সিটি গ্রুপের রূপসী ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড

মিলের নির্মাতা ও যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের বুলার গ্রুপ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি কনগ্লোমারেট। দেশে কনজিউমার পণ্য প্রস্তুতকারকদের মধ্যে অন্যতম নাম সিটি গ্রুপ। দেশের এফএমসিজির (ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস) মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে তারা। বর্তমানে তাদের ৪০টি সিস্টার কনসার্ন রয়েছে, যেখানে কাজ করছেন ২৫ হাজারেরও বেশি কর্মী। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোম্পানিটি মূলত সরিষার বীজ প্রক্রিয়াজাত করে তেল উৎপাদন করত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিটি গ্রুপ তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে, বিশেষ করে খাদ্যপণ্য খাতে। ১৯৯৫ সালে আটা, ময়দা ও সুজির বাজারে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আস্থা অর্জন করে গ্রাহকের, বেড়ে যায় চাহিদা। ১৯৯৭ সালে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করে। গোড়া থেকেই গ্রাহক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ছিল সিটি গ্রুপ। তার প্রমাণস্বরূপ ২০১৬ সালে সম্পূর্ণ গম থেকে উৎপাদিত আটা বাজারে আনে। সর্বশেষ ২০২১ সালে স্থাপিত হয় রূপসী ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ময়দা উৎপাদন কারখানা এটি।

রূপসী ফ্লাওয়ার মিলে কার্যক্রম চলে অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। উৎপাদনক্ষমতা দৈনিক ৬ হাজার ১৫০ টন। মিলের নির্মাতা ও যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের বুলার গ্রুপ। বুলার ও সিটি গ্রুপের মধ্যে ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে ২৩ একর জমিতে নির্মিত এ ফ্লাওয়ার মিল বিশ্বের সবচেয়ে বড়ও হতে পারে। কারখানায় ভূমি উন্নয়ন ছাড়াই এ পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। সুইজারল্যান্ডের বুলার থেকে আনা হয়েছে কারখানার যাবতীয় মেশিন ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি। কারখানায় কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন এমনকি ট্রাকে পণ্য লোড দেয়াসহ সবকিছুই হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

কারখানার ফুড পার্কে বর্তমানে ৩৯টি সাইলো (কাঁচামাল রাখার জায়গা) রয়েছে, যার স্টোরেজ ক্ষমতা ৩ লাখ ৫ হাজার টন। গম, সয়া, ভুট্টা ও মসুর ডালের মতো উপাদানগুলো খাদ্য পার্কে প্রতিদিন পাঠানো এবং অফলোড করা হয় এবং তাদের নিজস্ব পান্টে প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়। কারখানার সাইলো থেকে কাঁচামাল প্রথমেই যায় ম্যাগনেটিক সেপারেশন মেশিনে। যেখানে গমে লোহাজাতীয় উপাদান থাকলে তা আলাদা করা হয়। পরে বাছাইকৃত কাঁচামাল যায় টাচ মেশিনে। সেখানে প্রাথমিকভাবে গম পরিষ্কার করা হয়। এরপর সেটি বিন হয়ে চলে যায় ভেগা সেপারেটর মেশিনে। মেশিনটি চালুনি হিসেবে কাজ করে। গমের চেয়ে বড় কিংবা ছোট দানাগুলোকে আলাদা করে ভেগা সেপারেটর। চার স্তরে চলে এ কার্যক্রম। এরপর গমে থাকা পাথর বের করে দেয় ডি স্টোনার মেশিন। আটটি মেশিনের প্রতিটির দৈনিক সক্ষমতা ৬২৫ টন। এরপর এসপারেটর মেশিনে বাতাসের মাধ্যমে গমের চেয়ে পাতলা দানা আলাদা করে নেয়। স্কোরার গমের গায়ের ময়লা পরিষ্কার করে। এরপর সে গম কালার সটার মেশিনে পাঠানো হয়। এ মেশিন ৩০টি ক্যামেরার মাধ্যমে গমে থাকা ভুট্টা, সয়াবিন ও ডাবরিসহ অন্যান্য উপদান শনাক্ত করে এবং বাছাই করা হয়। আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয় এমওয়াইএফডি মেশিনে। এরপর গমগুলোকে ২৪ ঘণ্টা বিনে রেখে পণ্য উৎপাদনের জন্য ক্রায়িংয়ে পাঠানো হয়। 

গমের পুষ্টিগুণ পরিমাপ করার জন্য রূপসী ফ্লাওয়ার মিলে রয়েছে অত্যাধুনিক এনআইআর মেশিনে। এ মেশিনের ডিসপ্লেতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গমের পুষ্টিগুণের তথ্য ভেসে ওঠে। এছাড়া কারখানার মেঝে পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে অটোমেশন হাউজ কিপিং সিস্টেম। মেঝেতে ময়লা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেনে নেয় এ মেশিন। 

ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জে বিশাল উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে কোম্পানিটির। সেখানে সরিষা, সূর্যমুখী, সয়াবিন তেল, ময়দা, মসুর ডাল ও চাল উৎপাদন হয়। সিটি গ্রুপ তীর ব্র্যান্ডের অধীনে ময়দা উৎপাদন করে এবং স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫