এখনো বিধ্বস্ত পড়ে আছে বাড়িঘর

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বালিয়ারা। সেখানে বাস করেন স্বামীহারা পারভীন বেগম। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দুটি মাটির ঘরে কোনোমতে চলে যাচ্ছিল তাদের জীবন। এর মধ্যে গত ২৩ আগস্ট রাতে হঠাৎ করেই ঘরে পানি উঠে যায়। বেরিয়ে যেতে হয় এক কাপড়ে। আশ্রয় নিয়েছিলেন অন্যের বাড়িতে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়ি ফিরে দেখেন বসতঘরটি ধসে পড়ে আছে। টিনের চালগুলো ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। 

শুধু পারভীন বেগমের মতো বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় কয়েক লাখ পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে। এসব জেলায় এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬০টি ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় অনেকে টিনের ছাউনি কিংবা ঘরের আশপাশে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। বাড়িঘরের পাশাপাশি গ্রামীণ হাটবাজারের দোকানপাটের অবস্থাও নাজুক। 

পারভীন বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার আগে আমাদের জীবিকার জন্য কিছু রেখে যাননি। আমার ছেলেও ছোট। গ্রামে চেয়েচুয়ে চাল ও কিছু টাকা পাই, তা দিয়ে মা-ছেলের সংসার চলে। থাকতাম দুটি মাটির ঘরে। ২৩ আগস্ট রাতে ঘরে পানি উঠে যায়। পরে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে এসে দেখি আমার ঘর নাই। এখন অন্যের বাড়ি থাকছি। ছেলেও থাকে আরেকজনের বাড়িতে। স্থানীয় মেম্বারের কাছে গিয়েছিলাম, তিনি বললেন–সরকারি ঘর যদি বরাদ্দ হয়, তাহলে আমার নাম দেবেন। তবে তা কবে পাওয়া যাবে নিশ্চিত নয়।’

ফেনীতে বন্যায় ৬৪ হাজার ৪১৫টি বসতঘর আংশিক ও সম্পূর্ণ ধসে গেছে। জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার জানান, প্রাথমিকভাবে একটি জরিপ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন বরাদ্দসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার কথা ভাবছে সরকার।

নোয়াখালীতে বন্যায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৫টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় প্রাথমিকভাবে জেলার আটটি উপজেলায় ৮ হাজার ৪৫৩টি বসতঘর সম্পূর্ণ এবং ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৬৫টি। 

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বন্যাকবলিত বেশিরভাগ জেলার এমন অবস্থা। বিশেষত বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনা জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতি প্রাথমিক হিসাব নিরূপণ করেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কত সময় লাগবে তা এখনো জানেন না ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫