ঝিনাইদহ ২৫ শয্যা শিশু হাসপাতাল

ল্যাব ও জনবল সংকটে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

প্রকাশ: আগস্ট ২৩, ২০২৪

ফয়সাল আহমেদ, ঝিনাইদহ

দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০২১ সালের শুরুতে চালু হয় ঝিনাইদহ ২৫ শয্যার সরকারি শিশু হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। ৯ জানুয়ারি উদ্বোধনের দিন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, হাসপাতালে এখন থেকে বহির্বিভাগে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে এবং পর্যায়ক্রমে অন্তর্বিভাগও চালু করা হবে। তবে উদ্বোধনের পর থেকেই বিভিন্ন সংকটে ভুগছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতালে ল্যাব নেই। ওষুধসহ জনবল সংকটও রয়েছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না শিশু রোগী।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫ শয্যার ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। হাসপাতালের জন্য ৮৮ লাখ ১ হাজার ৯০৬ টাকায় তিন একর জমি ক্রয় করা হয়। এছাড়া হাসপাতাল ও স্টাফদের বাসভবন নির্মাণে খরচ হয় ৫ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮৭ টাকা। তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন  নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইউনিট (সিএমএমইউ) হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু করে। শেষ হয় ২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল। ওই বছরের ৩০ আগস্ট হাসপাতালটি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছ থেকে স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। একই বছরের ১০ নভেম্বর প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়। এর পরই থেমে যায় কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নার্সিং শাখা থেকে স্থায়ী রাজস্ব খাতে ৭ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ সৃষ্টি করে হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আরো ১১ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স হাসপাতালটির জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।

নির্মাণ শেষ হলেও বিভিন্ন কারণে বছরের পর বছর বন্ধ ছিল হাসপাতালটির কার্যক্রম। ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি সীমিত পরিসরে চালু করা হয় হাসপাতালটি। সে সময় তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, হাসপাতালে এখন থেকে বহির্বিভাগে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্তর্বিভাগও চালু করা হবে। প্রতিদিন একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ও দুজন মেডিকেল অফিসার শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেবেন।

তবে রোগী ও স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন পর চালু হলেও বিভিন্ন ধরনের সংকট রয়েছে হাসপাতালটিতে। জনবল সংকটের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ সংকটও রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাব নেই এখানে। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরও বাড়তি টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি খরচ হচ্ছে বাড়তি টাকা। দ্রুত হাসপাতালটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাব চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক শিশুর বাবা পলাশ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমার ছেলের হঠাৎ সর্দি, কাশি ও জ্বর দেখা দিয়েছে। ছেলেকে শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। তবে এখানে এসে দেখি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাব নেই। বাড়তি টাকা খরচ করে প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করাতে হয়েছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি খরচ হয়েছে বাড়তি টাকা। যদি হাসপাতালে ল্যাব থাকত তাহলে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি বাড়তি খরচও হতো না।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, ২৫ শয্যার শিশু হাসপাতালে বর্তমানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা ২৫০-৩০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া আন্তঃবিভাগে ৬০-৭০টি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ ২৫ শয্যা শিশু হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. আলী হাসান ফরিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ কম থাকায় স্থানীয় সহযোগিতায় চলছিল অন্যান্য কাজ। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা নিয়েও চিন্তিত আমরা।’

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ‘হাসপাতালে ল্যাব চালুসহ সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি। দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫