প্রণোদনার ভিত্তিতে কয়লাবিদ্যুৎ বন্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীর্ষে সিঙ্গাপুর

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোর অগ্রাধিকারের শীর্ষে রয়েছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহার। তবে বিদ্যমান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা রূপান্তরের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা সরে আসা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে কিছু লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আর্থিক ও পুরনো কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা এখনো প্রাধান্য পাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রণোদনার ভিত্তিতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুর, যা আসিয়ান বা দক্ষিণ-এশিয়ায় জ্বালানি খাতের রূপান্তরে দেশটিকে অগ্রবর্তী আসন দিতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোও এ ডিকার্বনাইজেশন বা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় উৎসাহিত হবে। খবর নিক্কেই এশিয়া।

‘ট্রানজিশন ক্রেডিট’ হিসেবে উল্লেখিত এ প্রণোদনায় কয়লাচালিত কেন্দ্রগুলো পূর্বনির্ধারিত আয়ুষ্কালের আগেই বন্ধ হবে। কত তাড়াতাড়ি কেন্দ্রগুলো বন্ধ হচ্ছে, এর ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনা পাবে। সিঙ্গাপুরের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনিটারি অথরিটি অব সিঙ্গাপুর এ উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। পরিবেশ দূষণে দায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধের জন্য বর্তমানে সংস্থাটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।

সম্প্রতি ফিলিপাইনের আয়লা গ্রুপের অধীন বড় আকারে বিদ্যুৎ কোম্পানি এসিইএনের সঙ্গে অংশীদারত্বে যুক্ত হয়েছে সিঙ্গাপুরের মুদ্রা কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে রকফেলার ফাউন্ডেশন, সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিকার্বনাইজেশন বিনিয়োগ প্লাটফর্ম কেপেল ও জেনজিরো। ফিলিপাইনের লুজন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বাটাঙ্গাসে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে দ্রুত নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। গত মাসে এ বিষয়ে যৌথ এক বিবৃতিতে এসিইএন, কেপেল ও জেনজিরো বলেছিল, বিদ্যমান প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে প্রকল্পটি হবে ট্রানজিশন ক্রেডিটের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া বিশ্বের প্রথম কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর একটি।

এসিইএনের মূল পরিকল্পনা অনুসারে ২০৪০ সালে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার কথা। তবে এখনকার সমঝোতার অংশ হিসেবে নির্ধারিত সময়ের ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০৩০ সালে বন্ধ হবে বাটাঙ্গাসের প্লান্ট। এ ১০ বছরের আনুমানিক কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ থেকে জলবায়ু রক্ষার জন্য ট্রানজিশন ক্রেডিট নির্ধারণ করা হবে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার কারণে এসিইএনের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা পূরণে সাহায্য করবে বিনিয়োগকারীরা। 

বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে এখনো এশিয়ায় কয়লার ব্যবহার জনপ্রিয়। মনিটারি অথরিটি অব সিঙ্গাপুরের তথ্যানুসারে, এশিয়ার দেশগুলো ব্যবহৃত বিদ্যুতের ৬০ শতাংশের জন্য কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে। এ অঞ্চলের কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচ হাজারটি তুলনামূলক নতুন, এগুলোর গড় পরিচালন বয়স ১৫ বছরেরও কম। এ হিসাবে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, এসব কেন্দ্র আরো অনেক দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে ডিকার্বনাইজেশন প্রক্রিয়া অগ্রসর হবে না। আবার আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগে বন্ধ করা হলে বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করা হবে না। একই সঙ্গে কেন্দ্র বন্ধ করার পাশাপাশি বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এ কারণে উদীয়মান অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে ক্লিন এনার্জির বিকাশে নতুন বিনিয়োগ প্রয়োজন। এখানেই ট্রানজিশন ক্রেডিটের মাধ্যমে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ডিকার্বনাইজেশন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সিঙ্গাপুরের মুদ্রা কর্তৃপক্ষ দেশ-বিদেশের ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রানজিশন ক্রেডিট প্রকল্পে সহযোগিতা করার জন্য একটি শিল্প গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে। গ্রুপটি এখন ক্রেডিট মূল্য নির্ধারণ, অডিট ও বিতরণ পদ্ধতির মতো বিষয়ে বিস্তারিত কাজ করছে।

বিদ্যুৎ খাতের এ ধরনের রূপান্তরে ব্যাংক খাত আগ্রহী বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের আর্থিক পরামর্শক হওয়ার এবং জাভার কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য কাজ করতে সম্মত হয়েছিল সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম ঋণদাতা ডিবিএস গ্রুপ হোল্ডিংস।

এ বিষয়ে বহুজাতিক অ্যাকাউন্টিং সংস্থা কেপিএমজির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অবকাঠামো বিষয়ক প্রধান শরদ সোমানি বলেন, ‘আগামীতে জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের বিভিন্ন উপায়ে পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে। কারণ জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মাত্রা এতই বিশাল যে পুঁজিবাজারে পুঁজির সম্ভাব্য সব উৎসকে ব্যবহার করা দরকার।’

একইভাবে এ রূপান্তর প্রক্রিয়ার সংকট নিয়েও কথা বলেন শরদ সোমানি। কেননা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান বড় একটি সমস্যা। কারণ এতে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা অর্জনের সুযোগ সবসময় থাকে না। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এ রূপান্তর প্রকল্পগুলোর চ্যালেঞ্জ হলো এসব প্রকল্প প্রায়ই বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর কোনো রিটার্ন দেয় না, যা একটি জীবাশ্ম-জ্বালানি প্লান্ট দিতে পারে। তাই আমাদের অর্থায়নের খরচ কমানোর জন্য বা বিকল্প অর্থ সংস্থানের সব উপায়ের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে প্রকল্পটি আরো কার্যকর হয়ে ওঠে।’

তার মতে, বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে ডিকার্বনাইজেশন প্রক্রিয়ার জন্য কাজ করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের এ রূপান্তরের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ, সরকারি ভর্তুকি, দাতব্য সংস্থার কাছ থেকে অনুদান এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ও ঋণের মাধ্যমের ট্রানজিশন ক্রেডিট ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫