জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার

নিহতদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করুন

প্রকাশ: জুলাই ২৬, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে চলা সংঘর্ষে নিহত, আহত ও আটকদের বিস্তারিত তথ্য জরুরিভাবে প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব অভিযান যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক রীতিনীতি ও মানদণ্ড মেনে হয়, তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। 

ভলকার তুর্ক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে গত এক সপ্তাহজুড়ে চলা ঘটনার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। আমাদের কাছে থাকা সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৭০ জন নিহত ও এক হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। আরো অনেকেই চিকিৎসা পাননি। বহু মানুষ সরকারের নীতিবিরোধী শিক্ষার্থী ও তরুণদের এ আন্দোলনের সময় নিখোঁজ হয়েছেন। কমপক্ষে দুজন সাংবাদিক নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীসহ ১০০ জনের বেশি আটক হয়েছেন। বহু মানুষ সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন, কিন্তু তাদের রক্ষার জন্য কোনো ধরনের চেষ্টা করা হয়নি। এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি বিক্ষোভে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেয়া হবে না—এমন নিশ্চয়তাও দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষার জন্য দেশের নিরাপত্তা খাতের দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপক সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, ‘সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেসব কারণে পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে ধাবিত হয়েছিল, সেসব অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সংলাপের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেরি না করে সরকারকে পূর্ণ ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধার করতে হবে, যাতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসহ সব মানুষ অবাধে ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে যোগাযোগ করতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করছি, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে। এর ফলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার জায়গা ফের উন্মুক্ত হতে পারে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অর্থবহ এবং যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের দিকে পরিচালিত করবে। সহিংসতায় উসকানি দেয় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু হয়—এ ধরনের সব কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে দেশের রাজনৈতিক কলাকুশলীদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

অন্যদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটছে এবং আমরা যা দেখেছি তা হচ্ছে—গণগ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড। এসব ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’ 

মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে পারার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি অধিকার, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে।’ 

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে, বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ দেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে তরুণরা বিশ্বের অবস্থা, নিজেদের ভবিষ্যৎ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের সংবেদনশীলতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো বিক্ষোভ যেখানেই হোক না কেন, গ্রেফতারের ভয় ছাড়াই, আহত বা আরো খারাপ পরিস্থিতির ভয় ছাড়াই মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার অনুমতি দেয়া।’



সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫