মেহেরপুরে অপরিকল্পিত বনায়নে কাটা পড়ছে সড়কের গাছ

প্রকাশ: জুলাই ০৮, ২০২৪

মাহাবুব আলম, মেহেরপুর

সড়ক প্রশস্তকরণসহ বিভিন্ন কারণে মেহেরপুরে কাটা পড়ছে গাছ। বন বিভাগের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে জেলার বিভিন্ন সড়কের প্রায় ১৪ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে কাটা হয়েছে প্রায় তিন হাজার গাছ। মেহেরপুর-মুজিবনগর ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে আরো দেড় হাজারের বেশি গাছ কাটার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। যার মধ্যে শতবর্ষী গাছও রয়েছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, অপরিকল্পিত বনায়নের কারণেই গাছগুলো কাটা পড়ছে। সড়ক থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপণ করা হলে এতগুলো গাছ কাটা পড়ত না। ধাপে ধাপে গাছ কাটা হলেও সে অনুপাতে রোপণ করা হচ্ছে না। এভাবে গাছ কাটা হলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

তবে মেহেরপুর বন কর্মকর্তা এসটি হামিম হায়দার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সড়কে নতুন করে গাছ রোপণের দায়িত্ব নিয়েছে সড়ক বিভাগ ও জেলা পরিষদ। আইনি জটিলতার কারণে নির্মীয়মাণ এসব সড়কে বন বিভাগ গাছ রোপণ করতে পারছে না।’

মেহেরপুর বন বিভাগের তথ্যমতে, বিভিন্ন সময় সড়ক উন্নয়ন, সামাজিক বনায়নের সুফলভোগীদের চাপসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৪ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। অবশ্য এসবের মধ্যে সামাজিক বনায়নের গাছও রয়েছে। এর মধ্যে গত তিন অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় এক হাজার গাছ কাটা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে কাটা হয়েছে দেড় হাজার। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে কাটা হয়েছে প্রায় তিন হাজার গাছ। যার মধ্যে শতবর্ষী গাছও রয়েছে। সম্প্রতি মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে দেড় হাজার গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য গাছ কাটতে জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গাছ কাটার অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসক ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে প্রাথমিক একটি সমীক্ষা তৈরি করে জমা দিয়েছে জেলা পরিষদ। অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে গাছ কাটার জন্য দেড় বছর আগে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সেখানে সড়কের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন নতুন করে গাছ কাটলে সড়কে আবার খানাখন্দ সৃষ্টি হবে। এছাড়া মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শুধু মেহেরপুর থেকে আমঝুপি পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করা হবে। কিন্তু গাছ কাটার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে মেহেরপুর থেকে দরবেশপুর পর্যন্ত সীমান্তজুড়ে।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মজিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সড়ক বিভাগের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে গাছের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পরে মূল্য নির্ধারণে সেটি পাঠানো হবে বন বিভাগে।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ‘যে গাছগুলো কাটার উপযোগী, সার্ভেয়ারের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শুধু সেই গাছগুলোই কাটা হবে। সড়কের কাজ শেষ হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বনায়ন করা হবে। ফলে প্রকৃতির ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উন্নয়ন প্রয়োজন আছে, তবে তা পরিবেশের ক্ষতি করে নয়। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে গরমের সময় চলাচল করা যায় না। কারণ সড়কের সব গাছ কাটা হয়েছে। অথচ বছর খানেক আগেও সড়কটি ছিল সবুজে ঘেরা। মুজিবনগর ও আমঝুপি সড়কের গাছ কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদি সত্যিই এসব গাছ কাটা হয়, তবে তা হবে আত্মঘাতী।

গাংনী উপজেলার রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হোক। যাতে পরিবেশের ওপর প্রভাব না পড়ে। বেশি বেশি বনায়ন হলে পরিবেশ আবারো আগের জায়গায় ফিরে আসবে। আগে থেকেই যদি সড়কের পাশে বনায়ন করা হতো, তাহলে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ত না।’

এ ব্যাপারে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অনেক গাছই সড়কের ওপর চলে এসেছে। গাছগুলোর কারণে সড়ক সংস্কার বা প্রশস্ত করা যাচ্ছে না। গাছগুলো কাটার জন্য জেলা পরিষদকে চিঠির মাধ্যমে তালিকাসহ জানানো হয়েছে। তাছাড়া সড়কের কাজ শেষ হলেই আমাদের গাছ লাগানো শুরু হবে। যেখানে গাছ কাটা হয়েছে, তার একটু দূরে পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো হবে। প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ানো, পাখির খাদ্য ও আবাসস্থল গড়ে তুলতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। সড়কে শুধু গাছ লাগিয়ে নয়, গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।’

পরিবেশবিদদের দাবি, একটি গাছ কাটার আগেই কতটা গাছ কোন জায়গায় লাগাতে হবে, আগে সেটি নিশ্চিত করা দরকার। তারপর গাছ কাটা উচিত।

পরিবেশবিদ এনামুল আজীম বলেন, ‘এভাবে উন্নয়ন ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধের নামে গাছ কাটায় এ অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে প্রভাব পড়ছে। বৃষ্টিপাত কমে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি। যেকোনো প্রকল্প নেয়ার আগে গাছ লাগানোর বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫