বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব গ্রহণের পর গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভায় তিনি এ কথা জানান।
সভা হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। পরে শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলনে কক্ষে সাংবাদিকদের সামনে সভার সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় একনেক সভায় বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকত না। অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। এখন সেসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগে একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে।’
একনেক সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘বিদেশী অর্থায়ন পাওয়া যাবে—এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এগুলোয় বিদেশী সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মেলে—এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।’
দাতা সংস্থাগুলো টাকা দিতে চাচ্ছে জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘ইউএসএইড বলছে, তোমরা যে প্রকল্পই আনো, আমরা টাকা দিয়ে দেব। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় যেসব সংস্থা আছে, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। চলমান প্রকল্পের বিষয়ে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। তারপরও বলছে, তোমাদের চাহিদা বল, আমরা চেষ্টা করব।’
এদিকে একনেকে গতকাল চারটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট আনুমানিক ব্যয় ১ হাজার ২২২ দশমিক ১৪ কোটি টাকা। ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সার্বিক ব্যয় ১ হাজার ২২২ দশমিক ১৪ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬৩ দশমিক ৮২ কোটি টাকা আসবে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে, প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে ১০০ দশমিক ১৬ কোটি টাকা এবং বাকি ১৫৮ দশমিক ১৬ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে সংগ্রহ করা হবে।
দুটি নতুন অনুমোদিত প্রকল্প হলো—৫৮৮ দশমিক ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধানী কূপ (সুন্দলপুর দক্ষিণ-১ ও জামালুর-১)’ এবং ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ে টেকসই সামাজিক পরিষেবা প্রদান প্রকল্প (২য় পর্যায়)’।
এছাড়া আর দুটি সংশোধিত প্রকল্প হলো—৭০ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন, প্রথম সংশোধিত’ এবং ১৬৩ দশমিক ১১ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ে ‘তথ্য আপা: আইসিটি টুওয়ার্ডস ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, (দ্বিতীয় পর্যায় ও দ্বিতীয় সংশোধিত)’। এ প্রকল্পের সময়সীমা এক বছরে কমিয়ে আনা হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, ‘এছাড়া তথ্য আপা প্রকল্পের শিরোনাম পরিবর্তন করা হবে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।