করোনারি হার্ট ডিজিজ

বংশগত কারণেই ঝুঁকি বেশি বাংলাদেশীদের

প্রকাশ: আগস্ট ২৬, ২০২৪

ডা. চয়ন সিংহ

বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে করোনারি হার্ট ডিজিজ একটি আতঙ্কের নাম। বিশ্ব হৃৎপিণ্ড সংস্থার মতে, বছরে দুই কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এ মরণব্যাধিতে। উদ্বেগের বিষয় এদের প্রতি পাঁচজনে চারজনই কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোয়। শুধু জেনেটিক বা বংশগত কারণেই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে রোগটি ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় তিন গুণ বেশি, এর মধ্যে তরুণরাই বেশি। আশার কথা হচ্ছে, এ রোগের পেছনে যেসব কারণ রয়েছে তার বেশির ভাগই কিন্তু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, অলসতা, মদ্যপান, ওজনের আধিক্য, পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও নিদ্রাহীনতা।

এ রোগের প্রধান লক্ষণ একটু পরিশ্রম করলে বুকের মাঝখানে ব্যথা অনুভূত হওয়া বা অতিরিক্ত দুর্বল লাগা, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা।

লক্ষণ

বুকে ব্যথা: যেটা হয় বুকের মাঝখানে। মনে হয় কেউ পাথর চেপে রেখেছে যেটা পরিশ্রম বা দ্রুত হাঁটাচলা করলে বেড়ে যায় এবং গলা, চোয়াল, বাম হাতে, পেটের উপরিভাগে বা পেছনে ছড়িয়ে যায়।

শ্বাসকষ্ট: এটিও হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, বয়স্ক রোগী ও নারীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়। হার্ট দুর্বল হলে অনেক ক্ষেত্রে বুকে ব্যথার থেকে শ্বাসকষ্টটাই বেশি থাকে।

অতিরিক্ত ক্লান্তি: দুর্বল বা ক্লান্তি অনুভব করা হৃদরোগের একটি বড় উপসর্গ। বিশেষ করে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা দীর্ঘদিন ধরে হার্ট দুর্বল থাকলে।

বুক ধড়ফড়: পরিশ্রম করলে আমাদের সবারই একটু-আধটু বুক ধড়ফড় করে। কিন্তু হার্টের রোগীদের বুক ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে হার্টবিট বেড়ে বা অনিয়মিত কিংবা অনিয়ন্ত্রিত হলে বুক ধড়ফড় করতে পারে। তবে স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা, রক্তশূন্যতা বা থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য অথবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যও হতে পারে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

শরীরে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া: হৃৎপিণ্ডের প্রধান কাজ একটি নির্দিষ্ট ছন্দে সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করা। কিন্তু হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা গড়বড় হলে আমাদের শরীর ফুলে যেতে পারে। 

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: মানুষের হার্টে একটি সুন্দর ইলেকট্রিক সার্কিট থাকে, যার নাম ‘কার্ডিয়াক কনডাকশন সিস্টেম’। করোনারি হার্ট ডিজিজে সিস্টেমটির কার্যক্ষমতা গড়বড় হয়ে রোগীদের প্রথমে মাথা ঝিমঝিম অনুভূত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে একটু পরিশ্রম করলে বারবার অজ্ঞান হয়ে যায়। 

রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা: যেহেতু অনেক সময় রোগটি লুকিয়ে থাকে, তাই হার্ট অ্যাটাকের আগেই আমরা রোগটি নির্ণয় করতে পারি। রোগীদের আগামী ১০ বছরে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কেমন হতে পারে— সেটাও বুঝতে। নিম্নোক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমরা ‘সিএডি’ নির্ণয় করতে পারি।

• ইসিজি • ইকোকার্ডিওগ্রাম, হল্টার মনিটরিং • স্ট্রেস টেস্ট: স্ট্রেস ইকো, স্ট্রেস ইটিটি, ডিএসই • করোনারি এনজিওগ্রাম: সিটি বা প্রচলিত এনজিওগ্রাম • কার্ডিয়াক এমআরআই • রক্তের সুগার প্রোফাইল • রক্তের কোলেস্টেরল • কিডনি টেস্ট • থাইরয়েড প্রোফাইল 

সাতটি টিপস

প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, বিশেষ করে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, সালাদ, টকদই। লাল মাংস ও তেলজাতীয় খাবার বর্জন।

•  নিয়মিত শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করা— প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট বা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট।

শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা—বিশেষ করে কোমরের মাপ (১২০ সেমি ছেলেদের ও ৮৮ সেমি মেয়েদের)।

বিভিন্ন নেশা থেকে দূরে থাকা এমনকি ডিজিটাল অ্যাডিকশন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ভালো ঘুমের অভ্যাস (৬-৮ ঘণ্টা)।

মানসিক দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূরে সরিয়ে নিয়মিত ধ্যান এবং নিজের পছন্দের কাজগুলো বেশি বেশি করে করা।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে সেগুলো সুনিয়ন্ত্রিত এবং নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।

তাই আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং সবাইকে সচেতন করার প্রয়াসে উপর্যুক্ত তথ্যগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিই।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫