেয়া উচিত উৎসাহী হয়ে। আমরা এখন মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকায় রফতানি করছি। বিদেশী মুদ্রা
দিনশেষে বাংলাদেশের জন্য ভালো। আমাদের সক্ষমতা আছে। আমরা ভ্যালু অ্যাড করছি। সরকারের এক্ষেত্রে উৎসাহী হওয়া উচিত। বিশেষ করে
ফ্লাওয়ারের ক্ষেত্রে এটা জরুরি।
অ্যারোমেটিক
রাইস বা পোলাওয়ের চালের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। উদাহরণ হিসেবেই বলি—আমি খেলাম না, কিন্তু আমি যদি তার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি, সেটা অনেক বড় কাজ। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ, এখানে যত বেশি বিদেশী মুদ্রা অর্জন করা যাবে, তত দেশের জন্য লাভ। এ জিনিসগুলো চিন্তা করা উচিত। কারণ এ মার্কেটগুলো ধীরে ধীরে ভারত ও পাকিস্তান
নিচ্ছে। আমরা নিতে পারছি না। কারণ রাইস
এক্সপোর্ট ব্যান। এর কারণে অ্যারোমেটিক রাইসও ব্যান। কিন্তু অ্যারোমেটিক রাইসটা করতে দেয়া দরকার।
আরো একটা
জিনিস আছে। আটা ময়দা তৈরি করে আমরা তো ভুসি পাই। এটার চাহিদাও আছে বাজারে। কোরবানির
সিজনে গবাদি পশুর খাবারে বেশি লাগে ভুসি। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত ভুসি থাকার পরও আমদানি হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই। পাঁচ হাজার টন আমি যদি ফসল
ক্রাশ করি, তাহলে ২০ শতাংশ ভুসি পাব। অর্থাৎ এক হাজার টন
ভুসি আমি বিক্রি করতে পারি। কিন্তু দেখা যায় আমি বিক্রি করতে পারছি ৫০০ টন। বাকিটা করতে পারছি
না। কারণ ভুসি আমদানি
হয় অন্য দেশ থেকে।
এখানে
বেশকিছু বিষয় আছে। যারা পোলট্রি ও ক্যাটল ফিড সেক্টরে আছে, তারা এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে. তারা প্রচার করে, আমদানি করতে না দিলে ক্রাইসিস হবে। এ বিষয়গুলো সরকারের দেখা উচিত। দেশের এত বড় বিনিয়োগ এত কর্মসংস্থান। প্লান্ট আমরা করেছি
আমদানি কমাতে। আমাদের দেশে তো বিদেশী মুদ্রা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাছ থেকে নিলে সেই খরচটা হবে না।
ভারত থেকে
বৈধ ও অবৈধ দুভাবেই আমদানি হয় ভুসি। সয়ামিল ও চিনিও এভাবে হয়। আমরা চিনিতে যে শুল্ক দিই, তারা তা দিচ্ছে না। তাহলে আপনি দুভাবেই টাকা হারাচ্ছেন। ফ্লাওয়ার মিলে সরকারের দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এক, রফতানি সহজ করে দেয়া উচিত। ভুসি যাতে আমদানি না হয় কোনো অবস্থায়। কারণ আমাদের তা
যথেষ্ট আছে।
ক্লিন করার
পরে যে ময়লাটা থাকে,
সেটার পরিণতি কী হয়?
গম থেকে
ক্লিনিং যেটাই বের হয়; সবটাই আমরা ব্যবহার
করতে পারি। গবাদি পশুর খাবার হিসেবে কিংবা পোলট্রির খাবার হিসেবে পুরোটাই ব্যবহার হয়। এ মিল থেকে সরাসরি
ফিড মিলে যায়। বলে নেয়া দরকার, আমরা আইএফসির লোন
পেয়েছি। আইএফসির লোন পেতে
হলে কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে হয়। টেকসই কিনা, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে কিনা, কর্মীদের সঙ্গে
সম্পর্ক ঠিক আছে কিনা ইত্যাদি। ঋণ পাওয়ার মানে আমরা এটা মেনে চলেছি।
এই বিশাল
প্লান্টের পেছনে কত বিনিয়োগের প্রয়োজন হলো?
সব মিলিয়ে ১
হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো হবে। ফ্লাওয়ার মিলে এত বড় বিনিয়োগ কেউ করে না। তিন-চারটা প্লান্ট নিয়ে হয়তো কাছাকাছি হবে। কিন্তু সিঙ্গেল প্লান্টে কেউ এত বড় বিনিয়োগ করে
না।
ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে
সিটি এডিবল অয়েলের বর্তমান ক্যাপাসিটি ও
টেকনোলজি নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
এডিবল অয়েলে
আমাদের রিফাইনিং সক্ষমতা হলো প্রতিদিন তিন হাজার টন। বোতলজাতের সক্ষমতা
দিনে এক হাজার টন। অর্থাৎ রিফাইনিং ক্যাপাসিটি অনেক বেশি। বোতলজাত করার সক্ষমতা দিনদিন বাড়ছে। আগে বোতলের ব্যবহার গ্রামে একরকম ছিল। পুরনো বোতল নিয়ে
গিয়ে তেল কিনে আনত। এখন বোতলের দরকার হয়। বোতলের ব্যবহার বাড়ছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড্রামে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেবে। এটা বন্ধ করে দিলে
সুবিধা আছে। ড্রামগুলো পুনর্ব্যবহার হচ্ছে। ড্রামগুলো পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন না। পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও সরকার এমন সিদ্ধান্ত
নিয়েছে। ওইটা কার্যকর হলে
দেখা যাবে সবই বোতলে যাবে। এজন্য আমরা এদিকেও বিনিয়োগ করেছি। আমরা এর মধ্যেই সম্প্রসারণ
করেছি বোতলজাত প্রক্রিয়া। আরো করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
মোট কর্মী
সংখ্যা কত?
সব মিলিয়ে
আমাদের এখানে প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করে। এখানে অনেকে চুক্তিবদ্ধ। কিন্তু সাত হাজারের মধ্যে পাঁচ হাজারই স্থায়ী
কর্মী।
আপনাদের কর্মীদের
জন্য কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ আছে?
এটা আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের আরো বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি অনেক সুদূরপ্রসারী চিন্তা করতেন। কোথাও প্ল্যান করার আগেই অ্যাকমোডেশন কোথায় হবে চিন্তা করতেন। আমাদের অনেক ফ্যামিলি কোয়ার্টার আছে। রূপসীতে পাঁচটি বিল্ডিং ও হোসেনদিতে আটটি। তিনি চিন্তা করতেন আমি যদি আমার এমপ্লয়িটাকে প্লান্টের কাছে রাখতে পারি তাহলে আমার সুবিধা।