ওপেক প্লাস আগামী অক্টোবর থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। সম্প্রতি জয়েন্ট মিনিস্টারিয়াল মনিটরিং কমিটির (জেএমএমসি) এক বৈঠকে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠনটি এ সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদায় কিছুটা মন্থরগতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে উত্তোলন বাড়ালে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে পণ্যটির বাজার। বিভিন্ন ডাটা বিশ্লেষণ ও শিল্পসংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য থেকে এমন অনুমান করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এ দুই দেশে পণ্যটির চাহিদা নিম্নমুখী ছিল। এমনকি মার্কিন অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী স্টক ও বন্ড বিক্রিও বন্ধ ছিল। অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে জ্বালানি তেলের চাহিদা আরো কমে যাবে। এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলেন, ‘চাহিদার নিম্নমুখী ধারা থেকে বোঝা যায় ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলোর জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা বিলম্বিত করতে হবে। না হয় বিশ্বব্যাপী সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমে লোকসান গুনতে হতে পারে দেশগুলোকে।
ব্ল্যাক গোল্ড ইনভেস্টরদের সিইও ও ওপেক পর্যবেক্ষক গ্যারি রস বলেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকির মধ্যে অক্টোবরে ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলোয় উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা কম।’
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিষয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে পণ্য বিশ্লেষক নীল অ্যাটকিনসন বলেন, ‘বিশ্বে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বর্তমানে ঝুঁকির মুখে। চাহিদা কমে গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’
চীনে বুধবার প্রকাশিত সরকারি তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ ছিল দৈনিক ১ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কম। দেশটিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় এলএনজির ব্যবহার বৃদ্ধি, ডিজেলের ব্যবহার হ্রাসের কারণে চাহিদা কমছে। এছাড়া আবাসন খাতে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে অর্থনৈতিক মন্দাও দেখা দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে চলতি বছরের শুরু থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যবহার দৈনিক ২ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে। ব্যবহার পৌঁছেছে জুলাই পর্যন্ত বছরে দৈনিক ২ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে। এর আগে মার্কিন সরকার চলতি বছর দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যবহার দৈনিক ২ কোটি ৫ লাখ ব্যারেল হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। ব্যবহারের এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে দেশটিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ত্বরান্বিত করতে হবে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছর এপ্রিলে প্রতি ব্যারেল সর্বোচ্চ ৯২ ডলারে পৌঁছেছিল। কিন্তু চাহিদা কমায় পরে তা ৮১ ডলারের নিচে নেমে আসে। তবে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়ছে। গতকালও ঊর্ধ্বমুখী ছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম গতকাল আগের দিনের তুলনায় ১ সেন্ট বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৯ ডলার ১৭ সেন্টে। অন্যদিকে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের তুলনায় ৮ সেন্ট বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭৬ ডলার ২৭ সেন্টে। সপ্তাহ্ব্যাপী পণ্যটির দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ।