কেএসআরএম একটি ‘কম্পোজিট স্টিল ফ্যাক্টরি’

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইস্পাত খাতের বাজারে নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএম (কবির স্টিল রি-রোলিং মিল) ১৯৮৪ সাল থেকে ইস্পাতপণ্য রড উৎপাদন করে আসছে। কেএসআরএমের মূল উদ্যোক্তা মোহাম্মদ শাহজাহান। প্রতিষ্ঠানটির শুরুতে সেমি রি-রোলিং মিল দিয়ে ১ লাখ ৫০ টন উৎপাদন সক্ষমতা ছিল। ইউরোপের পমিনি প্রযুক্তিতে নিজেদের কারখানার রড উৎপাদনক্ষমতা পরে আট লাখ টনে উন্নীত করেছে। রডের মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনও ছয় লাখ থেকে আট লাখ টনে উন্নীত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কেএসআরএম কারখানা একটি ‘কম্পোজিট স্টিল ফ্যাক্টরি’। এ ধরনের কারখানায় সরাসরি প্রাথমিক কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) থেকে রড উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে গুণগত মান বজায় রেখে আন্তর্জাতিক মানের রড উৎপাদন করা হচ্ছে। ৩৬৯ মেগা ফিঙেলে ৫৫ লাখ সাইক্লিক লোড সহনশীল রড উৎপাদন করে কেএসআরএম। এছাড়া ইস্পাতের কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে পুরনো জাহাজ আমদানিতেও এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কবির গ্রুপের যাত্রা

শুরুটা ১৯৮৪ সালে ইস্পাত ব্যবসা দিয়ে। এরপর গড়ে তোলা হয় প্রয়াত বাবার নামানুসারে শিল্প গ্রুপ কবির গ্রুপ। স্থাপন করা হলো একের পর এক শিল্প-কারখানা। তবে ‘শেকড় থেকে শিখরে’ স্লোগানে কেএসআরএম নামেই দেশের প্রথম সারির বড় ইস্পাত প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ডটি সবচেয়ে পরিচিতি পায়। কেএসআরএম মূলত উন্নত কাঁচামালের ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে পণ্য উৎপাদন করে। বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা করে উৎপাদন করা হয় ভূমিকম্প সহনশীল রড। এ কারণে দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে কেএসআরএমের আলাদা ব্র্যান্ড ইমেজ। এছাড়া সিমেন্ট, অক্সিজেন, বিদ্যুৎ প্লান্ট, শিপ ব্রেকিং, শিপ বিল্ডিং, জেটি পরিচালনাসহ নানান ক্ষেত্রে ছাপ পড়েছে সফলতার। ব্যবসার পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কর্মসংস্থানের সুযোগ। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান কবির গ্রুপে। যার হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটি আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে তিনি হলেন বর্তমানে কবির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান। শাহজাহান ছাত্রাবস্থায় পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেছেন কঠিন সময় ও পরিস্থিতি সঙ্গী করে। প্রত্যন্ত ও অনগ্রসর গ্রামে ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জন্ম নিয়ে কৈশোরে থিতু হয়েছেন চট্টগ্রাম শহরে। ১৯৮৩ সালের ১৩ এপ্রিল বাবা মোহাম্মদ কবির আহমেদের মৃত্যুর পর হাল ধরেন পারিবারিক ব্যবসার। এমন সময় বাবার মৃত্যুতে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও দমে যাননি মোটেও। কারণ রক্তে তার সামনে যাওয়ার অদম্য স্পৃহা। তিনি বিশ্বাস করেন সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুশাসন মানা, কঠোর পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা, সময়জ্ঞান, সৎ ও সততা। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর তার দুই ছেলেও ধরেছেন ব্যবসার হাল। বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারাও পারিবারিক ব্যবসায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। বড় ছেলে সারওয়ার জাহান রোকন ও ছোট ছেলে শাহরিয়ার জাহান রাহাত গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারও আগে থেকে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহানের চার ভাই নবাব সিরাজ উদ দৌলা, কামাল উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন ও করিম উদ্দিন। আরেক ভাই জামাল উদ্দিন পেশায় চিকিৎসক। যাদের সম্মিলিত অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা শ্রমে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠান। তবে নেপথ্যের কারিগর শাহজাহান যিনি শক্ত হাতে হাল ধরে আজ এ পর্যায়ে এনেছেন প্রতিষ্ঠানটিকে। 

কবির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ইস্পাত উৎপাদনে গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য কোনো ধরনের আপস করা হয় না। আমাদের কারখানায় উৎপাদিত যেকোনো পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ নেই। সেবা নিশ্চিত করা হয় ভোক্তা পর্যায়েও। তাই ইস্পাতের ক্ষেত্রে কোটি কোটি মানুষের আস্থার প্রতীক কেএসআরএম। পণ্যের উৎপাদনেও কিছু পরিবর্তন ও নতুন পণ্য আনার পরিকল্পনা রয়েছে। আবার রাউন্ড বার উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে স্ট্রাকচারাল স্টিলের বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা।’

সামাজিক দায়বদ্ধতা 

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে মোহাম্মদ শাহজাহান জীবনযাপনে অভ্যস্ত । তাই দান করেন নীরবে। অসংখ্য মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন। পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন অসংখ্য মানুষের। নিজের অর্থে ডলু নদে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে রক্ষা করেছেন অনেকের বসতভিটা। রিকশা যানবাহন উপহার দিয়ে ব্যবস্থা করেছেন স্থায়ী উপার্জনের। এছাড়া মেয়ের বিয়ে, চিকিৎসার ব্যয় বহন করাসহ নানাভাবে সহায়তার হাত প্রসারিত রেখেছেন সবসময়।

কেএসআরএম হলো একটি ‘কম্পোজিট স্টিল ফ্যাক্টরি’ 

বাংলাদেশের প্রায় সব মেগা প্রকল্পে কেএসআরএমের রড সরবরাহ হয়ে আসছে।  আমাদের কারখানা আসলে একটি ‘কম্পোজিট স্টিল ফ্যাক্টরি’। এ ধরনের কারখানায় আমরা সরাসরি প্রাথমিক কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) থেকে রড উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে গুণগত মান বজায় রেখে বিশ্বমানের রড উৎপাদন করছি। কেএসআরএম এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের স্ট্যান্ডার্ডের রড বানাতে সক্ষম। দেশের মেগা প্রকল্পগুলো বিশ্বমানের প্রকল্প। বিদেশী বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করেই এসব প্রকল্পে কেএসআরএম রড ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ কেএসআরএম বিশ্বমানের রড উৎপাদন করছে।

নিজ প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলেছেন কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত 

পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের সচেতনতা বেড়েছে। ফলে গুণগত মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই ইস্পাত উৎপাদন করতে হচ্ছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভারসহ বড় সব প্রকল্পে সরবরাহ হয়েছে কেএসআরএম স্টিল। প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা কতটা ভালো যাচ্ছে সেটা সম্পর্কিত হলো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা কতটা সচল থাকছে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চাহিদাও বাড়ে। বিশ্বজুড়ে কাঁচামালের দাম কখনো বাড়ে আবার কখনো অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। যখন সুবিধাজনক দামে ক্রয় করা যায় তখন অভ্যন্তরীণ সংকটে তা অনেক সময় হয়ে ওঠে না।

তিনি বলেন, ‘দেশে এখন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ৯০ লাখ টনেরও বেশি। যদিও চাহিদা সেই পরিমাণে নেই। দেশে মানসম্মত ইস্পাতপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। এছাড়া গ্রাহকদের সচেতনতার কারণে মানহীন পণ্যের বাজার এমনিতে সংকুচিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়াসহ এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরেও শিল্প-কারখানা হচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরালো হলে আগামী দিনে ইস্পাতপণ্যের চাহিদাও বাড়াবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫