খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৬৪ কিলোমিটার। এর
মধ্যে খুলনা সড়ক ও জনপথের (সওজ)
অধীনে রয়েছে ৩৩ কিলোমিটার। ২০১৮
সালে সড়কটি পুনর্নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২০ সালের
জুনে। এ কাজে ব্যয়
হয় ১৬০ কোটি টাকা। তবে চার বছরেই মহাসড়কের খুলনা-আঠারোমাইল অংশে ছোট-বড় গর্ত তৈরি
হয়েছে। বিটুমিন সরে গিয়ে উঁচু-নিচু হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কের কাজটি নিম্নমানের ছিল। এ কারণে কিছুদিন যেতে না যেতেই এমন অবস্থা হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে যাওয়া শুরু হয়। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় তিন বছর ধরে কয়েক দফায় সড়কটি মেরামত করেছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামানতের টাকা ফেরত পাওয়ার পর সওজ বিভাগ নিজস্ব অর্থায়নে মেরামত অব্যাহত রেখেছে।
মোটরসাইকেলে নিয়মিত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে চলাচল করেন খুলনা নগরের বয়রা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কে এখন অনেক চাপ। পদ্মা সেতু চালুর পর এখানে যানবাহন চলাচল বেড়েছে। সড়কটি নির্মাণকালে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোটরসাইকেলের গতি একটু বেশি হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। রাতে দুর্ঘটনার শঙ্কা আরো বেড়ে যায়।’
অটোরিকশাচালক মামুন হাওলাদার জানান, সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিনে উঠে-উঁচু নিচু হয়ে। এ কারণে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। সন্ধ্যার পর গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার ভয় কাজ করে।
খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা প্রাইভেট কারচালক তানভীর হাসান বলেন, ‘সড়কটি উঁচু-নিচু হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নতুন চালকদের জন্য এ সড়কে চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।’
চুকনগর বাজার এলাকার বাসিন্দা বাসচালক হাফিজুর রহমান জানান, কিছু কিছু এলাকায় সড়কটির এমন অবস্থা হয়েছে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখা যায় না। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরজমিনে জিরো পয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, জিরো পয়েন্ট, কৈয়া বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, চুকনগর বাজারের আগে ও পরে সড়কের অবস্থা বেশি নাজুক। চলতি বর্ষায় মহাসড়কের নিচখামার লেভেল ক্রসিংয়ের দুই পাশে এক কিলোমিটার, হোগলাডাঙ্গা পাওয়ার গ্রিডের সামনে এক কিলোমিটার, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে আধা কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলা ও চুকনগর বাজারের আশপাশে এক কিলোমিটার সড়কে বিটুমিন উঠে উঁচু-নিচু ও গর্ত তৈরি হয়েছে।
তবে সওজ বিভাগ বলছে, অতিমাত্রায় যানবাহনের চাপ ও ওভারলোডিংয়ের কারণেই এ অবস্থা হয়েছে। সম্প্রতি সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে। এখন নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সওজ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত মণ্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। এছাড়া এ সড়ক দিয়ে বেনাপোল ও ভোমরা বন্দরে পণ্য নিয়ে যাওয়া ভারী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সড়কটির সর্বোচ্চ ওজন নেয়ার সক্ষমতা সাড়ে ২২ টন। সেখানে এ দুই বন্দর থেকে ৫০ টনের যানবাহন চলছে নিয়মিত। চাপ নিতে না পারায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যস্ততম সড়কটি।’
এদিকে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত কৈয়া-রায়েরমহল সড়কের কৈয়া মোস্তর মোড় পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটারজুড়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটি এমন অবস্থা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সড়টিকর দুই পাশঘেঁষে অর্ধশতাধিক স্থানে প্লট রয়েছে। জমি ভরাট করতে বালিভর্তি ডাম্প ট্রাক চলাচল করে।
গুটুদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তুহিনুল ইসলাম তুহিন বলেন, ‘সড়কটির দুই পাশে থাকা জমিতে কোনো নালা নেই। সব নালা ভরাট করেছেন ভূমি ব্যবসায়ীরা। এ কারণে বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে থাকে। তাছাড়া ফসলি জমিতে বালি ভরাট বন্ধ হচ্ছে না। বালিবোঝাই ভারী ট্রাক সড়কটির ক্ষতি করছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। এতে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে ডুমুরিয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘সড়কে বালিবোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধ এবং অবৈধ প্লট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিষয়টি এলজিইডি কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কটি নষ্ট হয়েছে। জনস্বার্থে দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা হবে।’