মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের সমান্তরালে বাড়ছে এফএমসিজির বাজার

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সামর্থ্য বাড়ছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ নতুন করে যুক্ত হচ্ছে মধ্যবিত্তের কাতারে। সচ্ছল বা উচ্চবিত্তের সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। ফলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এফএমসিজি) জন্য বাংলাদেশ বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। এফএমসিজি বা ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস হলো এমন সব নিত্য ব্যবহার্য পণ্য, যা তুলনামূলক সস্তা কিন্তু দ্রুত বিক্রি হয়। খাদ্য, পানীয়, প্রসাধন, গৃহ পরিচর্যা ও দুধ মিলিয়ে এফএমসিজির বাজার।

বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে আছে। ২০২৫ সালের মধ্যে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা তিন গুণ বাড়বে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের মতো দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এখানকার বাজার এশিয়ার অন্য দেশের বাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গতিশীল, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বেশির ভাগ বহুজাতিক ভোগ্যপণ্য প্রতিষ্ঠানের নজরে আসেনি। বিশ্লেষকদের দাবি, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশী নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বরিশালের মতো শহরে অনেক বাড়বে। সেক্ষেত্রে এফএমসিজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশের বাজারে সফল হতে হলে দেশের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এশিয়ার সম্প্রসারণশীল অন্যান্য বাজারের তুলনায় এ দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী গৃহস্থালি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আধুনিক মাধ্যম যেমন সুপার মার্কেট ও চেইন শপের চেয়ে প্রথাগত পদ্ধতিতে কেনাকাটায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পণ্যের ব্র্যান্ড মূল্য নিশ্চিতেও এফএমসিজি কোম্পানিগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।

বাংলাদেশে এফএমসিজির বাজার বেশকিছু ব্র্যান্ডের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের তালিকায় বিদেশী ব্র্যান্ডের সমান্তরালে কাজ করে চলছে দেশী ব্র্যান্ডগুলো। স্পেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কান্তার বলছে, বৈশ্বিক এফএমসিজি খাত কয়েক বছর ধরে কঠিন সময় পার করছে। এর মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের ব্র্যান্ড মূল্য তৈরিতে জোর দিতে শুরু করেছে বেশিদিন নয়। আগে তারা বেশি জোর দিত পণ্যের গুণাগুণ অথবা সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর। এ কারণে দেশীয় কোম্পানি ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে ছিল দীর্ঘদিন। তবে দেড় দশক ধরে চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। কয়েক বছর আগেও সেরার তালিকায় খুব বেশি দেশীয় ব্র্যান্ড ছিল না। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে আগামী পাঁচ বছর পর হয়তো দেখা যাবে, শীর্ষ ব্র্যান্ডের তালিকায় দেশীয় ব্র্যান্ডের সংখ্যাই বেশি। কারণ দেশীয় কোম্পানি এখন শুধু ব্র্যান্ড তৈরির জন্য বিনিয়োগ করছে, জনবল নিয়োগ দিচ্ছে।

দেশের খাদ্যশ্রেণীতে শীর্ষে রয়েছে সিটি গ্রুপের তীর। এ ব্র্যান্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠানটির ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, সুজি, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। বাংলাদেশের মোট পরিবারের ৩৯ শতাংশ তীর ব্র্যান্ডের পণ্য কেনে। এ খাতে প্রথম সারিতে রয়েছে নুডলসের ব্র্যান্ড কোকোলা, মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ও নেসলের ম্যাগি। পানীয় শ্রেণীতে সেরা চায়ের ব্র্যান্ড ইস্পাহানি। বাংলাদেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ পরিবারে পণ্যটি কেনা হয়। পানীয় শ্রেণীতে দ্বিতীয় সেরা কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড সেভেন আপ। পানীয়ের প্রথম সারিতে আছে ব্রুক বন্ড, সিলন ও হরলিকস। প্রসাধনের ব্র্যান্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছে সানসিল্ক, লাক্স, প্যারাস্যুট, পেপসোডেন্ট ও ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি। হোমকেয়ার পণ্যে সেরা ব্র্যান্ড রিন, হুইল, ভিম, তিব্বত বল সাবান ও ফাস্ট ওয়াশ।

দুগ্ধপণ্যের বাজারে প্রথম সারিতে রয়েছে মার্কস, ডিপ্লোমা, ফ্রেশ, ডানো ডেইলি পুষ্টি ও মিল্ক ভিটা। অন্যদিকে বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। তাদের এফএমসিজির ১৩টি দেশের বাজারে উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সেরার তালিকায় দেশীয় শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে কোহিনূর কেমিক্যালস, এসিআই, স্কয়ার, মেঘনা, আবুল খায়ের ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্যের ব্র্যান্ড সংখ্যা বেশি। দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সক্ষমতাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের অবস্থান আরো শক্ত করতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫