অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে অর্থনীতি নিয়ে আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

অর্থনীতি বিষয়ে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ আলোচনায় থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও। আগামী শনি ও রোববার (১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় এ বৈঠক হওয়ার কথা। মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেজারি সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের বরাত দিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং অব্যাহত প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।’

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এটাই হবে উচ্চ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। এতে বাংলাদেশ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টাও অংশগ্রহণ করবেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএসএআইডি এবং বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

ব্রেন্ট নেইম্যান বলেন, ‘গভীর সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি কমিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে চায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের অব্যাহত সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরা হবে।’

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, টানা কয়েক বছর ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা বাংলাদেশ যখন আঞ্চলিক অর্থনীতিতে উদীয়মান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল, তখনই কভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশটি বেকায়দায় পড়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কাটাতে আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয় বাংলাদেশকে।

খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজস্ব ও মুদ্রানীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের সার্বিক বিষয়ও স্থান পাবে। মার্কিন কর্মকর্তারা বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন। 

খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে কলকারখানা পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো থেকে কিছু কাজ হাতছাড়া হয়ে গেছে বলেও পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। 

পত্রিকাটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শিল্প খাতের সংস্কারে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যার মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়টিও রয়েছে। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও আরো বেশি কাজ পাওয়ার জন্য শ্রম খাতের সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের অনেকের মনে স্বস্তি এনে দিলেও শক্তিশালী প্রতিবেশী এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এখন ভারতেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। দিল্লির অস্বস্তির কারণ হলো বাংলাদেশে মার্কিন প্রভাব বাড়তে থাকলে তা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের আধিপত্য ও স্বার্থের অনুকূলে যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর অবশ্য গত সোমবারও দাবি করেছে, বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে তাদের কোনো হাত নেই।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫