মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

মো. নাহিদ ইসলাম, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছিলেন অন্যতম সমন্বয়ক ও শেখ হাসিনা সরকার পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে সরকারের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক মাস পেরিয়েছে। আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে? তালিকা তৈরিতে দেরি হচ্ছে কেন?

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন মূলত তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৮০০ জন শহীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ প্রক্রিয়া চলছে। একটি স্মরণসভার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে আপাতত তা স্থগিত আছে এবং তালিকার কাজ সম্পন্ন হলে স্মরণসভার মাধ্যমে সব শহীদ পরিবারকে একত্রিত করা হবে। আহতদের পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কী পরিমাণ সহায়তা প্রদান করা যায় তা নির্ধারণ করা হবে। ফাউন্ডেশনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং এ সপ্তাহ থেকে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আহতদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালনে কোন বিষয়গুলোকে আপনি চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?

১৬ বছরের যে অরাজকতা তা অল্প সময়ে সমাধান করা দুরূহ। নতুন করে সবকিছু গড়ে তুলতে হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে এখনো পূর্ণ কর্মতৎপরতা আসেনি। পুলিশের মনোবল এখনো সম্পূর্ণভাবে ফিরে আসেনি। ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়ে নিজেরাই উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে তারা আমাদের সহায়তা করছেন। পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় হয়ে গেলে আমাদের কাজের গতি আরো বাড়বে।

আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে আট কোটির গড় বয়স ২৬। এ বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আইসিটি মন্ত্রণালয় কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

আইসিটি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। এ খাতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, পাশাপাশি নতুন কিছু উদ্যোগ নেয়ার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুবিধা তৈরি করা, আইসিটি খাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, তরুণদের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরা, অনলাইন কাজের জন্য সরকার থেকে লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং তরুণদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে আমরা কাজ করতে পারি।

পে-পাল ও অন্যান্য অনলাইন লেনদেন পরিষেবা চালু করার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘদিনের দাবি রয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

এ ধরনের সেবা চালু করলে মানি লন্ডারিং হবে কিনা সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। যথাযথ নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে এ ধরনের সেবা চালু করা যেতে পারে। আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। এছাড়া আইসিটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। এক মাস ধরে আমরা মূলত বিগত সময়ের প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করছি। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করে স্থগিত করা হচ্ছে। লোকবলে পরিবর্তন এনে প্রশাসনকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোয় কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু আইনের ক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তনও আনা হচ্ছে। 

আমাদের সার্ভার সক্ষমতা কেমন? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সিঙ্গাপুর বা অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভর করছি। সার্ভার সক্ষমতাকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়? 

হ্যাঁ, আমাদের সার্ভার ও ইন্টারনেট সরবরাহের ক্ষেত্রেও অন্যান্য দেশের প্রতি নির্ভরশীলতা আছে। তবে আমাদের দেশেও কিছু সক্ষমতা আছে এবং তা আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ সক্ষমতাকে আগে নানা কারণে কাজে লাগানো হয়নি। বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছিল। আমরা এ নির্ভরশীলতা কমিয়ে কীভাবে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো যায় সেই টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করছি। 

প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তরুণ ও স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য আপনারা কী কী উদ্যোগ নিচ্ছেন? 

আমাদের এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের দায়িত্বশীল রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী। আমরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইসিটি-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে চাই। পাশাপাশি যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছেন, তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজে যুক্ত করার বিষয়েও পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বা সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনা করছি। প্রাথমিকভাবে ১০-১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

টেলিযোগাযোগ খাতে কলরেট ও ইন্টারনেটের অধিক মূল্যের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এগুলোকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আনার জন্য আপনারা কী পরিকল্পনা করছেন? 

এ বিষয়ে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। স্টেকহোল্ডার ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। কলরেট, ইন্টারনেটের মূল্য, মোবাইল ডাটার মেয়াদ ইত্যাদি বিষয়কে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি। আমরা গ্রাহকদের পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর যুক্তিও বিবেচনা করছি, যাতে তারা ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। আমরা যথাযথভাবে এসব মূল্য কমিয়ে জনগণের জন্য সুলভ মূল্যে নিয়ে আসতে চাই।

পূর্ববর্তী সরকারের ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন’ (ডিএসএ), যা পরবর্তী সময়ে ‘সাইবার সিকিউরিটি আইন’ (সিএসএ) হলো, সেটা কি বর্তমানে বলবৎ আছে? এ বিষয়ে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে? 

আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে যাতে আইনটি পুনর্বিবেচনা করা হয়। যাদের এ আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যাপারেও আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। সাইবার সিকিউরিটি আইনটি মূলত বাতিল করতে হবে, কারণ এটি ব্যাপকভাবে বিতর্কিত এবং প্রায়ই এ আইনের অপব্যবহার করা হয়। আমাদের গঠিত রিফর্ম বডিতে এ আইন নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সংবাদকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আপনি কিছুদিন আগেই কথা বলেছেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সংবাদকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি, ওয়েজ বোর্ড নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন? 

আমরা গণমাধ্যম কমিশনের কথা বলেছি। অন্যান্য খাতের জন্য যেভাবে সংস্কার কমিশন করা হচ্ছে, গণমাধ্যমের জন্যও তা করা হবে। মূলত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে সবার মতামত পর্যালোচনা করবে। তাদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

পূর্ববর্তী সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নামে কিছু রূপকল্প প্রদান করেছিল। যদিও তা তেমন সাফল্য আনতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের এ রকম কোনো পরিকল্পনা আছে কি? 

বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ খাতে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে, সে পরিমাণ সুবিধা জনগণ পায়নি। সুবিধাগুলো কিছু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের লক্ষ্য হবে সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করা, যাতে প্রান্তিক পর্যায়েও ডিজিটাল সুবিধাগুলো পৌঁছে যায় এবং ইন্টারনেটের আওতায় সবাইকে নিয়ে আসা যায়। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা কাজ করব, যাতে সবার জন্য ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য করা যায়। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫