‘বাংলা ব্লকেডে’ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানীর একাংশ

প্রকাশ: জুলাই ০৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুরের পর থেকে আন্দোলনকারীরা রাজধানীর সাতটি সড়কে অবস্থান নেন। এর প্রভাবে যানজট সৃষ্টি হয় বেশির ভাগ সড়কে। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানীর একাংশ। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

সোয়া ৪ ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় আটকে রেখে প্রথম দিনের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শেষ করেন আন্দোলনকারীরা। আজ বেলা সাড়ে ৩টা থেকে একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। 

দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি হয়। পরিপত্রে বলা হয়, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো। পরে ২০২১ সালে এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। গত ৫ জুন ওই রিটের রায়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরদিন এ রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, গতকাল রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব ও নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। চানখাঁরপুল অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হল, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীরা। আগারগাঁও এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করেন শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের একাংশ। 

শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে বন্ধ হয়ে যায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে যানবাহন ওঠা-নামা। ঢাকায় প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, সিলেট-চিটাগং রোড, নারায়ণগঞ্জ, পোস্তগোলা, পাগলা, শনির আখড়া ও সাইনবোর্ডে যাওয়া-আসার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফ্লাইওভারের ওপর আটকা পড়ে শত শত গাড়ি। মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডিতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে অফিস ফেরত যাত্রীরা। 

ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) নবকুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকালের দিকে কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি ও নীলক্ষেতের আশপাশ এলাকায় পুরো সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।’ 

ডিএমপির কারওয়ান বাজার জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) স্নেহাশীষ কুমার দাস বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে কোনো গাড়ি কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগের দিকে যেতে পারেনি। ফলে বিজয় সরণি পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়।’ আজও একই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘‌আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে কর্মসূচি, সেটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষণা করা হলো। আমাদের যে ব্লকেড কর্মসূচি সেটি আজও বহাল থাকবে। আজ আমরা কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গেছি, কাল আমরা ফার্মগেট পৌঁছে যাব।’ তিনি আজ বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেন।

বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ১ ঘন্টা অবরোধ করে রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের উভয় লেনে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী এলাকা অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে আলেখার চর থেকে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কে যানজট দেখা দেয়। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের দুই পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের গড়িয়ার পাড় থেকে রূপাতলী পর্যন্ত তৈরি হয় তীব্র যানজট। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে অবস্থান নিলে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দুই দফা দাবি জানিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করতে হবে এবং অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করতে হবে। 

নেতাকর্মীদের আন্দোলনে যেতে নিরুৎসাহিত করেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ একটি রায় দিয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়াতেই এর সমাধান হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে জনভোগান্তি তৈরি করা কি সমীচীন? আমরা আশা করব সচেতন শিক্ষার্থীদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫