বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন হামলা পুলিশের গুলি

প্রকাশ: জুলাই ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি কমপ্লিট শাটডাউন পালনের জন্য গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরা, মিরপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডি এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক জমায়েত হয়। এদিকে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয় পুলিশের। আক্রান্ত হয় রাজধানীর বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। 

জানা যায়, রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় গতকাল সকাল ৯টার দিকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেসরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেরুল-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তাদের সঙ্গে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। 

আগে থেকেই এ সড়কে তিন প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বলে। এতে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় দুই পক্ষ। পরে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষে যোগ দেন স্থানীয় যুবলীগে, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তারা ভেতরে চলে গেলেও গেটের ফাঁক দিয়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সড়কে অবস্থান করছিলাম। পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে। পরবর্তী সময়ে তারা  কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। আমরা সেখান থেকে চলে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে প্রচুর শিক্ষার্থী আহত হন। সাউন্ড গ্রেনেডের তীব্রতায় আমাদের কিছু শিক্ষার্থীর কানে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া রাবার বুলেটে প্রায় ৩৫ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

বাড্ডায় কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় কিছু পুলিশ সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকা পড়লে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করে র‍্যাব। সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।    

উত্তরার জসীম উদ্‌দীন, রাজলক্ষ্মী, আজমপুর ও জমজম টাওয়ার এলাকায় গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দান ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। তারা সেখানে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে বেলা ১১টার পর পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। 

এদিকে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি উদ্বেগ জানিয়েছে। গতকাল দেয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতির বিষয়ে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষত কোটাবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণের অকালে ঝরে যাওয়া দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। সেই সঙ্গে সহিংসতার ফাঁদে পা না দিয়ে কোটা সংস্কার প্রসঙ্গে আদালতের সুচিন্তিত রায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের ধৈর্যশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।’

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ ও স্নেহশীলতার কোনো ঘাটতি নেই। তাদের যেকোনো চাওয়া কিংবা সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবক শ্রেণী, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী সমাজ সব সময় তাদের পাশে থাকবে। সেক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী মহলের যেকোনো আত্মঘাতী প্ররোচনা থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার দায়িত্বটুকু শিক্ষার্থীদের সচেতনভাবে পালন করা জরুরি।’ 

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি আশা করে, সংঘাত-সহিংসতামুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার্থে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয় কিংবা ক্যাম্পাস বন্ধ রাখতে হয় এমন সব কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রাখবে। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করবে। চলমান অবস্থা দীর্ঘায়িত তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং জাতি হিসেবে বাঙালি পিছিয়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫