আগামী দশকে বিশ্বব্যাপী তরুণদের কর্মসংস্থান

চাকরি খুঁজবে ১২০ কোটি পাবে ৪২ কোটি

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয় এখন অন্যতম বড় সংকট হিসেবে বিবেচনা করা হয় বেকারত্বকে। এসব বাজারে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল কর্মসংস্থান আগামী দশকেও বিরাজমান থাকবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা। এ সময় চাকরিপ্রত্যাশী ও কর্মসংস্থানের ব্যবধান থাকবে ব্যাপক। পূর্বাভাস অনুসারে, সামনের দশকে ১২০ কোটি তরুণ-তরুণী চাকরি খুঁজবে। এর বিপরীতে কর্মসংস্থান থাকবে ৪২ কোটি। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ চাকরিপ্রত্যাশী কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে যেতে পারে। খবর রয়টার্স ও আনাদোলু।

পেরু থেকে টুভালু—এক পরিকল্পনার আওতায় সম্প্রতি ২৭টি দেশের শেষটি পরিদর্শন করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘এ প্রজন্ম এমন একটি চাকরির বাজারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যেখানে তাদের মধ্যে মাত্র ৪২ কোটির জন্য কর্মসংস্থান থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায় ৮০ কোটি তরুণের জন্য চাকরির সুযোগ থাকবে না।’

এ পরিস্থিতি উত্তরণে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন অজয় বাঙ্গা। সিডনির গবেষণা সংস্থা লোই ইনস্টিটিউটে বক্তৃতাকালে অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘এজন্যই আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা দরকার—সরকার, দাতা সংস্থা ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

চাকরির বাজারে সম্ভাব্য ব্যবধান কমাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি জানান, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট থারমান শানমুগারত্মম ও চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেলের নেতৃত্বে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি একটি উদ্যোগ শুরু করেছে।

আগামী অক্টোবের অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠক। সেখানে প্রথমবারের মতো উপস্থিত থাকবে এক দল ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজ ও শিক্ষাবিদ; যারা জ্বালানি, অবকাঠামো, কৃষি, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে আগ্রহী তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির কৌশল প্রণয়ন করবেন।

কর্মসংস্থান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আগামীতে বৈশ্বিক রূপান্তরে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। অজয় বাঙ্গা বলেন, বৈশ্বিক ঋণদাতাদের আরো দ্রুত কাজ করতে হবে। বর্তমানে বৃহত্তর মেরুকরণের সম্মুখীন বিশ্ব, যার মাধ্যমে প্রভাবিত হচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। তাই ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।

তিনি জানান, এক বছর আগে বিশ্বব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পর এ সফর শুরু করেছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি যেসব অঞ্চলে কাজ করে তাদের মতামত শোনা। ৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের টুভালু সফরের মাধ্যমে সে পরিকল্পনার একটি পর্যায় শেষ হয়েছে।

এ সময় অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘সারা বিশ্বের মানুষের আকাঙ্ক্ষা সর্বজনীন হওয়া সত্ত্বেও আমরা বৃহত্তর মেরুকরণ ও চরমপন্থার মধ্যে বাস করছি।’

তিনি জানান, পরিদর্শন করা দেশগুলোয় আরো সাহায্য প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় তহবিল জোগানের বিষয়টি আরো দ্রুত ও সহজ হতে হবে। এ ঋণপ্রবাহ যেন কার্যকর হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

গত সপ্তাহে ফিজিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। এ বিষয়ে অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়ার জন্য যে ধরনের শর্ত পূরণ করতে হয় ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো অনেক সময় তা পারে না। এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’

ফিজিতে স্বাস্থ্য ক্লিনিক পরিদর্শন করেছিলেন অজয় বাঙ্গা। সেখানে তিনি হাসপাতালে গুরুতর কর্মী ঘাটতি ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে বিস্তারিত অবহিত হন। বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থান সংকট ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি নিয়ে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। এ সফর সে বিষয়টিকে আলাদাভাবে তুলে ধরেছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে ব্যাংকটির।

জলবায়ু পরিবর্তন, বৈষম্য ও নাজুক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে বিশ্বব্যাংক দেখছে বলেও জানান তিনি। অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চ্যালেঞ্জের ক্ষুদ্র চিত্র।’

লোই ইনস্টিটিউটের মতে, মহাসাগরে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ। এটি সবচেয়ে বেশি সাহায্যনির্ভর অঞ্চলও।

প্রেসিডেন্টের পদে বসে বিশ্বব্যাংকের সংস্কারের উদ্যোগ নেন অজয় বাঙ্গা। এ বিষয়ে তিনি জানান, সংস্কার পরিকল্পনাগুলো এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। একটি করপোরেট স্কোরকার্ডের বরাত দিয়ে জানান, ব্যাংকের লক্ষ্য ১৫০ থেকে ২২-এ নেমে এসেছে। এছাড়া প্রকল্প অনুমোদনের সময় গড়ে তিন মাস কমেছে। নতুন নতুন ক্ষেত্র লক্ষ্য করে ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। এ হিসেবে আগামী ১০ বছরে বিশ্বব্যাংক আরো ১২ হাজার কোটি ডলার ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা করেছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫