আবারো অস্থিতিশীল আশুলিয়া সংঘর্ষে নারী শ্রমিক নিহত

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

অসন্তোষের জেরে বন্ধ রাখা হয় ২২ কারখানা

ঢাকার আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ শ্রমিক। গতকাল সকালে জিরাবো এলাকায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। আশুলিয়া ও গাজীপুরে কয়েক দিন ধরে চলা শ্রমিক অসন্তোষ যখন স্বাভাবিক হয়ে আসছিল, ঠিক তখনই আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল।

এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গতকাল আশুলিয়ায় ১৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। গাজীপুরে বন্ধ ছিল তিনটি কারখানা। এছাড়া শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অনেক স্থানে তৈরি হয় তীব্র যানজট। 

সাভার প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় সংঘর্ষে নিহত শ্রমিকের নাম মোছা. রোকেয়া বেগম। তিনি মাসকট গার্মেন্টসের সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। কারখানাটিতে রোকেয়া কাজ করছিলেন ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে। তিনি গাইবান্ধা সদরের গুদারহাট এলাকার মাসুদ রানার স্ত্রী।

শ্রমিকরা জানান, জিরাবো এলাকায় বন্ধ থাকা মাসকট গার্মেন্টস খুলে দেয়ার দাবিতে গতকাল সকালে কারখানার সামনে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। এ সময় পাশের সাউদার্ন ও রেডিয়েন্স গার্মেন্টস থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর সাউদার্ন ও রেডিয়েন্সের শ্রমিকদের সঙ্গে মাসকটের শ্রমিকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে মাসকটের নারী শ্রমিক রোকেয়া বেগমসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন। পরে তাদের দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোকেয়াকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘সকাল পৌনে ১০টার দিকে শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে একজন নারী শ্রমিক নিহত হন।’

শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়ায় গতকাল ১৯টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তার মধ্যে ১৫টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। বাকি চারটি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজ না করে বের হয়ে যান।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া-জিরানী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন ও চট্টগ্রাম এলাকায় মোট ২ হাজার ১৪৪ কারখানার মধ্যে খোলা ছিল ২ হাজার ১২২টি। এর মধ্যে আশুলিয়ায় ২৭২টি কারখানার মধ্যে গতকাল ২৫৩টি চালু ছিল। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ ছিল ১৫টি কারখানা। এগুলো হলো মাসকট গার্মেন্টস, মাসকট নিট, মাসকট ফ্যাশনস, রেডিয়েন্স জিন্স, রেডিয়েন্স ফ্যাশন, স্ক্যানডেক্স, হামজা ক্লদিং, আরকে নিট, সান অ্যাপারেলস, টেক ম্যাক্স, শিন শিন অ্যাপারেলস, পার্ল গার্মেন্টস, জেনারেশন নেক্সট, ইউরোপিয়া ও সুসুকা নিট। এছাড়া রেডিয়েন্স নিটওয়্যারস, এস-২১ অ্যাপারেলস, কম্পফিট কম্পোজিট (ইউনিট-২) ও সাউদার্ন গার্মেন্টস কারখানা চালু থাকলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়। আগস্টের বেতন দিয়েছে ২ হাজার ২২ কারখানা। তবে ১২২টি কারখানা এখনো তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের গত মাসের বেতন দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। 

বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করায় আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে অস্থিরতা চলছে। কিছু দাবি মেনে নেয়ায় অবশ্য পরিস্থিতির বেশ খানিকটা উন্নতি হয়। কাজে ফিরেছিলেন শ্রমিকরা। এর মধ্যে গতকাল তিন কারখানার শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়ানোয় ফের অস্থিরতা বেড়ে গেল এ শিল্পে।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, বিভিন্ন দাবিতে গতকাল কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা, চক্রবর্তী ও গাজীপুর সদরের শিরিরচালা এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করলে তৈরি হয় তীব্র যানজট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে চন্দ্রা এলাকায় মাহমুদ জিন্স লিমিটেড ও নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। অন্যদিকে চক্রবর্তী এলাকায় বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ করেন বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকরা। কর্মবিরতি পালিত হয় জয়দেবপুর থানার শিরিরচালা এলাকার এক্সিকিউটিভ হাইফ্যাশন লিমিটেডের কারখানায়। টঙ্গীর খাঁপাড়া এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সিজন ড্রেস নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।

কারখানা শ্রমিক পারভিন বলেন, ‘আমাদের দা‌বি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দরকার হলে সড়কে শুয়ে পড়‌ব, তার পরও দা‌বি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন থামাব না।’

গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় বেতন বৃদ্ধিসহ আট দফা দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন তাসমিয়া হারবাল লিমিটেডের শ্রমিকরা। নয় দফা দাবি আদায়ে ভেরিতাস ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন মৌচাক এলাকায়। 

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সিজন ড্রেস কারখানার শ্রমিকরা। তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫