অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিতে কারখানায় মাংস প্রক্রিয়াকরণ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ধরনের শিল্প হওয়ায় শুরুর চ্যালেঞ্জ ছিল বহুমাত্রিক

কারখানা নির্মাণের সময় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল একসঙ্গে বড় মাপের জমি ক্রয়, দক্ষ জনবল, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হালাল ও মান নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট। একেবারে নতুন ধরনের ব্যবসা হওয়ায় দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ না থাকা, ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি, প্রচলিত কাঁচাবাজারের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা, ফ্রোজেন পণ্য বিশেষত মাংস ও মাংসজাত পণ্যের বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতনতার মতো বিষয়কেও মোকাবেলা করতে হয়েছে।

উদ্যোক্তারা তাদের আন্তরিকতা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বাস্তবে পরিণত করেন। অর্থের সংস্থান হয়েছিল ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ও ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে।

বিদ্যুৎ গ্যাসের ব্যবস্থা করা কিছুটা কঠিন ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফ্যাক্টরি হওয়ায় এবং গ্যাস সরবরাহ না থাকায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সঞ্চালন লাইন থেকে ও নিজস্ব বিনিয়োগে ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে ফ্যাক্টরি পরিচালনা করা হয়।

দেশে মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ ধারণাটি নতুন হওয়ায় শ্রমিকের জোগান ছিল না। দেশে দক্ষ জনবল না থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে অদক্ষ কর্মীদের বিদেশী প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষ কর্মীতে রূপান্তর করা হয়।

বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো সম্পূর্ণ বিদেশী প্রযুক্তি। যন্ত্র আমদানি করা হয় অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে।

২০ থেকে ২৭ একরে সম্প্রসারণ

২০০৬ সালে বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লি. কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০ একর জমিতে। শুরুতে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৫০। বর্তমানে কারখানা বিস্তৃত হয়েছে ২৭ একর জমিতে। ফ্যাক্টরি ও ফার্মসহ ২৭ একর জমিতে পরিচালিত হচ্ছে বেঙ্গল মিট। বর্তমানে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ২৪৫। শ্রমিকরা বেতন-ভাতাসহ অনুমোদিত ছুটি, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স, গ্রাচ্যুইটি, আংশিক ভর্তুকিসহ খাবার, উৎপাদনমূল্যে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ক্রয় ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যাতায়াত সুবিধা পান।

অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিতে কারখানায় মাংস প্রক্রিয়াজাত

বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাটি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত

১. মাংস প্রক্রিয়াজাত কারখানা

২. গবাদিপশুর খামার

মাংস প্রক্রিয়াজাত কারখানা: এখানে তিনটি ইউনিট আছে, যার একটি রেড মিট (গরু, খাসি ও ভেড়া), দ্বিতীয়টি হোয়াইট মিট (সব ধরনের পোলট্রি স্পেসিস) এবং তৃতীয়টিতে মাংসজাত খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা।

গবাদিপশুর খামার: খামারটি দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে গরু পালন, অন্য অংশে উন্নত জাতের ছাগল ও ভেড়া পালন করা হয়।

উল্লেখ্য, মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানার প্রযুক্তি মূলত অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানীকৃত। এছাড়া জার্মানি ও চায়না থেকে আমদানীকৃত বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

বেঙ্গল মিট কারখানায় পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সবসময় তৎপর। এ প্রক্রিয়ায় একজন বিদেশী কর্মী (মিট টেকনোলজিস্ট) সরাসরি কারখানায় কাজ করেন এবং দুজন কনসালট্যান্ট হিসেবে প্রয়োজন অনুসারে সহায়তা করেন।

প্রতিষ্ঠার শুরুতে শুধু রেড মিট অর্থাৎ গরু, ছাগল ও ভেড়ার মাংস উৎপাদন এবং রফতানিনির্ভর ব্যবসার পরিকল্পনা ছিল। পরে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও উদ্যোগ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। রেড মিটের পাশাপাশি পোলট্রি মিট ও ভ্যালু অ্যাডেড মাংসজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদন শুরু করে বেঙ্গল মিট। বর্তমানে সীমিত আকারে মাছও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতে কারখানার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি রেড মিট, হোয়াইট মিট, ভ্যালু অ্যাডেড মাংসজাত পণ্যের এবং ফিস প্রসেসিংয়ের জন্য স্বতন্ত্র প্রসেসিং লাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।

আমাদের পণ্য মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে এবং মালদ্বীপে রফতানি হয়। মূলত কাঁচা মাংস রফতানি হয়। তবে পরিমিত আকারে মাংসজাত খাদ্যপণ্য ও পোলট্রি মাংসও রফতানি হয়।

বর্তমানে কাঁচামালের (বিশেষত গবাদি প্রাণী) মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও অন্যান্য রফতনিকারক দেশের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে রফতানি পরিমাণ শুরুর তুলনায় অনেকাংশে কম।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৫৩৪০ টন মাংস ও মাংসজাত পণ্য বাজারজাত করেছে। দেশের মোট চাহিদা ৭৬.২১ লাখ টন [সূত্র: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর: Livestock Economy at a Glance, 2023-2024, Table 4. Demand, production and availability of milk, meat and eggs (2023-24)] এ হিসেবে দেশের বাজারে বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অংশীদারত্ব মোট চাহিদার ০.০৭ শতাংশ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫