বন্যার ক্ষত

বিভিন্ন রোগে এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দুই সপ্তাহের বন্যার কারণে পানিবাহিত সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আক্রান্ত হয়েছে এক লাখের বেশি মানুষ। ফলে সক্ষমতার বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোয়। কোথাও কোথাও জায়গার সংকুলন না হওয়ায় মেঝেতে কিংবা বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্যানুযায়ী, বন্যা চালাকালে এবং বন্যাপরবর্তী দেশে লাখ হাজার ৬২১ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বা বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাসম্পর্কিত রোগ দুর্ঘটনার মধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসনতন্ত্রের সংক্রমণ, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, বজ্রপাত, পানিতে ডোবা এবং সাপে কাটার মতো বিষয়গুলোয় অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান।

তথ্যানুযায়ী, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আরটিআইতে আক্রান্ত হয়েছেন পৌনে তিন হাজার। সাপের দংশনের শিকার হয়েছে ৭৯৩ জন, যাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে ৭২ এবং বজ্রাঘাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে ২৩ হাজারের বেশি চোখের প্রদাহে ভুগেছে প্রায় দেড় হাজার মানুষ। অন্যান্যভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ৬২ হাজারের বেশি। আর মারা গেছে ২১ জন।

সাম্প্রতিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলা। অঞ্চলের ৭১ হাজার ৭৭২ ব্যক্তি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যা মোট আক্রান্তের ৬৫ শতাংশেরও বেশি। আর জেলা হিসেবে কুমিল্লায় ৫১ হাজার, ফেনীতে ১০ হাজার, নোয়াখালী লক্ষ্মীপুরে সাড়ে নয় হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে ৫৫৮ রোগী ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে ডায়রিয়ার জন্য নির্ধারিত ১৮ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ১২০ রোগী। এছাড়াও শিশু ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যার বিপরীতে শতাধিক শিশু চিকিৎসাধীন। বন্যার পর শিশু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগী রাখার স্থানসংকুলান না হওয়ায় এরই মধ্যে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সামনে গাছের নিচে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) একটি তাঁবু প্রতিস্থাপন করেছে। সেখানে ডারিয়া আক্রান্ত ২০ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া যাবে।

এদিকে লক্ষ্মীপুরের হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ বেশি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জ্বর, ডায়রিয়া, চর্মসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। লক্ষ্মীপুর ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে শতাধিক রোগী ভর্তি আছে। অধিকাংশই শিশু বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. অরূপ পাল।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অং সুই প্রূ মারমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন ডায়রিয়া, চর্মরোগ, সাপে কাটা রোগী বেশি। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ বন্যার সময় ঠিকমতো গোসল করতে পারেনি, পানি ভালো না। ফলে তাদের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে বহু মানুষ গাদাগাদি করে থাকার কারণে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চিকিৎসকের সংকট যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে পদায়নের মাধ্যমে। ওষুধেরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এর পরও সংকট দেখা দিলে যাতে মোকাবেলা করা যায় তার জন্য আগেই চাহিদা দিয়ে রেখেছি।     


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫