পিত্তথলির রোগ

পিত্তথলির থলের কথা

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪

ডা. মো. সায়েফউল্লাহ

কথিত আছে, সার্জনদের ব্রেড অ্যান্ড বাটার হচ্ছে পিত্তথলি। প্রতিদিনের অপারেশন তালিকার শুরুতে পিত্তথলিতে অপারেশন এক বা একাধিক থাকবেই। পিত্তরসের ধরন, বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণ, চর্বিযুক্ত খাবার ও রক্তকোষ ভেঙে যাওয়ার কারণে সাধারণত পিত্তথলিতে পাথর হয়।

পিত্তথলির রোগগুলো

পিত্ত পাথর, পিত্ত ক্যান্সার, পিত্ত সংক্রমণ (পাথর দিয়ে অথবা পাথরবিহীন) এছাড়া পিত্ত পাথরের বিভিন্ন জটিলতা।

কখন অপারেশন লাগবে

মূলত উল্লেখ্য কারণগুলো থাকলে পিত্তথলি ফেলে দিতে হয়, কিংবা অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

অপারেশনে ক্ষতি হবে কী

স্বাভাবিক অবস্থায় পিত্তরস যকৃৎ থেকে তৈরি হয়ে পিত্তথলিতে জমা থাকে। পিত্তথলির কাজ এ রসকে কিছুটা ঘন করে রাখা। আমাদের আহারের পর পিত্তথলি এ রস নালি দিয়ে খাদ্যনালিতে পাঠিয়ে দেয়। পিত্তথলি না থাকলেও যকৃতে পিত্তরস ঠিকই তৈরি হয় এবং সবসময়ই একটু একটু করে খাদ্যনালিতে এসে খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। এ কারণেই পিত্তথলি না থাকলেও স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো সমস্যা হয় না। 

অপারেশনের পর কোন ধরনের খাবার নিষিদ্ধ

পিত্তরস লিভার থেকে তৈরি হয় এবং পিত্তনালি দিয়ে খাদ্যনালিতে খাবারের সংস্পর্শে আসে। তাই পিত্তথলি না থাকলেও কোনো খাবারেই সমস্যা হয় না।

অপারেশনের উপযুক্ত সময় ও প্রক্রিয়া

প্রদাহের তিনদিনের মধ্যে অন্যথায় তীব্র প্রদাহ যদি তিনদিনের অধিক হয়, তবে সাময়িক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ছয় সপ্তাহ পর অপারেশন করা উত্তম। সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থায় পেট ফুটো করে (ল্যাপারোস্কপিক, কোলেসিস্টেকটমি) ভর্তির দিনই অপারেশন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী বাড়ি চলে যেতে পারে। অপারেশনের ৬ ঘণ্টা পর থেকে মুখে খাবার এবং হাঁটাচলা করা যায় এবং দৈনন্দিন সাধারণ কাজকর্ম করা যায় বলেই এটি পিত্তথলির উত্তম অপারেশন পদ্ধতি।

অপারেশনের প্রয়োজন কতটা

অন্য কারণে পরীক্ষায় পাথর ধরা পড়লে, পিত্তথলির পাথর খুব বড় হলে, স্বল্প বয়সী ডায়াবেটিস রোগী হলে, অনেকগুলো ছোট পাথর থাকলে অপারেশন করাই উত্তম। অন্যথায় যেকোনো জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন—জন্ডিস হওয়া, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ অথবা পিত্তথলির ক্যান্সার।

অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীকে অপারেশন করা যায় কি?

অপারেশনে সাবধানতা অবলম্বন করে বিভিন্ন রোগের মাত্রাকে সহনশীল পর্যায়ে এনে অপারেশন করলে কোনো সমস্যা হয় না।

রোগের লক্ষণ

পেটের ডানদিকের উপরিভাগে ব্যথা, পিঠের দিকে ডান পাশে ব্যথা। সময়ে সময়ে ব্যথা ডান কাঁধে উপলব্ধি করা, পেট ফাঁপা, চর্বি জাতীয় খাবারে অস্বস্তি অনুভব হওয়া, জন্ডিস, জ্বর, বমি ভাব, বমি হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় পিত্ত ক্যান্সার শুধু জন্ডিস ও উল্লেখ্য লক্ষণগুলো মৃদু আকারেও দেখা যায়। মনে রাখতে হবে, পিত্তথলির ক্যান্সার যখন ধরা পড়ে, তখন অনেকাংশেই চিকিৎসার পরিধিকে ছাড়িয়ে যায় এবং কোনোভাবেই ছয় মাসের অধিক রোগী বেঁচে থাকে না। তাই পিত্তথলির সমস্যায় সাবধানতার সঙ্গে সুচিন্তিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপি করতে অসুবিধা হলে পেট কেটেই অপারেশন করতে হয়। অভিজ্ঞতার অভাব থাকলে পিত্তনালির ইনজুরিসহ নানাবিধ জটিলতাসহ তখন জীবন সংকটাপন্নও হয়ে উঠতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা নিন।

লেখক: জেনারেল, ল্যাপারোস্কপিক, কলোরেক্টাল ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সার্জন, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫