আশুলিয়া ও গাজীপুরে পোশাক কারখানা বন্ধ

স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দরকার

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪

গত মাসের মাঝামাঝি থেকেই দেশের পোশাক শিল্প-কারখানায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। পোশাক শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভের জেরে শত শত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আলোচনার ভিত্তিতে তা সমাধানও করা হয়েছে। কিন্তু এবার পোশাক খাতের শ্রমিকরা শুধু নারী নয়, সমানসংখ্যক পুরুষ কর্মী নিয়োগ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান এবং আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়াসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ আন্দোলন শিল্পাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সরকার, শ্রমিক ও মালিক পক্ষ দফায় দফায় আলোচনা করেও এ খাতে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারছে না। ফলে নিরাপত্তার অভাবে বাধ্য হয়ে মালিক পক্ষ সাধারণ ছুটিসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করছে। এ পরিস্থিতি দেশের পোশাক খাতের জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশে পোশাক খাতের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে দেশে এ মুহূর্তে একটি নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ-প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের কাজ চলছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের এ সহিংস আন্দোলন অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এখন এ খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ অস্থিতিশীলতার পেছনে কোনো গোষ্ঠী বা তৃতীয় পক্ষের কোনো ইন্ধন আছে কিনা তা খুঁজে বের করা দরকার। মোদ্দা কথা, এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেননা বারবার কারখানা বন্ধ ঘোষণা দেশের রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, জিরানী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন ও চট্টগ্রামে মোট পোশাক কারখানা সংখ্যা ২ হাজার ১৪৪। এর মধ্যে খোলা কারখানা ২ হাজার ৩০টি। সাময়িক বন্ধ ও ছুটি থাকা কারখানা ১১৪টি। এসব কারখানার মধ্যে আগস্টের বেতন পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৩০৯টি। বেতন পরিশোধ করেনি ৮৩৫টি। গত বুধবার থেকে আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আশুলিয়া এলাকার ৫৮টি ও গাজীপুরের ১২টি কারখানা। 

শ্রমিক নেতারা বলছেন, ক্ষমতার পালাবদলে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, ঝুট ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। কারখানাগুলোয় নেতৃত্বের পালাবদল ও শ্রমিক সংগঠনের কমিটিগুলোয় নিজেদের কর্তৃত্ব নিতে পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে শিল্পকে অস্থির করার পাঁয়তারা চলছে। চলমান আন্দোলনে সাধারণ শ্রমিকের অংশগ্রহণ খুবই কম। অনেককে ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হতে বাধ্য করা হচ্ছে। আন্দোলন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী শ্রমিকদের বেশির ভাগই বহিরাগত। 

দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প খাত। এ খাতের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোয় প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশকে ধরা হয়। এ সাফল্যের পেছনে, তথা আজকের এ বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে পোশাক শিল্প। এ খাত শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অন্তত ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এ খাত। নারীর ক্ষমতায়নেও ভূমিকা রাখছে খাতটি। 

দেশে পোশাক খাত বিকশিত না হলে বেকার বহুগুণ বেড়ে যেত। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়েও এ খাত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিকাশমান এ শিল্পকে ধ্বংস করে যারা দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়ার আত্মঘাতী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার। কেননা এ খাত ধ্বংস হয়ে গেলে দেশে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেলে কর্মসংস্থান বন্ধ হবে এবং বেকারত্ব বাড়বে। এ খাতের অস্থিরতা ও অরাজক পরিস্থিতি রফতানি আয়ে বিপর্যয় ডেকে আনবে, যার ফলে অর্থনীতি মারাত্মক বিপদের মুখোমুখি হবে। তাছাড়া এ খাতে সম্পৃক্ত অন্য খাতগুলোর আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যাবে। মোট কথা, যারা এ খাতকে অস্থিতিশীল করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি শিল্প পুলিশকে কার্যকর করতে হবে। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। মালিক পক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা। শ্রমিকদের শোষণ করে একচেটিয়া মুনাফা করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। পোশাক কারখানা চালু থাকার অর্থ অসংখ্য শ্রমিকের জীবনমানের ভিত শক্ত থাকা। এ নিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র, আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড দমনে কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫